ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৪:৪৭:৪২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

পুরাণ : সেলিনি ও অ্যান্ডিমিয়নের অমর প্রেম

শান্তা মারিয়া

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৮ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

সেলিনি ও অ্যান্ডিমিয়নের অমর প্রেম

সেলিনি ও অ্যান্ডিমিয়নের অমর প্রেম

গ্রিক পুরাণের একটি উল্লেখযোগ্য প্রেমকাহিনি হল সেলিনি ও অ্যান্ডিমিয়নের গল্প। সেলিনি হলেন চন্দ্রদেবী। তিনি টাইটান হাইপেরিয়ান ও থিয়ার কন্যা। সূর্যদেবতা হেলিওস এবং ঊষা দেবী ইওসের বোন। প্রাচীন বর্ণনায় রয়েছে হাইপেরিয়ান ও থিয়া ছিলেন ভাইবোন। মতান্তরে সেলিনি ও হেলিওস হলেন টাইটান প্যালাসের কন্যা। রোমান পুরাণ অনুযায়ী তার নাম লুনা যা চাঁদের প্রতিশব্দ।

ভাই সূর্যদেবের মতো চন্দ্রদেবী তার রূপালি রথ চালিয়ে নিয়ে যান স্বর্গ ও মর্ত্যের উপর দিয়ে নিজস্ব কক্ষপথ ধরে। অনেক সময় সেলিনিকে এক করে ফেলা হয় বনদেবী আর্টেমিসের সঙ্গে। যেমন তার ভাই সূর্যদেবতা হেলিওসকে এক করে ফেলা হয় অ্যাপোলোর সঙ্গে।

কিন্তু সেলিনি আর্টেমিসের মতো চিরকুমারী নন। তার একাধিক প্রেমিকের নাম পাওয়া যায়। আবার সেলিনি ও আর্টেমিস দুজনকেই মায়াদেবী বা  অন্ধকারের ও জাদুবিদ্যার দেবী হেকাটির সঙ্গে কখনও কখনও এক করে ফেলা হয়। এই তিনজনই গ্রিকদের মধ্যে চন্দ্রদেবী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেলিনি  স্বতন্ত্র এক চন্দ্রদেবী। তিনি জোছনার আবছায়ায় অরণ্য প্রান্তরে ঘুরে বেড়ানো এক সুন্দরী তরুণী।

বিভিন্ন পুরাণে তার যে বর্ণনা রয়েছে তাতে দেখা যায় সেলিনি খুবই সুন্দরী। তবে তার মুখমণ্ডল কিছুটা ফ্যাকাসে ও লম্বাটে গড়নের। তার চুল কালো ও দীর্ঘ। তা রেশমের মতো কোমল ও উজ্জ্বল। তার রূপালি রঙের রথ। সেটি দুই ঘোড়ায় টানা বা দুটি ষাঁড়ে বাহিত। একটি বর্ণনায় রয়েছে তিনি পঙ্খীরাজ ঘোড়া বা ডানাযুক্ত ঘোড়ায় টানা রূপালি রথে চড়ে ভেসে যান সমুদ্রের উপর দিয়ে।

তার চুলের মধ্যে বাঁকা চাঁদ বা ক্রিসেন্ট। আবার অনেক সময় পূর্ণচন্দ্রকেও তার প্রতীক ধরা হয়। বলা হয় তার ভ্রূ যুগল দ্বিতীয়ার চাঁদের মতো বাঁকা। বাঁকা চাঁদ, মোরগ, ঘোমটা বা আচ্ছাদনযুক্ত পোশাক বা হুড, ষাঁড়, কুকুর ও মশাল চন্দ্রদেবীর প্রতীক। তার পোশাক পরিচ্ছদ রূপালি রঙের। হাতে একটি বর্ষা। তবে তা তিনি ব্যবহার করেন খুব কম। চাঁদের মতোই স্নিগ্ধ, কোমল ও রহস্যময়ী হলেন চন্দ্রদেবী।

তার প্রেমিকদের মধ্যে জিউস ও প্যানের নাম পাওয়া যায়। জিউসের সঙ্গে ক্ষণ প্রণয়ের ফলে প্যাডিয়া নামে তার এক কন্যার জন্ম হয়। দেবতা প্যান একবার সেলিনিকে তুষারশুভ্র উল প্রদান করে মোহাবিষ্ট করে তার সঙ্গে মিলিত হন। ভার্জিল অনুযায়ী প্যান নিজেকে শুভ্র মেষচর্মে আবৃত করে ধোঁকা দিয়েছিলেন চন্দ্রদেবীকে। নইলে সেলিনির মতো সুন্দরী দেবী কখনোই কদাকার প্যানের সঙ্গে মিলিত হতেন না। নিমিয়ার বিখ্যাত সিংহ সেলিনির সৃষ্ট বলেও কোনো কোনো পুরাণে রয়েছে। আবার নিমিয়ার পরীরা সেলিনির কন্যা বলেও পুরাণ রয়েছে।

তবে সেলিনির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেমিক হলেন অ্যান্ডিমিয়ন। তাদের প্রেমকাহিনি অমর হয়ে আছে পরবর্তীকালের শিল্পী ও কবিদের সৃষ্টিকর্মে।

অ্যান্ডিমিয়ন ছিলেন মর্ত্যমানব। তার পরিচয় নিয়ে মতভেদ আছে। কারও মতে তিনি ছিলেন একজন রাজা, আবার কেউ বলে তিনি ছিলেন শিকারী। তবে বেশিরভাগ পুরাণকারের মতে তিনি ছিলেন মেষ পালক। অ্যান্ডিমিয়ন ছিলেন অসাধারণ সুদর্শন যুবক। তিনি ল্যাটমাস পর্বতে মেষ চড়াতেন। এক সন্ধ্যায় তিনি মেষ চড়িয়ে ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের ঢালে শুয়ে ছিলেন বা বসে ছিলেন সেই সময় চন্দ্র উদয় হয়। চন্দ্রদেবী তাকে দেখতে পান। তার অসাধারণ সৌন্দর্যে তিনি বিমোহিত হন। তিনি নেমে আসেন এই সুদর্শন পুরুষের কাছে। সেলিনি তীব্র আবেগে তার প্রেমে পড়েন এবং তার সঙ্গে মিলিত হন।

তার পর সেলিনি তাকে ঘুম পাড়িয়ে দেন। কোনো কোনো পুরাণে রয়েছে সেলিনি নিজেই মায়াজাল বিস্তার করে তাকে চিরদিনের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখেন। আবার কোনো পুরাণে রয়েছে সেলিনির অনুরোধে জিউস তার চোখে নিয়ে আসেন চিরঘুম। অ্যান্ডিমিয়নকে কেন নিদ্রায় আচ্ছন্ন করা হল তার কারণ অতি বিচিত্র। এই সুদর্শন পুরুষ যেন অন্য কোনো নারীর প্রতি আকৃষ্ট না হন সেজন্যই তাকে চিরদিনের জন্য নিদ্রাচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়। মৃত্যুর কঠোরতাকেও কিভাবে স্বপ্নময় ও কাব্যিক করে তুলতে হয় তা গ্রিক পুরাণকাররা জানতেন খুব ভালোভাবেই। আর তাদের এই বাস্তব জ্ঞানটুকুও ছিল যে, একমাত্র মৃত্যুতেই সম্ভব প্রেমকে অমর করা। জীবিত মানুষ একজনের প্রতি চির বিশ্বস্ত থাকতে পারে না। তাই অ্যান্ডিমিয়নকে চিরনিদ্রিত করে দিয়েছিলেন জিউস।

ল্যাটমাস পর্বতের একটি গুহায় মতান্তরে চাঁদের বুকেই তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। চন্দ্রদেবী প্রতি রাতে তাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তার সঙ্গে মিলিত হন। আবার কোনো পুরাণে রয়েছে ঘুমন্ত অ্যান্ডিমিয়নের সঙ্গেই মিলিত হন সেলিনি।

সেলিনি ও অ্যান্ডিমিয়নের পঞ্চাশটি কন্যা জন্ম নেয়। এরা অলিম্পিয়াডের পঞ্চাশটি চান্দ্র মাসের প্রতীক।