ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১১:১৩:০৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শিগগিরই তৈরি হচ্ছে কৃত্রিম মাতৃগর্ভ

বিবিসি বাংলা অনলাইন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৩ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৯ বুধবার

লিসা ম্যান্ডিমেকার কৃত্রিম মাতৃগর্ভের নকশা করছেন

লিসা ম্যান্ডিমেকার কৃত্রিম মাতৃগর্ভের নকশা করছেন

নেদারল্যান্ডসের একদল বিজ্ঞানী বলছেন, আগামী এক দশকের মধ্যে তারা কৃত্রিম মাতৃগর্ভ তৈরি করতে সক্ষম হবেন। এর ফলে প্রিম্যাচিউরড বেবি বা অপরিণত শিশু, অর্থাৎ মাতৃগর্ভে ৩৭ সপ্তাহ কাটানোর আগেই জন্ম নেয়া শিশুদের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।

একটা প্লাস্টিকের ব্যাগের মতো দেখতে এই কৃত্রিম জরায়ুর ভেতরে থাকবে অপরিণত শিশুটি, তার সাথে জুড়ে দেয়া পাইপ দিয়ে তার জন্য আসবে রক্ত ও অন্যান্য তরল। ঠিক মায়ের গর্ভের মতোই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে সেখানে।

বিশ্বব্যাপী এখনো নবজাতক শিশু মৃত্যুর অন্যতম বড় কারণ অপরিণত শিশু জন্ম।

নেদারল্যান্ডসের ম্যাক্সিমা মেডিকেল সেন্টারে এই মূহুর্তে এই কৃত্রিম মাতৃগর্ভ তৈরির কাজ চলছে, যা প্রধানত খুবই অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়া শিশুদের কথা মাথায় রেখে করা হচ্ছে।

লিসা ম্যান্ডিমেকার কৃত্রিম মাতৃগর্ভের নকশা তৈরি করছেন।

তিনি বলছেন, "কৃত্রিম মাতৃগর্ভ হবে একটি প্লাস্টিকের ব্যাগের মত। নির্ধারিত সময়ের আগেই পৃথিবীতে চলে এসেছে যে শিশু, মায়ের পেট বের করে তাকে সেই ব্যাগে ঢোকানো হবে।"

সেখানে সে চার সপ্তাহ সময় অবস্থান করবে। তারপর নতুন করে সে আরেকবার ভূমিষ্ঠ হবে পৃথিবীতে।"

"এই মূহুর্তে পাঁচটি বড় বড় বেলুন বানানো হয়েছে, প্রত্যেকটির সঙ্গে জুড়ে দেয়া হয়েছে অসংখ্য পাইপ। এই বেলুনগুলোর মধ্যে শিশুরা মাতৃগর্ভে যে তরলের মধ্যে সাঁতার কাটে, তার ব্যবস্থা করা হবে।

"আর বিভিন্ন পাইপের মাধ্যমে সেখানে তরল ও রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা হবে।"

লিসা বলছেন, প্রতিটি বেলুন তৈরি করা হবে একটি শিশু মাতৃগর্ভে সর্বশেষ যে ওজনে রয়েছে, তার দ্বিগুণ আকৃতিতে, যাতে শিশুটির চলাফেরা মাতৃগর্ভের মতই স্বাভাবিক থাকে।

এই ল্যাবের গাইনি চিকিৎসক গিড ওয়েই, ২৭ বছর যাবত এই পেশায় আছেন।

তিনিও এই গবেষণা দলে রয়েছেন। কর্মজীবনে তিনি বহু নবজাতকের মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেছেন, বহু মা-বাবার আক্ষেপ আর হতাশাও দেখেছেন।

তিনি বলছেন, কৃত্রিম মাতৃগর্ভের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটা তরলে পূর্ণ থাকবে, যেখানে একটি ইনকিউবেটর থাকে বাতাসে পূর্ণ।

"এখন অপরিণত অবস্থায় জন্মানো শিশুকে ইনকিউবেটরে রাখা হয়, যা আসলে ঐ শিশুটির জন্য একটি বৈরি অবস্থা, কারণ ইনকিউবেটরের বাতাস শিশুর ফুসফুসের ক্ষতি করে।

তার বদলে এখন অপরিণত শিশু যারা খুব ছোট্ট আকৃতিতে থাকে, তাদের কৃত্রিম মাতৃগর্ভে ঢুকিয়ে দেয়া হবে।"

"সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে কৃত্রিম প্লাসেন্টা বা নাড়ি দিয়ে সংযুক্ত করা হবে, ফলে সে থাকবে প্রয়োজনীয় পরিমাণ তরলের ভেতর ঠিক যেভাবে সে ছিল তার মায়ের গর্ভে।

"ঐ গর্ভে পানি এবং সব ধরণের খনিজ উপাদান পরিমাণ মত থাকবে। ফলে আম্বিলিকাল কর্ডের মাধ্যমে শিশু প্রয়োজনীয় পরিমাণ অক্সিজেন এবং অন্য পুষ্টি উপাদান পেতে থাকবে।"

ওই অবস্থায় চার সপ্তাহ থাকার পরে, শিশুটিকে বের করা হবে। নতুন করে ভূমিষ্ঠ হবে সে। আর এভাবেই বাঁচানো যাবে লক্ষ প্রাণ।

অনেক মা-বাবার কাছে এটা একটা স্বপ্ন সত্যি হবার মত ব্যপার। কারণ এখনো প্রতিবছর বিশ্বে দেড় কোটির বেশি শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্ম নেয়, যার অর্ধেকের বেশি শিশু মারা যায়।

লিসা বলছেন, এই পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কে এখুনি মানুষ ভাবতে পারছে না হয়ত, কিন্তু এর মাধ্যমে হয়ত বাঁচানো যাবে অসংখ্য শিশুর জীবন।

গর্ভধারণ সম্পর্কেও মানুষ একেবারে ভিন্ন ভাবে ভাবতে পারবেই কৃত্রিম মাতৃগর্ভ আবিষ্কারের ফলে, বলছেন লিসা।

কিন্তু প্রাকৃতিক উপায়ে গর্ভধারণ জায়গায় কৃত্রিম পদ্ধতি কতটা নৈতিক হবে - তা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন উঠেছে।

সমালোচকরা মনে করেন, এর ফলে আগামী দিনে নারীরা সন্তান ধারণকালীন জটিলতা এড়ানোর জন্য প্রাকৃতিকভাবে গর্ভধারণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।