ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ৪:৪২:৪২ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘দুলি’-র সৌন্দর্যে মুগ্ধ ছিলেন বহু নামী পুরুষ

বিনোদন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৮ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

সিমি গাড়ওয়ান

সিমি গাড়ওয়ান

কখনও তিনি অরণ্যের সৌন্দর্য মেখে থাকা দুলি। কখনও বা এক কিশোরের ইনফ্যাচুয়েশন, ‘মেরি’। নানা রূপে, নানা ধরনের চরিত্রে এ ভাবেই নিজেকে ভেঙেছেন এবং আবার গড়েছেন সিমি গারওয়াল। বলিউডের ‘অন্যধারার সুন্দরী’-দের মধ্যে তিনি অন্যতম। ছবিতে অভিনয় থেকে টেলিভিশনে সঞ্চালনা। ইন্ডাস্ট্রিতে সিমি থেকে গিয়েছেন স্বকীয়তা নিয়েই।

১৯৪৭ সালের ১৭ অক্টোবর সিমির জন্ম পঞ্জাবের এক জাঠ শিখ পরিবারে। তার বাবা ব্রিগেডিয়ার জে এস গারওয়াল ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে। মায়ের নাম দর্শী। মায়ের দিক দিয়ে সিমি বলিউডের বিখ্যাত চোপড়া পরিবারের আত্মীয়। তার মা দর্শী এবং যশ চোপড়ার স্ত্রী পামেলার বাবা মহিন্দর সিংহ, সম্পর্কে ভাই-বোন। বোন অমৃতার সঙ্গে সিমির শৈশবের অনেকটাই কেটেছে ইংল্যান্ডে। পড়তেন নিউল্যান্ড হাউস স্কুলে।

কৈশোরে সিমি চলে আসেন ভারতে। তার প্রথম ছবি ছিল ‘রাজ় কি বাত’। ইংরেজি বলার দক্ষতা তাকে সুযোগ দেয় ‘টারজান গোজ টু ইন্ডিয়া’ ছবিতে। পঞ্চদশী সিমি সেখানে ফিরোজ খানের নায়িকা। আত্মপ্রকাশেই বাজিমাত।

১৯৭০ সাল সিমির কেরিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ। একই বছর মুক্তি পায় রাজ কাপুরের ‘মেরা নাম জোকার’এবং সত্যজিৎ রায়ের ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’। দু’টি ছবিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে ধরা দেন সিমি। ‘মেরা নাম জোকার’-এ তিনি কিশোর রাজুর ভূমিকায় অভিনয় করা ঋষি কাপুরের স্বপ্নসুন্দরী। আবার ‘অরণ্যের দিনরাত্রিতে’ তিনি আদিবাসী রমণী দুলি। যার বন্য মাদকতায় মুগ্ধ শহুরে যুবক হরি। হরির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন প্রয়াত শমিত ভঞ্জ।

এরপর কয়েক বছর বলিউডের মূলস্রোতের বাণিজ্যিক ছবিতে অভিনয়। তারপর আবার বাংলা ছবি। এ বার সিমি মৃণাল সেনের ছবির নায়িকা। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় ‘পদাতিক’। মৃণাল সেনের কলকাতা ট্রিলজির তৃতীয় এই ছবিতে সিমি অভিনয় করেছিলেন ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে।

হারমান কার্ল হেসের লেখা উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয় ছবি, ‘সিদ্ধার্থ’। মার্কিন পরিচালক কনরাড হুকসের এই ছবিতে শশী কাপুর ছিলেন তরুণ সিদ্ধার্থের ভূমিকায়। ছবিতে সিমির নগ্ন দৃশ্য নিয়ে জলঘোলা হয়েছিল ভারতীয় বিনোদন মহলে।

সমান্তরাল ধারার ছবির পাশাপাশি তিনি অভিনয় করেছেন বেশ কিছু জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ছবিতেও। ‘চলতে চলতে’, ‘কভি কভি’, ‘কর্জ’, ‘নসিব’ সে রকমই কিছু উল্লেখযোগ্য ছবি। আড়াই দশকের কেরিয়ারে অভিনয় করেছেন পঞ্চাশটিরও বেশি ছবিতে।

ব্যক্তিত্বময়ী সিমির টেলিভিশন-কেরিয়ারও সমান উজ্জ্বল। অভিনয়ের তুলনায় ছোটপর্দায় তিনি সপ্রতিভ সঞ্চালক। ‘ইটস এ উম্যানস ওয়র্ল্ড’, ‘লিভিং লেজেন্ড রাজ কাপুর’, ‘ইন্ডিয়াস রাজীব’, ‘ইন্ডিয়াজ মোস্ট ডিজায়ারেবল’ এবং অবশ্যই ‘রঁদেভু উইথ সিমি গারওয়াল’— এই শোগুলির জনপ্রিয়তার মূল কারণই ছিল সিমির সঞ্চালনা।

জিনাত আমান, পারভিন ববির মতো সিমিও ছিলেন বলিউডের সেক্স সিম্বল। তবে তিনি নানা ধরনের কাজ করেছেন। নিজেকে শুধুমাত্র ‘সেক্স সিম্বল’-এর ভাবমূর্তিতে আটকে রাখেননি। কাজের মতো তার ব্যক্তিগত জীবনও ছিল বর্ণময়।

জামনগরের মহারাজার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সপ্তদশী সিমির। মাত্র তিন বছরেই ভেঙে যায় তাদের সম্পর্ক। সিমি পরে জানিয়েছিলেন, প্রেম ভাঙার কারণ ছিল ওভার পজেসিভনেস। শোনা যায়, পরবর্তী কালে মনসুর আলি খান পাতোওদির সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক ছিল সিমির। তখনও মনসুর ভারতীয় দলের অধিনায়ক হননি। সে সময় তার বিশেষ বান্ধবী ছিলেন সিমি।

এমনকি, ইন্ডাস্ট্রিতে গুঞ্জন, রাজ কাপুরও মুগ্ধ ছিলেন সিমির রূপে। এরপর একে একে মনমোহন দেশাই, পঞ্জাবের প্রাক্তন রাজ্যপাল সালমান তাসের থেকে শুরু করে ঋষি কাপুর। বহু বিখ্যাত পুরুষের সঙ্গেই জড়িয়েছে সিমির নাম।

দিল্লির অভিজাত চুন্নামল বংশের ব্যবসায়ী রবি মোহনকে বিয়ে করেছিলেন সিমি। কিন্তু এক দশক পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। সিমি পরে বলেছিলেন, তাদের ব্যক্তিত্ব ছিল বিপরীত মেরুর। পরিচয়ের পরেই অল্প সময়ের মধ্যে খুব দ্রুত বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে তারা ভুল করেছিলেন। তবে বিচ্ছেদের পরে এখনও তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আছে।

বাহাত্তরটি বসন্ত পেরিয়েও সিমি একই রকম স্টাইলিশ। সাজের ঘরানাকে নিয়ে গিয়েছেন অন্য মাত্রায়। জানিয়েছেন, ছোট থেকেই তার প্রিয় রং সাদা। এর বাইরে তাকে অন্য রঙের পোশাকে খুব বেশি দেখাও যায় না। সাদাকেই তিনি স্টাইল স্টেটমেন্ট করে তুলেছেন নিজের ব্যক্তিত্বের ছোঁয়ায়।