পেঁয়াজের ডাবল সেঞ্চুরিতে অস্থির বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৫:০৪ পিএম, ১৪ নভেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
ছবি: সংগৃহীত
কয়েক মাস ধরেই দেশে পেঁয়াজের দামে যেন আগুন লেগেছে। এর ওপর আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছে ভারত। দেশটি থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হওয়ার পর থেকেই হু হু করে বেড়ে চলছে দাম। তাই বাজারে গিয়ে অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটির গায়ে হাত দিলে ছ্যাঁকা লাগতে পারে। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকায় পৌঁছেছে। এটি স্মরণকালের সর্বোচ্চ দাম। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ প্রায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা দরে। সকালেও কোনো কোনো বাজারে দাম ছিলো ১৮০ টাকা। আবার কোনো কোনো খুচরা বাজারে দাম ২২০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে।
এদিকে, সরকারের নিয়মিত মনিটরিং না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমত পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ক্রেতারা। পেঁয়াজের এমন লাগামহীন দামে ক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভ দেখা গেছে। পেঁয়াজের বাজার কারা নিয়ন্ত্রণ করছেন সেই প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা যায়, মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ পাইকারি বিক্রি হচ্ছে- ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে, মিয়ানমারের পেঁয়াজ ১৬০ থেকে ১৭০ ও দেশি পেঁয়াজের দাম ২০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডে পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা আদনান আহমেদ বলেন, একদিন আগেও পেঁয়াজ কিনেছি কেজি প্রতি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। এখন ২০০ টাকা চাইছে।
খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা ক্রেতা তাজরিন বলেন, বাড়িতে রান্না করার মতো একটা পেঁয়াজও নেই। সকালে পেঁয়াজ কিনতে দোকানে গিয়ে শোনেন এক কেজি পেঁয়াজের দাম ১৯০ টাকা। পরে এক কেজি পেঁয়াজ কিনে বাড়ি ফিরেন তিনি।
রামপুরা বাজারে আরিফ হোসেন নামে এক ক্রেতা জানান, বেলা একটার দিকে তিনি ২২০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছেন।
বিক্রেতাদের দাবি, আড়ত থেকে বেশি দামে পেঁয়াজ কিনতে হচ্ছে; তাই দাম বেড়েছে। তাই ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।
শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা আলমগীর মিয়া বলেন, চাহিদার বিপরীতে পেঁয়াজের জোগান একদম কম। এছাড়া, দেশি পেঁয়াজ এখনো ওঠেনি। তার ওপর ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি নেই। সব মিলিয়ে অস্থির বাজার।
এদিকে, সরকারি বিপণন সংস্থা (টিবিসি) বৃহস্পতিবারের পিঁয়াজের বাজার দর উল্লেখ করেছে- প্রতি কেজি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। এরমধ্যে, আমদানি করা প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ও দেশি পিঁয়াজ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা।
টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিলো ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ছিলো ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা।
এর আগে, ১২ নভেম্বর জাতীয় সংসদের পঞ্চম অধিবেশনে সরকারি দলের সাংসদ আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হূমায়ুন জানিয়েছিলেন, চাহিদার তুলনায় পেঁয়াজ কম উৎপাদনের পাশাপাশি ভারত রপ্তানি বন্ধ করায় পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে পেঁয়াজের বাজার অস্থির হয়ে উঠে। ২৯ সেপ্টেম্বর অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্য পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত সরকার। বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে ভারতের ওপরই নির্ভরশীল। ফলে দেশের বাজারে হু হু করে দাম বাড়তে থাকে। তখন দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকা হয় দেশি পেঁয়াজের দাম। আর ভারতীয় পেঁয়াজও কেজি প্রতি বিক্রি হতে থাকে ১০০ টাকার কাছাকাছি দরে। অবশ্য, বাজার তদারকি আর হুজুগ শেষের পর দাম আবার কিছুটা কমে। তবে, গত কয়েক দিন ধরে আবারো লাগামহীন হয়ে পড়েছে পেঁয়াজের দাম।
-জেডসি