ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১২:১০:৩৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মেয়েদের বিজ্ঞান ও অংক পড়তে হবে : সোনিয়া বশির কবির

বিবিসি অনলাইন

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : ১২:১৩ পিএম, ৩ মার্চ ২০১৮ শনিবার | আপডেট: ১১:২০ এএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার

`মেয়েরা বিজ্ঞানে, অংকে বা প্রযুক্তিতে ভালো নয়`-এমন কথা একেবারেই মানতে রাজি নন সোনিয়া বশির কবির। তিনি নিজে তার কাজ দিয়ে সেটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন।


বাংলাদেশে যে কয়জন নারী প্রযুক্তি খাতে খুব উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছেন তিনি তাদের একজন। তার মতে, সেখানে পৌঁছাতে হলে মেয়েদের বিজ্ঞান ও অংক পড়তে হবে।


একটা সময় ছিল যখন বলা হতো নারী সাংবাদিক, মহিলা ডাক্তার, নারী উদ্যোক্তা অর্থাৎ পেশা যাই হোক নারী হলে সেই পরিচয়টা তার পেশার সাথে লাগানো থাকতো।


তিনি বলছেন, নিজেকে নারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে ভাবেন নি কখনো।


"অনেক জায়গায় প্রতিযোগিতায় নামতে হয়েছে। আমি নানা ক্ষেত্রে জিতেছি, আবার কখনো হেরেছি। তবে এটা তো যাত্রাপথের একটা অংশ। হয়ত আমি লাকি ছিলাম। তবে আমি কঠোর পরিশ্রম করেছি"।


সোনিয়া বশির কবির বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান ও লাওসে টেক জায়ান্ট মাইক্রোসফট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ ছাড়াও তিনি আরেকটি বড় প্রযুক্তি কোম্পানি ডেল-এর বাংলাদেশ প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম প্রযুক্তি খাতে এরকম একটি কোম্পানির চারটি দেশের কর্তাব্যক্তি হতে হলে কি দরকার?

সে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছিলেন, "এটা আমার ভিতর থেকে আগে আসতে হবে। নিজের উপর বিশ্বাস থাকতে হবে। ইচ্ছা, আত্মসম্মান এবং সাহস থাকতে হবে। এগুলো যদি থাকে তাহলে লড়াই করে নিজেকে এমন যায়গায় আনা সহজ"।

সোনিয়া বশির কবির নিজে বাংলাদেশে দুটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠাতা করেছেন। বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন।


প্রযুক্তি খাতে জড়িতদের প্ল্যাটফর্ম বেসিস এর বোর্ডে এ সদস্য হিসেবে আছেন। এতসব কোথায় কিভাবে শুরু হয়েছিলো?
তিনি এসব কিছুর জন্য বাবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।


তিনি বলছিলেন, "আমি দুই ভাইয়ের সাথে বড় হয়েছি। আমার বাবা কোনোদিন আমাকে মনে করতে দেননি আমি মেয়ে। ভাইদের সাথে ফুটবল, ভলিবল খেলে বড় হয়েছি। আবাহনীর মাঠে রোজ বিকেলে গিয়ে খেলা করতাম। বাবা কোনদিন সেভাবে আমাকে আলাদা করেন নি"।


তিনি তার বিয়ের পর স্বামীর কাছে যান যুক্তরাষ্ট্রে যিনি টেকনোলজির রাজধানী সিলিকন ভ্যালিতে সফটওয়ার প্রকৌশলী ছিলেন।


তিনি নিজেও সেখানে গিয়ে সেসব নিয়েই পড়াশোনা করেছেন এবং স্বাভাবিকভাবেই ঐ জগতেই তার প্রবেশ।


বিশ্বের সবচাইতে কম উন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি খাতে উন্নয়নের জন্য তিনি জাতিসংঘের তৈরি টেকনোলোজি ব্যাংক এর গভর্নিং কাউন্সিলের সহ-সভাপতি। সেই সুবাদে অন্য অনেক দেশের প্রযুক্তি খাতে কাজ দেখার সুযোগ পেয়েছেন।

সোনিয়া বলছিলেন বাংলাদেশ এদিকে অনেক এগিয়েছে। তুলনা দিতে গিয়ে তিনি বলছিলেন, "আমার বাসায় দুজন গৃহকর্মী আছে। তারা কিন্তু মোবাইল ফোনে যত প্রযুক্তি সব ব্যবহার করতে পারে"।


তিনি আরো বলছিলেন, বাংলাদেশে প্রযুক্তি ব্যবহারে এগোলেও নিজে প্রযুক্তি উৎপাদন করা যেটি অন্যরা ব্যবহার করবে তাতে পিছিয়ে আছে।


তিনি উদাহরণ দিয়ে বলছিলেন, "ধরুন ভারতে গান্ধী একশ বছর আগে ইন্ডিয়ান ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি তৈরি করেছিলেন। সেখানে আমাদের এখানে কিন্তু শুধু প্রযুক্তির পড়াশোনা হচ্ছে বড়জোর পঁচিশ বছর"।


তবে তিনি মনে করছেন বাংলাদেশ প্রস্তুতি নিচ্ছে এখনো পৌছায় নি। তার মতো প্রযুক্তি খাতে আরো অনেক পেশাদার বাংলাদেশী আসবে তবে কিছু সমস্যা সমাধান করতে হবে যেমন শুধু টেক্সটবুক নয় আরো ভোকেশনাল পড়াশোনার ব্যবস্থা দরকার বলে তিনি মনে করেন।


তিনি উইমেন ইন টেকনোলজি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সাথে যুক্ত ছিলেন তার কারণ হিসেবে বলছিলেন, "বাংলাদেশে মেয়েরা ষষ্ঠ বা সপ্তম শ্রেণীর পরই বিজ্ঞান পড়া বন্ধ করে দিয়ে আর্টসে চলে যায়। তাই যদি হয় তাহলে তারা তো ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না। আমি চেয়েছি মেয়েদের কাছে যাবো আর বলবো তোমরা সায়েন্স পড়ো, সায়েন্সকে ভালোবাসো। বিজ্ঞান আর অংক অত কঠিন না। তখন তোমরা অন্য মেয়েদের কাছে রোল মডেল হতে পারবো"।


সোনিয়া বশির কবির কিশোর বয়সে একটু একদম ভিন্ন একটা বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিনি একজন অ্যাথলেটও বটে। একসময় ভলিবল ও ক্রিকেটে জাতিয় দলে খেলেছেন। বাংলাদেশে মেয়েদের ভলিবলে প্রথম ক্লাবে খেলেছেন। হকিও খেলেছেন। দৌড়াতে ভালবাসেন।


তিনি বলছিলেন, আমরা যেমন বলি প্রযুক্তি ছেলেদের ব্যাপার তেমনি মনে করা হয় খেলাধুলাও ছেলেদের ব্যাপার। তিনি তার ব্যতিক্রম তৈরি করে দেখাতে চেয়েছেন।