রাজনীতিতে নারীদের হুমকি ও ভয় দেখানোর শেষ কোথায়?
জেসিকা স্ট্র্যাট
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:১৫ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার | আপডেট: ১১:৩৫ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ শুক্রবার
অস্ট্রেলিয়ায় মহিলা রাজনীতিবিদরা এখনও বিভিন্ন হুমকি ও ভয়ের মধ্যে দিয়েই দায়িত্ব পালন করেন। অবাক বিষয় হল হুমকি-ধামকি খোদ সংসদ থেকেই শুরু হয়।
নারী রাজনীতিবিদদের এখন একটাই প্রশ্ন। এ নির্যাতনের শেষ কোথায়? এই সমস্যার কারণে অস্ট্রেলিয়ায় নারীরা এখন আর রাজনীতিতে প্রবেশ করতে চান না।
সম্প্রতি ফেডারেল লিবারেল এমপি জুলিয়া ব্যাংকস তার রাজনৈতিক কর্মজীবনের ইতি টেনেছেন। লেবার এবং লিবারেল উভয় দলের কাছ থেকে হুমকি ও ভয় প্রদর্শনের পরে পরবর্তী নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে সাফ জানিয়ে নেন।
লিবারেল আরেক নারী সিনেটর লুসি জিচুই জুলিয়ার উপর এ ঘটনায় যারা দায়ী তাদের নাম প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন। তিনি পদক্ষেপ নিতে চাইলেও সর্বসম্মত সমর্থন তিনি পাননি।
এই সপ্তাহে পররাষ্ট্র মন্ত্রী জুলি বিশপ সিডনিতে একটি অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে জুলিয়া ব্যাংকসকে পূর্ণ সমর্থন করেন। জুলি বিশপ বলেন, আমি সংসদে কিছু ভয়ঙ্কর আচরণ দেখেছি।
নারী নেত্রী মিসেস ডেভিস পানি মন্ত্রী ডেভ কেলির কথিত আচরণকে ভীতি প্রদর্শনকারীর শামিল বলে মন্তব্য করেছেন। ডেভিস জানান তিনিও কেলির অত্যাচারের স্বীকার। যা নিয়ে সংসদে সমালোচনা হয়। যদিও এ নিয়ে অনেকে মুখ খুলতে চাননি।
ফলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বেশি জোর পায়নি। পরে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের অভিযোগের প্রমাণ মিলে কেলির বিরুদ্ধে, যার জন্য ডেভ কেলি পার্লামেন্টে ক্ষমা চান।
পুরো বিষয়টিকে পার্লামেন্ট সদস্য মিসেস ডেভিস অস্বস্তিকর ঘটনা বলে মনে করেন। তিনি বলেন, সংসদ একটি বিশেষ কর্মক্ষেত্র যেখানে একটি দেশের ভালমন্দ সব কিছু আলোচনা হয়। অনেক চুক্তি সই হয়। সংসদ সদস্যরা তাদের চেম্বারে যদি অন্যদের ভয় দেখান ,বিশেষ করে নারীদের তাহলে সংসদ তার আস্থা হারিয়ে ফেলে। এটা বন্ধ করা উচিত।
মিস ডেভিস তদন্ত কমিটির কাছে বর্ণনা করেন কিভাবে মি.কেলি তাকে ভয় দেখান। তিনি বলেন,কেলি আমাকে তার চেম্বারে নিয়ে অনেক ভয়ভীতি দেখায় এবং হুমকি দেখায়। এটা আমার কাছে একবারেই ব্যতিক্রম অভিজ্ঞতা। আমি দলকে ভালবাসি। কিন্তু কর্মপরিবেশ অনুকূল না থাকলে করার কিছুই নাই।
এই বিতর্কের সময় আরেক নারী পরিবহন মন্ত্রী রিটা সাফোরি সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি সংসদে নারীদের বিদ্বেষী আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। রিটা সাফোরি লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টির তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি প্রকাশ করেছিলেন যে তিনিও এরকম হুমকি আর ভীতির সম্মুখীন হয়েছিলেন।
পুলিশ নারী মন্ত্রী মিশেল রবার্টস জানান তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর অনেক বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি পুলিশের দায়িত্ব পারবেন না। তাকে লাঠি হাতে স্টাচুর মত লাগে। এত বড় ক্ষমতা এক নারীর হাতে। আরও কত কি কথা তার শুনতে হয়েছিল। এমনকি তার চেহারা নিয়েও কথা হয়েছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী জুলি বিশপ আক্ষেপ করে বলেন, বিষয়টি সত্যিই দু:শ্চিন্তার । খোদ সংসদে যদি এরকম থাকে। তাইলে বাইরে কি অবস্থা। এর সমস্যা সমাধান করতে গেলে সবাইকে একসাথে বসতে হবে। নারীদের কর্মক্ষেত্র,পরিবেশের নিরাপত্তা দিতে হবে। এর মুখোমুখি হতেই হবে, এটি একটি নতুন সমস্যা নয়। এটি এড়িযে যাওয়ার উপায় নেই।
বৈদেশিক বিষয়ক কেন্দ্রীয় নারী মন্ত্রী ক্যালীও ডায়নার বলেন,সংসদ কোন ফুটবল খেলার ক্ষেত্র নয় যে নারীদের ফাউল করতে হবে। আগে এ নিয়ে পেণাল্টি না হলেও এবার যে করবে তার পেনাল্টি দিতে হবে, না হলে ভদ্রভাবে থাকতে হবে। সব কিছুর একটা শেষ আছে।
জেসিকা স্ট্র্যাট, আর্ন্তজাতিক লেখক, কলামিস্ট, অস্ট্রেলিয়া।