ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১:৫১:১৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

প্রসঙ্গ “# Me Too

রাশেদ মেহেদী

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:০২ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৮ শনিবার

“# MeToo" আন্দোলন বিশ্বজুড়েই বেশ কিছু গুনীজনের চরিত্রের অন্ধকার দিকটা আলোয় নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাবটা বেশ লক্ষ্য করা গেছে। কয়েকজন নিজেদের জীবনে ঘটে যাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন।


পশ্চিমা দুনিয়ায় নিপীড়ণের জন্য অভিযুক্ত বেশীরভাগই দায় স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন এবং অভিযোগকারীকে আক্রমণ করতে দেখা যায়নি। কিন্তু ভারত আর বাংলাদেশে দেখা গেল, অভিযুক্তের চেয়ে অভিযোগককারীই বেশী আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।


অনেক দায়িত্বশীল মানুষ যারা দিনে আট-দশটা টকশো আর মাসে শতাধিক কলাম লিখে জাতিকে জ্ঞান দিয়ে ধন্য করেন তাদেরকেও দেখছি “# MeToo" নিয়ে ঠাট্টা-মস্করা করেছেন, এর বিদ্রুপাত্মক প্রতিশব্দ তৈরি করছেন এবং সম্ভবত, তারা অভিযুক্তকে সহজে দায়মুক্ত করার জন্যই ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ কে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন সচেতনভাবেই।


আমার প্রিয় লেখক, প্রিয় মানুষ সেলিম আল দীনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ এসেছে, সেলিম আল দীন ভক্তদের অনেককেই দেখছি অভিযোগকে হাস্যকর প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, অভিযোগকারীর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, আমার কাছে এ প্রবণতা অসুস্থ মনে হয়েছে। আগেই বলেছি সেলিম আল দীন আমার প্রিয় লেখক শুধু নন, প্রিয় মানুষও। কারন তিনি যেমন তার সৃস্টিতে অনন্য, আমার চোখের সামনে ব্যক্তিত্বের প্রকাশেও অসাধারণ। কিন্ত সেলিম আল দীনকে আমি মহাপুরুষ ভাবিনি কখনও, ভাবতে চাইও না। তার চরিত্রের দুর্বল দিক থাকতে পারে, যেমন আর দশটা সাধারন মানুষেরও থাকতে পারে। সেই চারিত্রিক দুর্বলতা তার অবিস্মরণীয় সৃস্টির উজ্জ্বলতাকে এতটুকু ম্লান করার ক্ষমতা রাখে না।


কিন্তু নিজের চরিত্রের দুর্বলতা কে ঢাকতে গিয়ে একজন শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়াটা মহা অন্যায়, সেলিম আল দীন সেই অপরাধ করে থাকলে এই অন্যায়ের দায় তাকে নিতেই হবে। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় লেখক হিসেবে, সামস্টিক পরিসরে প্রাজ্ঞজন হিসেবে সেলিম আল দীন অনন্য হলেও শিক্ষক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার নিজের আশে পাশের আর দশজন শিক্ষকের উর্ধ্বে উঠতে পারেননি। তার চরিত্রের এই দুর্বলতা এখানেই, অভিযোগের বর্ণনা থেকে স্পষ্ট, সেলিম আল দীনের বিরুদ্ধে অভিযোগটাও শিক্ষক হিসেবেই, লেখক হিসেবে নয়।


একটু ভাল করে খেয়াল করে দেখুন যৌন নিপীড়নের অধিকাংশ ঘটনা ঘটে এক ধরনের আধিপত্যবাদী মানসিকতাে থেকেই। শিল্পপতি, সাংবাদিক, লেখক, প্রকাশক যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠছে প্রত্যেকেই নিজেদের আধিপত্য প্রকাশের মত অবস্থানে ছিলেন এবং সেই অবস্থান থেকে যৌন রিপীড়ণকেও অনেকটা নিজেদের অধিকারের মত করেই বিবেচনা করেছেন, সেটাও বোঝা যায়। 


অনেকের সন্দেহের সঙ্গে একমত, কেউ কেউ সুযোগ নিয়ে উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা অভিযোগও প্রচার করতে পারেন, কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে আমাদের সমাজে একজন নারীর পক্ষে চট করে নিজের উপর নিপীড়িণের তিক্ত অভিজ্ঞতা প্রকাশ করা সম্ভব হয় না। যে দেশে রাস্তায় রাতে পুলিশ সদস্যরা একজন নারীর সঙ্গে জঘন্য আচরণ করে উল্লাস করতে পারে, সে দেশে নারীর প্রতি ধর্ষকামী সামাজিক দৃষ্টিটভঙ্গী সম্পর্কে নতুন করে আর কোন ব্যাখার প্রয়োজন পড়েনা। অতএব যারা প্রকাশ করছেন তারা যথেষ্ট সাহস নিয়ে প্রকাশ করছেন এবং তাদের অভিযোগ উদ্দেশ্যমূলক হওয়ার সম্ভাবনা কম। অন্তত, এর মধ্যে যে কয়টা অভিযোগ এসেছে তার কোনটিকেই উদ্দেশ্যমূলক বলে সন্দেহ করার মত মনে হয়নি আমার। 


অনেকেই বিদ্রুপ করতে পারেন, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে “# MeToo" আন্দোলন নিপীড়িত নারীর অব্যক্ত বেদনার অধ্যায় প্রকাশ শুধু নয়, বিশ্ব জুড়ে পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য আর অভিজাত্যের উপরই একটা বড় আঘাত। এই আঘাতে পুজিবাদী দুনিয়ার দুর্গন্ধযুক্ত ‘পুরুষ রুচি’ শুচিস্নানে শুদ্ধ হোক, এটাই প্রত্যাশা। 

 

৥ ফেসবুক থেকে নেয়া