ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৮:৫৯:২৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

বিবাহবিচ্ছেদ বাড়ছে আফ্রিকায়, চাচ্ছে মেয়েরাই

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৫২ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৯ বৃহস্পতিবার

ছবি : সংগ্রহ করা

ছবি : সংগ্রহ করা

কখনও গায়ে হাত তোলা তো দূরের কথা, চিৎকার-চেঁচামেচিও করেনি তোমার স্বামী। বিবাহ বহির্ভূত কোনও সম্পর্কও নেই লোকটার। তা হলে? তুমি বিবাহবিচ্ছেদ চাইছ কেন?

কোলের ছেলেকে দুধ খাওয়াচ্ছিল জালিকা। জালিকা আমাদু। পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ নাইজারের বাসিন্দা। বয়স এখনও কুড়ির কোঠায় পৌঁছয়নি। কোলে সদ্যোজাত আফান। বিচারকের প্রশ্নে চোখ তুলে তার মুখের দিকে তাকাল জালিকা। 

চাপা স্বরে বলল, আমার মন ভরে না হুজুর। বাপের থেকে বড় একটা লোক। রোজগারপাতিও নেই ঠিকমতো। বিয়ের আগে কত মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেছিল। আর এখন! আমি ওর সঙ্গে আর থাকব না। 

পাশ থেকে আর্তনাদ করে ওঠেন জালিকার মা। হায় আল্লাহ, স্বামীর ঘর করবে না বউ, এ কেমন কথা। কী দিনই না দেখতে হল!


জালিকা একা নয়। রীতিনীতির ঘেরাটোপে বন্দি পশ্চিম আফ্রিকার ছোট ছোট দেশগুলোতে এখনও মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় ১৫-১৬র মধ্যেই। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সন্তান। তার পরে আরও কয়েকটা। বিয়ের আগে যদি বা কিছু পড়াশোনা বা হাতের কাজ শেখা হয়, বিয়ের পরে সে সব পুরোদস্তুর বন্ধ। 

অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত এই দেশে জালিকাদের মতো পরিবারে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী। স্বামীর রোজগার নেই। কিন্তু তবু স্ত্রীকে রোজগার করতে বাইরে বার হতে দেবে না। সেই বদ্ধ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে চান জালিকার মতো তরুণীরা। দ্বারস্থ হন আদালতের— বিবাহবিচ্ছেদের আর্জি জানিয়ে।

মুসলিম অধ্যুষিত নাইজারের মতো পশ্চিম আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিবাহবিচ্ছেদ খুব একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা নয়। তিন তালাকের কোনও প্রথাও নেই এখানে। বিচ্ছেদের জন্য দ্বারস্থ হতে হয় আদালতের। কিছু দিন আগে পর্যন্ত বিচ্ছেদ চেয়ে আদালতে যেতেন পুরুষেরাই। কিন্তু গত কয়েক বছরে ছবিটা দ্রুত পাল্টেছে। 

জালিকা যে আদালতে গিয়েছেন, সেখানকার বিচারক আলকালি ইসমাইল জানালেন, এখন মাসে প্রায় পঞ্চাশ জন নারী বিচ্ছেদ চেয়ে কোর্টে আসেন।
 
আলকালি বলেন, এই সব কমবয়সি মেয়েরা আর সহ্য করতে চায় না। তারা জানে, আদালতই তাদের মুক্তি দিতে পারবে।


পশ্চিম আফ্রিকা নিয়ে কাজ করেন এমন সমাজতত্ত্ববিদদের মতে, পশ্চিম আফ্রিকায় ধীরে ধীরে এক ‘বিচ্ছেদের সংস্কৃতি’ তৈরি হচ্ছে। এবং সেই সংস্কৃতির কান্ডারি মেয়েরাই। 

নাইজারের ইসলামি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব আলৌ হামা বলেন, এখন কমবয়সি মেয়েরা হুট করে বিয়ে করতে চায় না। পড়াশোনা করে রোজগার করতে চায়। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পছন্দের পুরুষকে বিয়ে করতে চায়। 

তিনিআো বলেন, কিন্তু অনেক সময়ই পরিবারের চাপে তারা বিয়ে করতে বাধ্য হয়। কিছু প্রত্যাশা নিয়ে তারা বিয়েটা করে। আর সেই প্রত্যাশা পূরণ না হলে পরের পদক্ষেপ তো বিবাহবিচ্ছেদ।

জালিকার মায়েদের প্রজন্ম অবশ্য এখনও ভাবতেও পারেন না, কোনও মেয়ে নিজের মুখে বলবে— ‘আমি আর স্বামীর সঙ্গে থাকব না’। তারও তো ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল, তিন গুণ বয়সের একটা লোকের সঙ্গে। পাঁচ দশক সেই স্বামীর সঙ্গেই ঘর করেছেন, যত দিন না স্বামী চোখ বুঁজেছে। আটজন ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন, সংসার টেনেছেন। 

সূত্র :আনন্দবাজার পত্রিকা