ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩৬:০৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মুক্তিযোদ্ধা নারীদের বীরত্বগাঁথা এখনও অজানা

ঝুমি রহমান

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:০২ পিএম, ৩ মার্চ ২০১৯ রবিবার

মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হলেও নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না। দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি হলেও আজও নারী মুক্তিযোদ্ধদের নামের কোনো তালিকা হয়নি। আজও স্বীকৃতি মেলেনি নারী মুক্তিযোদ্ধাদের। তাদের আক্ষেপ আক্ষেপ-ই থেকে গেছে। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পর কষ্টের পাথর বুকে চেপে তাদের কেউ কেউ চিরবিদায় নিচ্ছেন। কেউবা নিভৃতেই থেকে যাচ্ছেন। 

বর্তমানে অ্যামেরিকায় বসবাসকারী অপর বীর প্রতীক ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান এক সাক্ষাৎকারে জানান, বহু ত্যাগ-তিতিক্ষা ও প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশকে নিয়ে তিনি খুব অপমানিত বোধ করেন৷ কারণ তাঁর মতে, গত ৪৯ বছরে বাংলাদেশে কিছু রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি হয়েছে৷ কিন্তু নৈতিকতা বলতে কিছু নেই৷ রয়েছে শুধু দলাদলি এবং অন্যের ক্ষতি করার প্রচেষ্টা, হিংসা ও বিদ্বেষ৷ 

তবে এখন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বের নানা প্রান্তে পৌঁছে গেছে এবং নানা খাতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে - এমন ঘটনা জেনে তিনি স্বস্তি পান এবং মনে করেন, বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে তো এটা সম্ভব ছিল না৷

দীর্ঘ নয় মাসে পাক সেনাদের অকথ্য নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষী বীর বঙ্গমাতাদের অধিকাংশই  যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং শাস্তি কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন৷ যেমন, চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যেন দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং যুদ্ধাপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তি হয় সেটিই বড় চাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলা দাসের৷

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফুন নেসা বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক, তা আমি একান্তভাবে চেয়েছি৷ কারণ আমি দেখেছি ওরা কীভাবে যুদ্ধের সময় মা-বোনদের ইজ্জত লুটেছে৷ আমি যেখানে ছিলাম মুন্সীগঞ্জে সেখানে আমি দেখেছি, অনেক বাঙালি যারা মুসলিম লিগ করতো তারা এ কাজে জড়িত ছিল৷ 

তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা তো কিছু চিনতো না৷ কিন্তু এই বাঙালিরা নারীদের নিয়ে গিয়ে পাকিস্তানিদের ভোগ দিতো৷ এটার যে একটা বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ এটা সফল হোক সেটা আমি চাই মনে-প্রাণে৷

প্রায় একই ভাষায় দেশের কলঙ্ক ঘুচানোর দাবি জানান রাজশাহীর মুক্তিযোদ্ধা সাবিত্রী বিশ্বাস৷ তিনি বলেন, আমরা আর কীভাবে ভালো থাকলাম, আমাদের আর কতটুকুই বা মূল্যায়ন হলো? তবে দেশের কলঙ্ক রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে তাই আমরা শান্তি পাচ্ছি৷

বীর সাহসী মুক্তিযোদ্ধা শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বাংলাদেশের অর্জন ও অগ্রগতির মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, আমাদের প্রিয় দেশ শত্রুমুক্ত হয়েছে সেটিই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন৷ তবে এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখনও হয়নি৷ 
তিনি বলেন, এছাড়া এতো কষ্টের এবং ত্যাগের বিনিময়ে এই দেশটিকে স্বাধীন করলাম অথচ এখন পর্যন্ত জাতির প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে কেন স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত নেই সেজন্য খুব আফসোস হয়৷

নারী মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই দাবি জানিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধে নারীদের সাহসী ভূমিকার নিয়ে পৃথক জাদুঘর, সংগ্রহশালা এবং বিদ্যমান দলিল-পত্র ও সামগ্রীর যথাযথ সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণের৷ এছাড়া নারীদের বীরত্বের কাহিনী নিয়ে ঐতিহাসিক দলিল আকারে বিশেষ প্রকাশনারও দাবি তুলেছেন অনেকে৷

তাদের দাবি, বাংলাদেশে এখনও অনেক নারী রয়েছেন যাদের বীরত্বের কাহিনী এখনও গোটা জাতির সামনে উন্মোচিত হয়নি কিংবা সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি৷ তাই এক্ষেত্রে আরো সুসংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে৷

সূত্র : ডয়চে ভেলে