ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ০:৩৮:৪৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

অল্প বয়সে খেলা ছাড়েন দেশের নারী ফুটবলাররা

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪১ এএম, ৯ মার্চ ২০১৯ শনিবার

এই দলটি বাংলাদেশের অন্যতম সফল একটি বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দল

এই দলটি বাংলাদেশের অন্যতম সফল একটি বয়সভিত্তিক নারী ফুটবল দল

অল্প বয়সে খেলা ছেড়ে দেন দেশের নারী ফুটবলাররা। তারা অনেকেই ফুটবল ছেড়ে অন্য খেলায় জড়িয়ে যান কিংবা কোচিং করাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে। এ ব্যাপারে খেলোয়ার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে নানা তথ্য।

একসময় জাতীয় ফুটবল দলের নেতৃত্ব দেয়া ডালিয়া আক্তার বলেন, আমি ছাড়িনি, বাধ্য হয়েছি।

মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি ফুটবল ছেড়ে দিয়ে শুরু করেন হ্যান্ডবল খেলা, আর এরপর কোচিং।

ডালিয়া আক্তার বলেন, শেষ যখন অধিনায়কত্ব করি তখন ইন্দো-বাংলা গেমসে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। এর ঠিক পরেই সাফ গেমসের জন্য যে ৩৮ জনের দল ঘোষণা করা হয়, সেখানে আমাকে ডাকাই হয়নি।

জানা গেছে অল্প বয়সেই ফুটবল ছেড়ে কোচিং, রেফারিং বা অন্য ক্রীড়ায় যোগ দেয়া নারীদের তালিকা বেশ লম্বা।

অম্রাচিং মারমা সাফ ফুটবলেও গোল করেছেন, ২৩ বছর বয়সে ফুটবল ছেড়েছেন।
সাবিনা আক্তার জাতীয় দলের নিয়মিত ফুটবলার। জাতীয় দলের খেলা না থাকায় তিনি বাংলাদেশের বয়স-ভিত্তিক দলগুলোর সাথে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তাকে নতুনভাবে খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে তাগাদা দিয়েছে বাফুফে।
 ২৮ বছর বয়সের সাবেক নারী ফুটবলার জয়া চাকমা বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে রেফারির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি ফুটবল ছেড়েছেন ২০১২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে।

বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের ঝড়ে পড়ার তালিকা এমন লম্বা কেন? ডালিয়া আক্তারের সাথে কথা বলে এর কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া গেল।

তিনি জানান, বিগত দশ বছরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন শুধুমাত্র বয়স-ভিত্তিক ফুটবল দল নিয়ে কাজ করেছে।নারীদের লিগ হওয়ার কথা থাকলেও তার কোনো ধারাবাহিকতা নেই।

গত ৫ বছরের বয়সভিত্তিক দলের অন্যতম সফল ফুটবলার তাহুরা খাতুন। তিনি বলেন, খেলোয়াড়রা খেলা ছাড়ে না। তবে একটা ফুটবলার নিজেকে কতদিন কোনো লক্ষ্য ছাড়া উজ্জীবিত রাখবে?

তিনি বলেন, একজন ফুটবলার যখন দেখেন কোনো লিগ নেই, কোনো আয়োজন নেই, তখন তিনি বিকল্প দেখতে বাধ্য হন।

গেলো ১০ বছরে জাতীয় পর্যায়ের চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে মাত্র দু'বার।

ডালিয়া আক্তার বলেন, যেহেতু খেলা নেই তাই ফুটবলারদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হয় - যেটা শেষ পর্যন্ত ক্লাবগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তিনি বলেন, আমার কাছে মনে হয়, সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে শুধু বয়স-ভিত্তিক খেলা চালিয়ে যাওয়াটা অবান্তর।

ডালিয়া আরো বলেন, শুধু অনুর্ধ্ব ১৪ আর অনুর্ধ্ব ১৬তে সর্বোচ্চ ৪০ জন ফুটবলার রয়েছে। কিন্তু একটা দেশে ন্যুনতম চার হাজার থেকে ছয় হাজার ফুটবলার প্রয়োজন।

ডালিয়া আক্তার মনে করেন, গ্রাম থেকে আসা একটা মেয়ের জন্য ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর কোনো পেশাদার মঞ্চ ছাড়া ফুটবল চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়।

তিনি জানান, এ কারণে অনেক অভিভাবক ফুটবলারদের খেলা থেকে নিয়ে যায়।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বক্তব্য: 
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন,  আমাদের এই মুহূর্তে সিনিয়র দল নেই। এরাই সিনিয়র দল হবে। এখানে কিন্তু দু'বছর আগের ফুটবলাররা নেই। তারা এখন অনুর্ধ্ব ১৯-এ আছেন ।

তবে এর আগেও তো ফুটবলার ছিলেন যারা খুব অল্প বয়সে খেলা ছেড়েছেন, তার কারণ কী?

এ প্রসঙ্গে মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন: আমরা এই দলটিকে যে লেভেলে ট্রেনিং করাচ্ছি, আমরা এর আগে আর্থিক কারণে এইভাবে নিয়মিত ট্রেনিং করাতে পারিনি।

গোলাম রব্বানী ছোটনের অধীনেই খেলছে বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক নারী দলগুলো।

বাফুফের এই কর্মকর্তা বলেন, এখন কোচদের অধীনে ক্যাম্পে প্রতিদিন ন্যুনতম তিন থেকে চার বেলা অনুশীলন করানো হয় যেটার সাথে আগের ফুটবলাররা মানিয়ে নিতে পারে না।

তিনি বলেন, এখন যেমন ট্রেনিং হয় দিনে চার বেলা, এমন অনুশীলন আসলে আগের ফুটবলাররা করতে পারেন না, এই কষ্ট সবাই নিতে পারে না। তাদের আমরা ডেকেছিলাম, কিন্তু তারা চালিয়ে যেতে পারেনি।

মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, আবার অনেক ফুটবলার বিয়ে করে আর ফুটবল চালিয়ে যেতে পারেন না। যেহেতু আমরা বাঙালি, বিয়েশাদীর ব্যাপারটা চলে আসে।

পেশাদারিত্বের প্রশ্নে তিনি বলেন, বয়সভিত্তিক আমাদের পুরুষ দলেও কোনো বেতনের ব্যবস্থা নেই। কিন্তু নারী দলের জন্য আমরা বেতন দিচ্ছি।  

৥ সূত্র বিবিসি বাংলা