ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৩:০০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রত্নগর্ভা ভুবনেশ্বরী দেবী: স্বামী বিবেকানন্দের মা

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৯ এএম, ২০ মার্চ ২০১৯ বুধবার

রত্নগর্ভা ভুবনেশ্বরী দেবী স্বামীজির মা

রত্নগর্ভা ভুবনেশ্বরী দেবী স্বামীজির মা

তিনি ছাড়া নরেন দত্ত, স্বামী বিবেকানন্দ হয়ে উঠতেন না। তিনি ছাড়া আমেরিকায় স্বামীজির সর্ব ধর্ম সম্মেলনে বিশ্বের সামনে ইংরেজিতে ভাষণ দেওয়া হয়তো কোনওদিন সম্ভব হয়েই উঠত না। তিনি রত্নগর্ভা শ্রীমতী ভুবনেশ্বরী দেবী, নরেন্দ্রনাথ দত্ত অর্থাৎ বিশ্বের কাছে যিনি স্বামী বিবেকানন্দ নামে পরিচিত তাঁর মা।

ছেলেবেলায় এক মেমের থেকে ইংরেজি শিখেছিলেন। শিশু নরেন জননীর কাছেই প্রথম ইংরাজির পাঠ নিয়েছিলেন। আদরের বিলে যখন বিবেকানন্দ তখন বিদেশি ভক্তদের সঙ্গে ইংরাজিতেই কথা বলতেন ভুবনেশ্বরী দেবী। এমন রত্নগর্ভার জীবন কেটেছে চরম দারিদ্র্যে। ১৮৪১ সালে অভিজাত পরিবারে জন্ম। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সব বদলে যেতে শুরু করে। বদলাননি তিনি। ভেঙে পড়েননি। সন্তানদের দিয়েছিলেন প্রকৃত শিক্ষা। সেই জন্যই হয়তো তিনি রত্নগর্ভা।

বিলে কোনও অন্যায় করলে তিনি বকাঝকা করতেন না। শাস্তিও দিতেন না। একটা কাগজে সেটি লিখে টাঙিয়ে দিতেন। দুরন্ত বিলের পড়াশোনায় মন নেই, মা পড়তেন, বিলে শুনতেন। মা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছিলেন, ‘জীবনে যেটা সত্য বলে জানবে, কখনও সেই আদর্শ থেকে সরে এস না।’ অনুপ্রাণিত বিবেকানন্দ পরে বলেছিলেন, “সত্যের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়, কোনও কিছুর জন্য সত্যকে ত্যাগ করা যায় না।” তিনি তাঁর মায়ের সম্পর্কে আরও বলেছিলেন, “সর্বদা দুর্দশাগ্রস্থ সবসময় স্নেহময়ী । আজকে আমি যা হতে পেরেছি , তা আমার প্রতি মায়ের ভালোবাসার ফলে হয়েছে । মায়ের এই ঋণ আমি কোনওদিন শোধ করতে পারব না । আমি জানি যে , আমার জন্মের আগে মা উপবাস, প্রার্থনা ও নানাবিধ কৃচ্ছ্রসাধন করেছেন , যা আমি পাঁচ মিনিটের জন্যও করতে সক্ষম হতাম না। দুবছর ধরে তিনি এসব পালন করেছেন । আমি বিশ্বাস করি যে ,আমার মধ্যে যেটুকু ধর্মীয় সদ্ভাবনা আছে , তার জন্য আমি মায়ের কাছেই ঋণী । আমি বর্তমানে যা হয়েছি , তাকে পূর্নতা দেওয়ার জন্যই মা আমাকে সজ্ঞানে পৃথিবীতে এনেছেন। আমার মধ্যে যে সদ্গুণ আছে ,তা আমার মায়ের দ্বারা সঞ্চারিত হয়েছে এবং জ্ঞানত ,তাঁর অজান্তে নয় ।”

 জগদীশ্বর একের পর এক সহ্যশক্তির পরীক্ষা নিয়ে গিয়েছিলেন ভুবনেশ্বরীর থেকে। চরম কষ্টেও সে পরীক্ষায় ‘পাশ’ করেছিলেন তিনি। সেই জন্যই তিনি হয়তো এই বাংলারই এক অজানা মহীয়সী নারী। আদরে বড় হয়ে ওঠা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান ভুবনেশ্বরীর সারা জীবন ভরা শুধুই দুঃখের কাহিনীতে। দশ বছর বয়সে বিয়ে। ছটি কন্যা ও চার পুত্রের জননী। অতি অল্প বয়সে বৈধব্য। অপরিসীম অভাব। তারপর কখনও আদরের কন্যাদের আত্মহনন, সন্তানের সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়া। কখনওবা শরিকি মামলায় বিপর্যস্ত হয়ে স্বামীর ভিটেমাটি ছাড়া হওয়া। এখানেই শেষ নয়। চার পুত্রের এক, মহেন্দ্রনাথ হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন, পরে ফিরে আসেন। কনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রনাথ ইংরেজেদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। জেলে গিয়েছিলেন। পরে মায়ের শেষ সম্বল গয়না বিক্রি করে আমেরিকা পাড়ি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। সবকিছু হারিয়ে ফেলেছিলেন তবু লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে যাননি।

১৯১১, সালের ২৫ জুলাই মেনিনজাইটিস রোগে মৃত্যু হয় ভুবনেশ্বরী দেবীর। শেষকৃত্যে শ্মশানে উপস্থিত ছিলেন মেজ ছেলে মহেন্দ্রনাথ ও সিস্টার নিবেদিতা। কনিষ্ঠ ভূপেন্দ্রনাথ তখন আমেরিকায় নির্বাসিতের জীবনযাপন করছিলেন। বিশ্ববন্দিত পুত্র বিবেকানন্দ, তাঁর আদরের বিলে তাঁর ন’বছর আগেই মহাপ্রয়াণের পথে পাড়ি দিয়েছিলেন।

ব্রহ্মানন্দ উপাধ্যায়, বাংলার ১৩১৪-র স্বরাজ পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ভুবনেশ্বরীর একটি ছবি প্রকাশ করে লিখেছিলেন, ” আমরা নরেন্দ্রর মাতার চিত্র দিলাম। নরেন্দ্রর মাতা রত্নগর্ভা। আহা, মায়ের ছবিখানি দেখ। দেখিলে বুঝিতে পারিবে যে নরেন্দ্র মায়ের ছেলে বটে, আর মাতা ছেলের মা বটে ” ।