ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ২:৩৫:০৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

কুকীর্তির প্রতিবাদ ও প্রেম প্রত্যাখ্যানে নুসরাত হত্যা: পিবিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:২৮ পিএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার কু-কীর্তির প্রতিবাদ ও শাহাদাতের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি (১৮) পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনোজ কুমার মজুমদার।

তিনি জানান, নুসরাত জাহান রাফিকে পরিকল্পনা করে আগুন দিয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেছে আসামি নূর উদ্দিন। জবানবন্দিতে তিনি জানায়, অপারেশনে বোরখা পরিহিতের মধ্যে ওই মাদরাসার দুই জন ছেলে আর বাকি দুইজন মেয়ে ছিল।

চারজনের মধ্যে শাহদাত হোসেন শামীম ও শম্পা বা চম্পা নামে যে ছিল তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

পিআইবি জানায়, নুসরাত জাহান রাফির গায়ে অগ্নিসংযোগ করে হত্যার ঘটনার সঙ্গে ১৩ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। আর নুরাতের গায়ে সরাসরি আগুন দেয় যে চারজন তার মধ্যে এক নারীসহ দুই জনকে চিহ্নিত করা গেছে। এই দুইজনের একজন শাহাদাত হোসেন শামীমকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাকে এখনও পিআইবির কাছে হস্তান্তর করা হয়নি।

পিআইবি আরো জানায়, এজাহারভুক্ত সাত জন গ্রেফতার হয়েছে। তারা হলেন- মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা (৫৫), মাদ্রাসার ছাত্র নুর উদ্দিন (২০) ও শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলম (৪৫), জোবায়ের আহম্মেদ (২০), জাবেদ হোসেন (১৯) এ আফতার উদ্দিন। এজাহারে নাম উল্লেখ থাকা হাফেজ আব্দুল কাদের পলাতক আছে। বাকি পাঁচ জনকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া সন্দেহভাজন যে ছয় জন গ্রেফতার আছে তারা হলো কেফায়েত উল্লাহ জনি, সাইদুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম, উম্মে সুলতানা পপি, নূর হোসেন ও আলাউদ্দিন।

পিবিআইয়ের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, গত ৪ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার সঙ্গে কারাগারে দেখা করে কয়েকজন। এদের মধ্যে ছিল শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ আরও কয়েকজন। দেখা করার পর সিরাজের নির্দেশে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শামীম নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয়। কীভাবে হত্যা করা হবে পরে নুরউদ্দিন ও শামীমের নেতৃত্বে তার বিশদ পরিকল্পনা করা হয়।

পিআইবি জানায়, দুই কারণে নুসরাতকে হত্যার পরিকল্পনা করে তারা। অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির মামলা করে নুসরাত আলেম সমাজকে হেয় করেছে বলে মনে করে তারা। আরেকটি কারণ হলো শামীম দীর্ঘদিন ধরে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। নুসরাত তা বারবারই প্রত্যাখ্যান করছিল। এই ক্ষোভ থেকে শামীম তাকে পুড়িয়ে হত্যার প্রস্তাব দেয়। দুই কারণ মিলিয়ে নুসরাতকে হায়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়।

ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ৬ এপ্রিল আলিম পরীক্ষা শুরুর আগে থেকেই ওই মাদ্রাসায় লুকিয়ে ছিল হত্যাকারীরা। সাইক্লোন শেলটারের ছাদে দুটি টয়লেটে লুকিয়ে ছিল তারা। চার হত্যাকারীর মধ্যে যে মেয়েটি ছিল সেই মেয়েই বাকি তিনজনকে বোরকা ও কোরোসিন এনে দেয়। আর চম্পা নামের একটি মেয়ে (পঞ্চম জন) পরীক্ষার হলে গিয়ে  নুসরাতকে বলে তার বান্ধবি নিশাতকে মারধর করা হচ্ছে। এই কথা শুনে নুসরাত দৌড়ে ছাদে যায়। এরপর তার হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।     

হত্যাকাণ্ডে অংশ নেওয়া চারজন এবং নুসরাতকে ডেকে ছাদে নিয়ে আসা চম্পা অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর সবার সামনে দিয়েই মাদ্রাসার মূল গেট দিয়ে পালিয়ে যায়। নুর উদ্দিন ও হাফেজ আব্দুল কাদেরসহ পাঁচ জন আগে থেকেই গেটে পাহারা দিচ্ছিল। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর সবাই গা ঢাকা দেয়।

-জেডসি