ঢাকা, শনিবার ২৭, এপ্রিল ২০২৪ ৫:৫২:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

ঢাকায় এ মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে

বিবিসি বাংলা

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:০১ পিএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার

বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের আট তারিখ পর্যন্ত ঢাকায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ২৯৫। এটি কেবল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এমন রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে এপ্রিলে দুজন রোগী ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছেন।

কিন্তু গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম পাঁচ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৩৩জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক সানায়া তাহমিনা বলেছেন, জরিপে তারা দেখেছেন ঢাকায় বাসাবাড়িতে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার জীবাণুবাহী এডিস মশা জন্মের হার বাড়ছে। এর ফলে এবছর ডেঙ্গুর প্রকোপ আগের চেয়ে বেশি হওয়ার আশংকা রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা বছরে তিনবার এই জরিপ করি: একটা প্রি-মনসুন মানে বর্ষা শুরু হবার আগে, একটি বর্ষা মৌসুমে এবং আরেকটি বর্ষার পরে। মার্চে যে প্রি-মনসুন জরিপ চালিয়েছি তাতে দেখা গেছে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ঢাকায় এখন ২২ শতাংশ।

তিনি আরও বলেন, এই সূচকের মানে হলো, এডিস মশার প্রতি একশটি প্রজনন উৎসের মধ্যে কতটিতে এডিস মশার লার্ভা রয়েছে। এখন যদি ২০টিতে মশার লার্ভা পাওয়া যায় তাহলে সেটাকে বিপজ্জনক বলে ধরা হয়।

সানায়া তাহমিনা বলেন, জরিপে সেটা ২২ শতাংশ, মানে এটা এখন বিপজ্জনক সীমারও বেশি। আর যেহেতু এই জরিপ বর্ষা শুরুর আগে, ফলে বর্ষা শুরু হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার খুবই আশংকা রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জরিপটি চালিয়েছে ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনের ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি জায়গায়।

এসব এলাকার প্রায় এক হাজার বাড়ি ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মীরা। এর মধ্যে নির্মাণাধীন বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং এবং পুরনো ভবনসমূহে এ জরিপ চালানো হয়েছে।

সানায়া তাহমিনা জানান, জুন মাসের প্রথম আটদিনেই ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৬জন রোগী।

তিনি মনে করেন, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বাইরেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরো অনেক মানুষ রয়েছেন, যারা অনেক সময় চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন না।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের ফলাফল ইতিমধ্যেই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকার কী করছে?
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপে দেখা গেছে, দুই সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়ার বেশি ঝুঁকিতে আছে ঢাকা দক্ষিণ।

দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে, উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সাতটি ওয়ার্ডেও এ ঘনত্ব নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কথা শোনা যায়। এজন্য ঢাকার দুটি সিটি কর্পোরেশনে মশা নিধন ও জনসচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন অভিনব কর্মসূচীর কথা শোনা গেছে।

এর মধ্যে এডিস মশা ঠেকাতে গাপ্পী মাছের পোনা ড্রেনে ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন।

এরপর এডিস মশা মারতে পুরুষ এডিস মশা আমদানির পরিকল্পনার কথাও শোনা গিয়েছিল।

কিন্তু এত কর্মসূচীর পরেও কেন ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকানো যাচ্ছে না জানতে চাইলে ঢাকা  দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাইদ খোকন বলন, আমি বলবো ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।

তিনি বলেন, সাধারণত জুন মাস থেকে ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হয়, অগাস্ট-সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত এ মৌসুম চলে। সে অনুযায়ী জুন মাস থেকেই কাজ শুরু হবার কথা। ঈদের জন্য কিছুটা দেরি হয়েছে। এখন খুব দ্রুতই আবার কাজ শুরু হচ্ছে। আমরা সতর্ক আছি।

মশা নিধন এবং মশার ওষুধের মান নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ও অভিযোগ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাইদ খোকন বলেছেন, মশা ১০০ ভাগ নির্মূল হয়তো করা সম্ভব হবে না, তবে আমরা চেষ্টা করছি। আর মশার ওষুধের মান নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন থাকলেও আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনেই ওষুধ দিচ্ছি।

এদিকে  ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর জন্য মশা নিধনে ব্যবস্থা নিতে মেয়রদের নির্দেশনা দিয়েছিল হাইকোর্ট।