ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১:১৯:৩৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মেঘ বলেছে যাবো যাবো: আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:০৬ পিএম, ১০ জুন ২০১৯ সোমবার

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

আহমেদ মুশফিকা নাজনীন

যেদিন ভাবি তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরবো। সেদিনই কেন জানি প্যাচটা লাগে। রাজ্যের কাজ আর ঝামেলা এসে যোগ হয় সময়ের সাথে। তখন কিসের আর তাড়াতাড়ি ফেরা, সবচেয়ে বেশি দেরী হয় সেদিনই। গত ৩ জুনও তাই হলো। তাড়াতাড়ি ফেরা হলো না। বাসায় যখন আসলাম তখন বাজে ৩টা ৫। আমাদের গাড়ি ছেড়ে যাবে ৩টায়। যত দ্রুত সম্ভব দরজা জানালা লাগিয়ে রেডি হচ্ছি। এমন সময় দিনাজপুর থেকে এলাে লিচু। আমরা থাকব না পাঁচ দিন। বসে গেলাম লিচু বের করে ফ্রিজে রাখতে। 

আমাদের দেরী দেখে মুখ গম্ভীর করে বাসায় এলো মেজ বোন। ওরা সব রেডি। আমরা তখনও রেডি হতে পারিনি। দেরী দেখে ও কিছুটা বিরক্ত হয়ে চলে গেল। দুর্গার মতো দশ হাতে দ্রুত কাজ করতে লাগলাম। 

একদিকে মুখ চলছে। অন্যদিকে যেন দশ হাত। গিজার অন করলাম এক বাথরুমে। টেনশনে শাওয়ার নিলাম আরেক বাথরুমে। তারপর, রুপি, সানগ্লাস, স্যান্ডেল বাসায় ভুলে রেখে ৩.৪০ মিনিটে ৭জনের দলটা ঢাকা ছাড়লাম। গন্তব্য মেঘের দেশ শিলং।

আহা মেঘ! চলিষ্ণু মেঘ!
শিলং-এর আকাশে মেঘ, রাস্তায় মেঘ। পাশে মেঘ, সামনে মেঘ। নরম মেঘ। ঘন মেঘ। সাদা পেঁজা তুলোর মত মেঘ। কাঁচের মতো মেঘ। কত যে মেঘের রুপ! আর কি তাদের দাপট। এই দেখা দেয়, এই মিলিয়ে যায়। এই ছুঁয়ে যায়। ওই আকাশে চলে যায়। মনে হলো আমি যেন মেঘ রাজ্যের এক প্রজা। মেঘের মর্জিমতো চলতে হবে আমাকে। তাই সই! মেঘ রাজা বলে কথা। 

এর মাঝে শুরু হলো টিপটিপ বৃষ্টি। ডাউকি বর্ডারে উমগট নদীর স্বচ্ছলতা নিয়ে গল্প শুনেছিলাম। ছবিও দেখেছি। তবে আমরা দেখলাম ঘোলা পানি। বৃষ্টির কারণে নদীর পানি লালচে হয়ে গেছে। ঘাড় উচিয়ে দেখলাম ওপাশে সিলেটের জাফলং। নদী প্রায় ভরাট। বালি আর মানুষে ভরা আমার দেশ। মন বিষন্ন হয়ে গেল। 

ইস! ইস! শব্দে পাইন, ওক আর চিকন বাঁশের ঝাঁড় পেরিয়ে আমরা ছুটে চলি। যাই মাওলিন গ্রামে। মেঘ ছুঁয়ে যায় আমাদের। লিভিং রুট ব্রিজ বা শিকরের ব্রীজ দেখে মুগ্ধতা বাড়ে। 

পাথুরে রাস্তায় শোনা কথা ১৯৪১ সালে বৃটিশরা করে যায় এ ব্রীজ। একটা ছোট্ট শিকর আর পাহাড়ী ঝরনাকে কেন্দ্র করে এত সুন্দর পর্যটন স্পট করা যায়। ভাবা যায়না। আসলে ওরা ভাবতে পারে। আমরা পারিনা। আমরা বন খাই, নদী খাই, গাছ খাই, সমুদ্র খাই, পাথর খাই, পাহাড় খাই। আমরা হাঁউ মাঁউ করে সব খাই। খেয়ে খেয়ে আমাদের আঁশ মেটেনা। কদিন পর মেঘ খাবো কি? 

যত পথে যাই তত মুগ্ধতা বাড়তে থাকে। ছোট ছোট ঘাসও এখানে যেন নিরাপদ। কেউ ওকে মাড়িয়ে যায় না। ওর সব সৌন্দর্য নিয়ে ও ফুটতে থাকে। লাল, হলুদ, বেগুনী, সাদা তারার মতো সব ফুল। কাকে ছেড়ে কাকে দেখি। পথে পথে বিছানো সব বেগুনী রঙের ফুল। পাথরের গায়ে গায়ে ফুটে আছে তারা। এঁকেবেঁকে চলা পাহাড়ী পথ। 

অমিত লাবণ্যের দেখা হয়েছিলো বুঝি  এখানেই। সেই অমিত! অসম্ভব রোমান্টিক এক স্বপ্ন তরুণ। যার জন্য হাজার বছর বুঝি অপেক্ষা করা যায়। পথ বেঁধে দিলো বন্ধনহীন গ্রন্থি, আমরা দুজন চলতি হাওয়ার পন্থী। তবে লাবন্যকে খুঁজিনা। সে তো আছে মনে মনে। হাওয়ায় হাওয়ায় শেষের কবিতার লাইন আওড়াই :
রঙিন নিমেষ ধুলার দুলাল
পরানে ছড়ায় আবীর গুলাল,
ওড়না ওড়ায় বর্ষার মেঘে 
দিগঙ্গনার নৃত্য;
হঠাৎ-আলোর ঝলকানি লেগে
ঝলমল করে চিত্ত।

৥ আহমেদ মুশফিকা নাজনীন : সাংবাদিক