ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬, এপ্রিল ২০২৪ ২৩:৩৯:০১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রাজধানীতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৫৭ পিএম, ২৫ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার

রাজধানীতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। প্রতিদিনই ডেঙ্গু জ্বরের নতুন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নেওয়া পদক্ষেপ, দুই সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম, কিংবা রোগ পরবর্তী উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা কোনো কিছুতেই যেন কমছে না এবারের ডেঙ্গুর আঘাত। 

সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সমন্বয় না থাকার কারণেই চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে সাধারণ মানুষের অসচেতনতাই এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী।

ঢাকঢোল পিটিয়ে নানা আয়োজন, মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনের নানা কর্মসূচি কিংবা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ কোনো কিছুই যেন তোয়াক্কা করছে না এডিস মশা।

স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত এক মাসে হাসপাতালে শনাক্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। ঢাকা নগরীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে মে মাসে যেখানে ডেঙ্গু রোগী ছিল ২৪৯ (এর মধ্যে ২ জন মারা যায়), সেখানে ১৭ জুনে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৫৮ জনে। গত সাত দিনে এ সংখ্যা বেড়েছে আরো দ্রুত।

ঢাকার হাসপাতালগুলোতে জানুয়ারি থেকে জুনের ৮ তারিখ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ছিল ২৯৫। পরের ১০ দিনে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৫৮ জনে। গত বছরের এই সময়ের সঙ্গে তুলনা করলে এই সংখ্যা যথেষ্ট আশঙ্কার। 

গত বছরের প্রথম পাঁচ–ছয় মাসে সরকারি হাসপাতালে আসা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১৩৩। চিকিৎসকেরা মনে করেন, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি রোগীর বাইরেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত আরও অনেক মানুষ রয়েছে, যারা হাসপাতালে ভর্তি হয় না।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিচালক অধ্যাপক উত্তম কুমার বলেন, 'গ্রুপ-এ যারা আসে, হালকা জ্বর তাদের বাইরে থেকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেই, গ্রুপ-বি যারা আসে পেট ব্যথা, বমি হচ্ছে ইত্যাদি তাদের আমরা ভর্তি করাই। গ্রুপ-সি আরো মারাত্মক।'

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ বলেন, 'নিজেদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা এম এম আকতারুজ্জামান বলেন, 'যৌথ উদ্যোগেই এটা হতে হবে। সিটি করপোরেশনই এটার সঠিক অথোরিটি।' 

এদিকে সিটি করপোরেশনও কথা বলছে নিজের গা-বাঁচিয়ে।

দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শেখ সালাউদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এটা ধ্বংস করেনি বা করেছে আমি জানিনা। কিন্তু আমরা ফিজিক্যালি যে বাড়িতে পাওয়া গিয়েছে, সেখানে আবার গিয়েছি।' 

এদিকে ডেঙ্গু রোগীর যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকারি বেসরকারি দশটি হাসপাতালকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

জুন মাসের শুরু থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা; আক্রান্তদের প্রায় সবাই ঢাকার।

রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. সামিয়া তাহমিনা বলেন, বর্ষা এডিস মশা বিস্তারের উপযোগী সময়। এ কারণে এ সময় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ।

তিনি বলেন, এবার এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পরিমাণ গত বারের চেয়ে বেশি। প্রচণ্ড গরমের পর এখন বাতাসে আর্দ্রতা বেড়েছে। জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মশা ডিম পাড়ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ডিম ফুটে বাচ্চা খুব দ্রুত বের হচ্ছে।

এর আগে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ৩ থেকে ১২ মার্চ ১০ দিন মশার উৎস নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছিল। তখন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার ৯৭টি ওয়ার্ডের ১০০টি স্থানের ৯৯৮টি বাড়ি পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। ওই জরিপে ডিএসসিসির ৮০ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক বা বিআই (ব্রুটাল ইনডেক্স) সবচেয়ে বেশি ৮০ পাওয়া গিয়েছিল।