এক বৃদ্ধার আকুতি এবং দেশভাগ : ঝর্ণা মনি
ঝর্ণা মনি
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৮:২৮ পিএম, ৬ জুলাই ২০১৯ শনিবার
‘আমি এদেশের নয় গো, আমি তোমাদের। আমি বাংলাদেশের। আমি চট্টগ্রামের মেয়ে। আমার শ্বশুরবাড়িও চট্টগ্রামে। পটিয়াতে। তুমি আমার দেশের মেয়ে। আসো আমার বুকে আসো। এই কে আছ, আমাকে একটু বসিয়ে দাও’- হৃদয়নিংড়ানো সব আবেগ নিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধা।
জানালেন, ১৯৪৭ সাল কেড়ে নিয়েছে তার দেশ। তখন তিনি কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের শিক্ষার্থী। দেশভাগ হয়ে গেলো। তিনি পড়ে রইলেন ওপার বাংলায়। কিন্তু মন পড়ে রইলো চট্টগ্রামের পটিয়ার পাহাড়, সবুজঘেড়া বাড়িতে।
সুদীর্ঘ সাত দশকে গঙ্গা-যমুনার অনেক জল গড়িয়েছে। বিখ্যাত আইনজীবী স্বামীকে পটাশিয়াম সায়েনায়েড খাইয়ে খুন করা হয় পশ্চিমবঙ্গের এক চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ হত্যা মামলায়। ভেঙে পড়লেও শক্ত হাতে হাল ধরে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিন সন্তানকে। অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে শিক্ষকতা করেছেন।
কিন্তু ‘বাংলাদেশ’ নাম শুনলেই কাঁন্না সামলানো কষ্টকর হয়ে পড়ে। এখানে যে পড়ে আছে তার আত্মা। মা, মাটি আর শৈশব-কৈশোরের সোনাঝরা দিনগুলো। তাইতো আমার বৌদি যখন পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো, ‘মাসীমা, আমার ননদ, বাংলাদেশের। সাংবাদিক। ঢাকায় থাকে।’
মাসীমার চোখগুলো তীক্ষ হয়ে ওঠলো। জৈষ্ঠ্যের খররৌদ্র মাখা চোখে তখন শ্রাবণ ধারা। বুকের ভেতরটা মুছড়ে উঠলো। অশীতিপর বৃদ্ধার হাহাকার স্পর্শ করলো আমার হৃদয়।
একটু আগে দাদাভাই জানালো, মাসীমা আর নেই। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরুলো। হায় দেশভাগ!
ঝর্ণা মনি: সিনিয়র রিপোর্টার, ভোরের কাগজ।