ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩১:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শিশু ধর্ষণ রোধে ঘাটতি রয়েছে দেশে

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৪২ পিএম, ৮ জুলাই ২০১৯ সোমবার

দেশে শিশু ধর্ষণ বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকহারে। প্রায় প্রতি দিনই কোন না কোন শিশু ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। এমন কি ধর্ষকের হাতে প্রাণও দিতে হচ্ছে কোন কোন শিশুকে।

বাংলাদেশে ধর্ষণের হাত থেকে শিশুদের রক্ষার জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোন ব্যবস্থা নেই বলে মনে করছেন ঢাকায় জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহিরিন।

বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে নানা কথা বলেছেন তিনি। উইমেননিউজ২৪ডটকম-এর পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো। 

শাবনাজ জাহিরিন বলেন, "ধর্ষণ রোধ করে শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য যে ধরণের অবকাঠামো, লোকবল বা সেবা দরকার সেগুলো বাংলাদেশে এখনো অনেক কম।"

ঢাকার ওয়ারিতে গত শুক্রবার রাতে সাত বছরের এক শিশুর মরদেহ খুঁজে পাওয়ার পর, পুলিশ জানায়, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তাকে। 

জাহিরিনের মতে, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ করে কমিউনিটি লেভেলে যে ধরণে সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন সেগুলো এখনো কার্যকর নয়।

তিনি বলেন, "কিছু সার্ভিস আছে বা লোকজন আছে। কিন্তু শিশুদের বিষয় বা এধরণের ঘটনাকে কেউই সেভাবে আমলে নেন না।"

তিনি আরও বলেন,"আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমের পক্ষ থেকে সোশ্যাল ওয়ার্কারদের থাকার কথা, কমিউনিটি লেভেলে। প্রবেশন অফিসারের একটা বিশেষ দায়িত্ব আছে। কিন্তু অনেক জায়গায়ই তারা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।"

তিনি বলেন, "এরা ভালোভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না এবং শিশুদের বিষয়গুলো যেভাবে দেখা উচিত বা কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকা উচিত সেগুলো এখনো ওইভাবে আমাদের দেশে গড়ে উঠেনি।"

উন্নত বিশ্বে স্কুলে শিশুদের নিরাপত্তার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়ে থাকে যে সেসব দেশে কোন স্কুলে কোন শিশুর সাথে দেখা করতে হলে আগে তার একটা ছবি তোলা হয়, একটা কার্ড দেয়া হয় এবং কেউ সাথে করে স্কুলের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। যাতে অন্য শিশুদের সমস্যা না হয়।

বাংলাদেশে ফ্ল্যাট বাসায় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের রক্ষায় এ ধরণের কোন ব্যবস্থা রয়েছে কিনা?

এমন প্রশ্নের উত্তরে শাবনাজ জাহিরিন বলেন, "এ ধরণের সিস্টেম শহরাঞ্চলে কিছুটা দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে যেসব প্রাইমারি স্কুল রয়েছে সেখানে একেবারেই নেই।"

তিনি বলেন, "ফ্ল্যাট বাড়ি বা অন্য জায়গাগুলোতে পারিবারিক যে মেকানিজম যেমন শিশু কোথায় যাবে, কখন যাবে, সাথে কে যাবে - এগুলোর বিষয়ে তেমন কোন মেকানিজম নেই। আর উন্নত বিশ্বের প্রতিটা দেশে একটা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগ থাকে। যার কর্মীরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর করে। আমাদের দেশেও সেরকম একটা সিস্টেম থাকা উচিত।"

জাহিরিন বলেন, "এটি আমাদের আইনে থাকলেও এর জন্য কোন বাজেট বরাদ্দ হয় না, দক্ষ লোকবলও নেই, যারা এগুলো করবে।"

ধর্ষণ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে - এ বিষয়ে শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহিরিন স্কুল পর্যায়ে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর পরামর্শ দেন।

মেয়েশিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুকেও ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বিরোধী মূল্যবোধ শেখাতে হবে যাতে ভবিষ্যতে সে এ ধরণের আচরণ না করে।

ধর্ষণ রোধে মনিটরিং বা নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানান তিনি।

বারবার এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য এ ঘটনায় বিচার না হওয়াকে দায়ী করেন তিনি।

তিনি বলেন, "বড় বিষয় হচ্ছে যে, মামলা গুলোর দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শাস্তি হচ্ছে না । মামলা হচ্ছে, গ্রেফতার হচ্ছে কিন্তু সেগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। যেটা দেখে আরেক জন ভয় পাবে"।

তবে ধর্ষণকারীরা ধর্ষণের আগে আইনের চিন্তা করে কিনা বা আইন দিয়ে ধর্ষণ রোধ সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নও উঠে আসে বিভিন্ন সময়।

এ বিষয়ে জাহিরিন বলেন, "কিছুটা হলেও সম্ভব আমার মতে। কারণ তারা দেখছে যে তারা পার পেয়ে যাচ্ছে বা কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না খুঁজে পাবে না বা তাকে পুলিশে ধরতে পারবে না। এরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গি চলে আসছে।"

তিনি বলেন, "এর ফলে এক ধরণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চলে আসে। যখন তারা দেখে যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ইচ্ছা নেই বা তারা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে বা তাদের পেছনে কোন বড় ভাইয়ের হাত আছে।"