ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১৪:০৪:৩১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

অ্যামাজনে আগুন লাগার নেপথ্যে রহস্য!

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৯ পিএম, ২৭ আগস্ট ২০১৯ মঙ্গলবার

ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট

পৃথিবীতে জীবনধারণে অত্যাবশ্যক অক্সিজেনের একটি বড় অংশ আসে দক্ষিণ আমেরিকার অ্যামাজন বনাঞ্চল থেকে। অ্যামাজনকে ‘পৃথিবীর ফুসফুস’ও বলা হয়ে থাকে। সাথে ক্ষতিকর কার্বন ডাই অক্সাইড শুষে নিয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ঠেকাতে অপরিসীম ভূমিকা রাখে অ্যামাজন। প্রায় ৩০ লাখ প্রজাতির প্রাণি ও উদ্ভিদ এবং ১০ লাখ আদিবাসীর আবাসস্থল অ্যামাজনের অস্তিত্ব এখন হুমকিতে। গত তিন সপ্তাহ ধরে আগুনের লেলিহান শিখা প্রতিনিয়ত গ্রাস করে চলেছে বনভূমি।

পৃথিবীর মোট অক্সিজেন চাহিদার ২০ শতাংশ আসে অ্যামাজন থেকে। আর আগুনের লেলিহান শিখায় এই এভাবে বনাঞ্চল পুড়ে ছাড়খার হয়ে গেলে শংকায় পড়বে পৃথিবীর জলবায়ু। ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, এই দাবানল এক অশনি সঙ্কেত; এক ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের ইঙ্গিতবাহী।

এদিকে, অ্যামাজনে চলতি বছরের রেকর্ড আগুন লাগার কারণে ‘আন্তর্জাতিক সংকট’ বলে অভিহিত করেছে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। 

অ্যামাজন বনাঞ্চলে আগুন লাগা নিয়ে ইতিমধ্যে নড়েচড়ে বসেছে পরিবেশবিদসহ বিশ্লেষকরা। কি কারণে বছর বছর অ্যামাজনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে তা খতিয়ে দেখেছে তারা। তারা বলছে, আর কিছুই নয়; অবৈধ উপায়ে সোনার খনির খোঁজ করাই অ্যামাজনে আগুন লাগার পেছনে দায়ী।

৯ দেশে বিস্তৃত অ্যামাজনের ২৪৫টি এলাকায় দুই হাজার ৩১২টি অবৈধ খনি আছে বলে জানিয়েছে অ্যামাজন সোশিও-এনভায়রনমেন্টাল। এই সব খনি থেকে সোনা উত্তোলনের লোভে আর বাণিজ্য বিস্তারে অ্যামাজন ঘিরে বেড়ে উঠেছে বহু সভ্য জনপদ। আর এভাবেই দিনে দিনে অবৈধ খনি বাণিজ্যের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে অ্যামাজনের গহিন অরণ্য।

আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যম জানায়, ব্রাজিলের অ্যামাজন বনাঞ্চলে প্যারা স্টেটের ট্যাপাজোস নদীর তটজুড়ে শত শত কুড়েঘর স্থাপন করা হয়েছে। আর সেখানে থাকছেন সোনার খনি খননের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা।

অধিকাংশ প্রকৃতিবিদ আগুনের জন্য ব্রাজিলের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বোলসেনারোর বিভিন্ন নীতিকে দায়ী করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, কৃষি জমি তৈরি করতে কৃষকদের আগুন লাগাতে প্ররোচনা দিয়েছেন ব্রাজিলীয় প্রেসিডেন্ট। নির্বাচনের সময় বনাঞ্চল ধ্বংসকারীদের জরিমানা কমানোর পক্ষে প্রচারও চালিয়েছিলেন। তবে, আগুন লাগানোর দায় স্বীকার না করে উল্টো পরিসংখ্যানকে অতিরঞ্জিত বলেছেন বোলসেনারো।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনের প্রকাশ, নির্বাচনের আগে সংরক্ষিত আদিবাসীদের এলাকায় খনি খননকে বৈধ করার কথা দিয়েছেন বোলসেনারো। খনি খনন আর খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ আদিবাসীদের ভূমি আইনের মধ্য দিয়ে উন্মুক্ত করে দেয়ার অঙ্গীকার করেন তিনি।

রিপোর্টে আরো বলা হয়, আশির দশকে একটি অবৈধ সোনার খনিতে কাজ করতো বোলসেনারো। সেই কারণে অবৈধ খনি ব্যবসায়ীদের সাথে সুসম্পর্ক আছে তার। প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তাদের সমর্থন কাজে লেগেছে তার। বোলসেনারো সরকারের সাথে সোনার খনির সন্ধানকারীদের মিত্র সম্পর্ক আছে।

সম্প্রতি এক লাইভেও বোলসেনারো বলেন, আমি যতদূর উদ্বিগ্ন; তাতে যদি একজন আদিবাসী তার নিজের ভূমি থেকে খনিজ পদার্থ উত্তোলন করতে চান; তাহলে তিনি তা পারবেন।

ক্লার্ক ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় বলা হয়, অ্যামাজন খনি ও তেল; গ্যাস উত্তোলনের ঝুঁকির মুখে আছে। এছাড়া, আগামী দুই দশকে এখানে বড় ধরনের অবকাঠামোগত প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এদিকে, অ্যামাজন জঙ্গলের ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে ব্রাজিলের সাথে বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তিতে অনুমোদন না দেয়ার হুমকি দিয়েছে ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট বোলসেনারো জলবায়ু ইস্যুতে নিজের অবস্থান বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ফরাসী প্রেসিডেন্ট। আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও হেলিকপ্টার ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে ব্রাজিল সরকার। এ ঘটনায় ক্ষোভ, নিন্দা ও দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ।

এছাড়া, অ্যামাজনের আগুনকে আন্তর্জাতিক সঙ্কট বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও জার্মান চ্যান্সেল অ্যাঙ্গেলা মার্কেল। ফিনল্যান্ডের অর্থমন্ত্রী ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস আমদানি বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সুপারিশ করেছেন। পরিবেশবাদী বিভিন্ন সংগঠন ব্রাজিলজুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। লন্ডন, বার্লিন, মুম্বাই ও প্যারিসে ব্রাজিল দূতাবাসের বাইরেও বিক্ষোভ হয়েছে। সবার চাওয়া একটাই, নিভে যাক আগুন, বেঁচে থাকুক অ্যামাজন।

-জেডসি