ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ৩:৩৭:২৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

আজ বাইশে শ্রাবণ, কবিগুরুর প্রয়াণ দিবস

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৯:১৩ পিএম, ১৫ আগস্ট ২০১৮ বুধবার

`তখন কে বলে গো সেই প্রভাতে নেই আমি/সকল খেলায় করব খেলা এই আমি আহা/নতুন নামে ডাকবে মোরে/বাঁধবে নতুন বাহুর ডোরে/আসব যাব চিরদিনের সেই আমি।` চিরশাশ্বত সত্য হয়ে উঠেছে কবিগুরুর নিজের লেখা কবিতা।

 

এমনিভাবে প্রতিদিন নব নব রূপে ফিরে আসেন তিনি চিরায়ত বাংলায়-চিরায়ত বাঙালির জীবনে। চলে যাওয়ার ৭৭ বছর পার হলেও রবীন্দ্রনাথ অনির্বাণ শিখা হয়ে জ্বলছেন বাঙালির সংগ্রামে-আন্দোলনে, সাংস্কৃতিক জীবনযাপনে,মনন থেকে প্রজ্ঞায়।

 

কালের পরিক্রমায় আজ আবারও ফিরে এসেছে সেই বাইশে শ্রাবণ যেদিন পুরো বাঙালি জাতিকে কাঁদিয়ে বেদনায় ভাসিয়ে বিদায় নিয়েছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ পালন করা হচ্ছে তার ৭৭তম মহাপ্রয়াণ দিবস। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে ৮০ বছর বয়সে মৃত্যু ঘটে তার। 

 


রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ, চিত্রশিল্পী-গল্পকার। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে ‘তত্ববোধিনী পত্রিকা’য় তার প্রথম লেখা কবিতা ‘অভিলাষ’ প্রকাশিত হয়। অসাধারণ সৃষ্টিশীল লেখক ও সাহিত্যিক হিসেবে সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতিলাভ করেন। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত ও পাঠ্য সূচিতে সংযোজিত হয়েছে। ১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ কবিকাহিনী’ প্রকাশিত হয়। এ সময় থেকেই কবির বিভিন্ন ঘরানার লেখা দেশ-বিদেশে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। ১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার কবিতার বই ‘গীতাঞ্জলী’। এই বইয়ের জন্য কবি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।




লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে  ব্রক্ষ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে কবিগুরু সেখানেই বসবাস শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য ‘শ্রীনিকেতন’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বিশ্বভারতী’ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে কুষ্টিয়ার শিল্াইদহে,পাবনা,নাটোরে এবং উরিষ্যায় জমিদারীগুলো তদারকি শুরু করেন কবি। শিলাইদহে তিনি দীর্ঘদিন অতিবাহিত করেন। এখানে জমিদার বাড়িতে তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে সপরিবারে কবি বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। কবি বিশ্বভ্রমণ করেন বারো বার। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমন করেন।




কবির ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাখ ঠাকুর মূলত কবি। তার মৌলিক কাব্যগ্রন্থ ২৫টি। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা সংগীতেও রয়েছে। তিনি দুই হাজার গান রচনা করেন। অধিকাংশ গানে সুরারোপ করেন। তার সমগ্র গান ‘গীতবিতান’ গ্রন্থে রয়েছে। কবির লেখা‘ আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। জীবিতকালে তার প্রকাশিত মৌলিক কবিতাগ্রন্থ হচ্ছে ৫২টি, উপন্যাস ১৩, ছোটগল্প’র বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি, নাটকের বই ৩৮টি। কবির মত্যুর পর ৩৬ খন্ডে ‘রবীন্দ্র রচনাবলী’ প্রকাশ পায়। এ ছাড়া ১৯ খন্ডে রয়েছে ‘রবীন্দ্র চিঠিপত্র। ’১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত কবির আঁকা চিত্রকর্ম’র সংখ্যা আড়াই হাজারেরও বেশি। এর মধ্যে ১৫৭৪টি চিত্রকর্ম শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। কবির প্রথম চিত্র প্রদর্শনী দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উদ্যোগে ১৯২৬ সালে প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয়।

 


রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও গানের বাণীতে সৃষ্টিকর্মের উৎস হচ্ছে ভাবগভীরতা, আত্মচেতনা, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম ও জাগতিক সৌন্দর্য চেতনার আরাধনা করা। রয়েছে ভাব, ভাষা, তাল ও ছন্দের লয়। তার গদ্যভাষাও শ্রতিমধুর। তার রচনাসমগ্রে রয়েছে, বাঙালির মননবোধ ও ঐতিহ্য সাধনার ধারা। তার এই সব বহুমাত্রিক প্রতিভা সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশের সাহিত্য ও শিল্পের প্রায় সবক`টি শাখাকে। মুক্তিযুদ্ধসহ প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তার সাহিত্য-সঙ্গীত। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যের আবেদন ছিল বিশ্বজনীন। 

 


মানবতাবাদী রবীন্দ্রনাথ জমিদার পরিবারে জন্ম নিলেও গ্রামীণ সমাজের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে কৃষির উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেন। বাংলায় আলু, ভুট্টা ইত্যাদি চাষের সূচনা ঘটে তারই উদ্যোগে। দরিদ্র কৃষকদের ঋণ দেওয়ার লক্ষ্যে নোবেল পুরস্কারের অর্থে কৃষি ব্যাংকের কাজ শুরু করেন তিনি। মানুষের ওপর দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল কবি রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন, `মানুষের প্রতি বিশ্বাস হারানো পাপ`। 

 



দিবসের কর্মসূচি : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ সোমবার বিকেল চারটায় আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এতে ‘আজকের বিশ্বে রবীন্দ্রসৃজনের প্রাসঙ্গিকতা ’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করবেন নাট্যজন আতাউর রহমান। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জমান। পরে রয়েছে গীতিনৃত্যালেখ্য ‘ওই পোহাইলো তিমির রাতি।’ গীতিনৃত্যালেখ্য পরিবেশন করবে রক্তকরবী ও শুদ্ধ সংগীত চর্চা কেন্দ্র। এ ছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি বিকেলে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন দিবসটি পালনের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিভিন্ন টিভি চ্যানেলসহ দেশে গণ মাধ্যমগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার ও প্রকাশ করবে।