ঢাকা, মঙ্গলবার ১৯, মার্চ ২০২৪ ১০:২৫:০৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএনডিপিকে যে আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু তিনদিনের সফরে সুইডেনের রাজকন্যা ঢাকায় গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু শিশু শিক্ষার বিকাশে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

ইংরেজী উচ্চারণে যারা বাংলা বলে তাদের প্রতি করুণা: প্রধানমন্ত্রী

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৭ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শুক্রবার

প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে জাতির পিতার একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন

প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে জাতির পিতার একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুদ্ধভাবে বাংলা ভাষা চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মাটিতে থেকে যারা বাংলা ভাষা ভুলে গিয়ে বাংলা ভাষার মতো বাংলা বলতে পারে না, ইংরেজী অ্যাকসেন্টে কথা বলে, তাদের প্রতি করুণা করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ব এখন বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত হয়েছে। এখানে বসবাস করতে গিয়ে, অন্যদের সাথে যোগাযোগে, ব্যবসায় এবং তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে আমাদের অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে। তবে, মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়।’

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অমর একুশে ফেব্রুয়ারী এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক ছেলে-মেয়ে বাংলা ভাষায় কথা বা নিজের এলাকার কথা বলাটা (আঞ্চলিক ভাষা) ভুলে গিয়ে কেমন যেন ইংরেজী অ্যাকসেন্টে বাংলা বলার চেষ্টা করে। মনে হচ্ছে বাংলা বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে। যারা এই দেশেই লেখাপড়া শিখেছে।’

তিনি এ সময় ’৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকান্ডকে সমগ্র জাতির মতো তাঁদের ব্যক্তি জীবনের দুর্ভাগ্য উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পর দেশে আসতে না পারায় তাঁদের ছেলে-মেয়েদের বিদেশে থেকে বিদেশের স্কুলে পড়তে হলেও তাঁরা দুই বোন (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) সবসময় চেষ্টা করেছেন তাঁদের ছেলে মেয়েরা যেন সঠিকভাবে বাংলা বলতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ও রেহানা সবসময়ই ছেলে-মেয়েদের বাংলা শেখাবার চেষ্টা করেছি এবং ঘরে বাংলায় কথা বলেছি। কারণ বাংলা ভাষাটা শিখতে হবে।’

নিজেও ভালভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে গোপালগঞ্জ এবং ঢাকার ভাষা মিলিয়েই কথা বলে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ছোটবেলায় ঢাকায় চলে এসেছি সেই ভাষার একটা প্রভাব, আর টুঙ্গীপাড়ায় জন্মেছি তাঁর একটা প্রভাব-সব মিলিয়েই বলি, যার মধ্যে কোন লজ্জা নেই।’
বন্ধবন্ধু কন্যা জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘জাতির পিতা সেই ভাষণে গোপালগঞ্জের শব্দ বলে গেছেন অকাতরে যা মানুষের ভেতর একটা আবেদন সৃষ্টি করেছিল।’

‘জাতির পিতা দ্রুত মানুষের হৃদয়ে, মানুষের কাছে পৌঁছাতে পেরেছিলেন। মানুষের কথা বলতে পেরেছিলেন। সেটাই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে তিনি যে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশের মানুষ সেটা কিন্তু গ্রহণ করেছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে একটি ট্রাষ্ট ফান্ড গঠন করে সেখান থেকে ফেলোশিপ প্রদানেও তাঁর সরকারের উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানান। যাতে সরকার পরিবর্তন হলেও এটি আর কেউ বন্ধ করতে না পারে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা.দীপু মনি। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং হেড অব দ্যা অফিস এন্ড ইউনেস্কো রিপ্রেজেন্টেটিভ মিজ বিয়ট্রিজ কালডুন বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন স্বাগত বক্তৃতা করেন এবং আন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. জিনাত ইমতিয়াজ আলী ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আন্তজাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে বিশ্বের সকল মাতৃভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করায় বিভিন্ন দেশের কোমলমতি শিশুরা নিজস্ব মাতৃভাষায় অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা, অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রীর কন্যা অটিজম আন্দোলনের অগ্রপথিক সায়মা ওয়াজেদ হোসেন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, মন্ত্রি পরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, সরকারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিদেশি কূটনীতিক এবং মিশন প্রধানসহ উন্নয়ন সহযোগি সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ,একুশে পদক বিজয়ী, কবি, সাহিত্যিক, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক এবং আমন্ত্রিত অতিথিগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

সমবেত কন্ঠে সকলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয় এবং এরপরই অমর একুশের গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারি বাজানো হয়। শহীদদের স্মরণে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিটিউটে পৌঁছেই এর সম্মুখ দেওয়ালে জাতির পিতার একটি ম্যুরাল উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর অ্যাসাইমেন্ট অফিসার আরিফুজ্জামান নূরুন্নবী যার ভাস্কর।

এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের আন্তর্জাতিক ধ্বনিমূলক বর্ণমালায় (ইন্টারন্যাশনাল ফোনেটিক অ্যালফাবেট-আইপিএ) লিপান্তর এবং ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের ভাষণ ইশারা ভাষায় ও ব্রেইল লিখন-বিধিতে প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।

অনুষ্ঠানের শেষে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনষ্টিউট ভবনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় কমিটির কার্যালয় পরিদর্শন করেন।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন প্রসংগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই এর ইন্টারেস্টের টাকা থেকে ভাষা শিক্ষার জন্য ফেলোশিপ চালু করা হবে। কোন কোন ভাষা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে শেখানে হবে ইনস্টিটিউট সেই সিদ্ধান্ত নেবে। যারা শিখবে তারা টাকা দিয়ে পড়বে। পাশাপাশি ফেলোশিপ থেকেও কিছু টাকা দেয়া হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব এখন বৈশ্বিক গ্রাম। এখানে অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ, ব্যবসা করা, অন্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি জানতে অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়।

একুশে ফেব্রুয়ারি জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি পাওয়ার পর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছর মেয়াদের শেষ দিকে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনানকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা এই ইনস্টিটিউটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও ২০০১ সালের সরকার পরিবর্তনে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে ইনস্টিটিউটের অবশিষ্ট কাজ শেষ করা হয়।

সেই প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০০১ সালে যারা ক্ষমতায় এসেছিল (বিএনপি) তারা এই ইনস্টিটিউটের কাজে আর গুরুত্ব দেয়নি। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে আমি আবার কাজ শুরু করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার জন্য এই কাজটি ফেলে রাখার জন্য বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ধন্যবাদ। যেহেতু আমি শুরু করেছিলাম তাই শেষটাও আমি করতে পারলাম।’

১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষা আন্দোলনের সূচনা লগ্ন থেকে ৫২’র একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকার রাজপথ সালাম, বরকত, জব্বারসহ শহিদদের বুুকের রক্তে রঞ্জিত করা এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রদান পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর এর সঙ্গে সম্পৃক্ততা এবং বার বার কারা নির্যাতন ভোগের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ওপর ভিত্তি করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এটা হলো বাস্তবতা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুই বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৫২ সালে পিকিং শান্তি সম্মেলনে যাওয়ার পর জাতির পিতা সেখানে বাংলা ভাষাতে বক্তব্য রাখেন। একইভাবে জাতিসংঘেও তিনি বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন।’

জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে তিনি নিজেও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবছর বাংলায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি অর্জনে কানাডা প্রবাসী বাঙালি রফিক ও সালামের অবদানের কথাও স্মরণ করেন।

তাঁর সরকার জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা ও তথ্য প্রযুক্তিতে ব্যাপকভাবে বাংলা ভাষার প্রচলনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মোবাইল সেটে বাংলা কী-প্যাডের ব্যবহার চালু, ‘ডট বাংলা’ ডোমেইন এবং ৯টি ভাষা শিক্ষার জন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছে।’

মোবাইলে বাংলা ব্যবহারের সুযোগ সৃষ্টি এবং বাংলায় ওয়েব সাইটের ঠিকানার ব্যবহার দেশে শিক্ষার সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী এবং মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তীকে ঘিরে বছরব্যাপী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনকালে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করে একে দারিদ্র্যমুক্ত করায় সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। এখানেই থেমে না থেকে ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রত্যয়ও তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন।