ঢাকা, বুধবার ১৭, এপ্রিল ২০২৪ ৩:৪১:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
রাজধানীতে ফিরেছেন ২১ লাখেরও বেশি সিমধারী ভাসানটেকে আগুন: মায়ের পর মারা গেলেন মেয়েও ফরিদপুরে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১১ রাজধানীতে ফিরছে মানুষ লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে ১৫ জনের মৃত্যু

এই শীতে রাজধানীতে ঘুরে বেড়ানো

শারমিন সুলতানা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৯ এএম, ২২ জানুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

লালবাগ কেল্লা। ফাইল ছবি

লালবাগ কেল্লা। ফাইল ছবি

অফিসে ছুটি মেলেনি, শুরু হয়ে গেছে বাচ্চাদের ক্লাস। এদিকে আবার শীত এসে চলেও যাচ্ছে, এবার বোধহয় আর যাওয়া হলো না কোথাও। এমনটাই হয়তো ভাবছি আমরা অনেকে। নাই বা হলো এবার মেঘ পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়া, আর সাগর পানে ছোটা। তাই বলে যে একেবারেই বেড়ানো হবে না তেমনটা তো নয়। একসাথে কয়েকদিন ছুটি না মিললেও সপ্তাহে তো মিলছে দুদিন বা একদিনের ছুটি। সেই ছুটিকেই কাজে লাগিয়ে পরিবারসহ ঘুরে আসতে পারেন রাজধানীর ভেতরে বা আশেপাশের বেশকিছু  মনোরম জায়গা থেকে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমনই কিছু মনোরম জায়গা সম্পর্কে।

জাতীয় জাদুঘর :

ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় জাদুঘর ১৯১৩ সালে ঢাকা জাদুঘর নামে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। এখানে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, প্রত্নতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, শিল্পকলা ও প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত নিদর্শনগুলো সংগৃহীত আছে। এই জাদুঘরে ৪৪টি প্রদর্শনী কক্ষ, তিনটি অডিটোরিয়াম, একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার ও দুটি অস্থায়ী প্রদর্শনী কক্ষ রয়েছে।

জাতীয় জাদুঘর জনসাধারণের জন্য বিশেষত শিশুদের জন্য একটি শিক্ষামূলক বিনোদন কেন্দ্র। এছাড়া জাদুঘরের পাশেই রয়েছে শিশুপার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা পার্ক। একটু সময় হাতে নিয়ে গেলে ঘুরে দেখতে পারেন এই জায়গাগুলোও।

ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে শাহবাগ মোড়ে নেমে কয়েক কদম হাঁটলেই হাতের ডানে মিলবে জাতীয় জাদুঘর।

পরিদর্শনের সময় : গ্রীষ্মকালে, শনিবার-বুধ সকাল ১০.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। আর শীতকালে, শনিবার-বুধ সকাল ৯.৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৪.৩০ মিনিট পর্যন্ত এবং শুক্রবার বিকাল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

প্রবেশ মূল্য : দেশী প্রাপ্ত বয়স্ক দর্শনার্থী এবং সার্কভূক্ত দেশের বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। আর বারো বছরের নিচে অপ্রাপ্ত বয়স্ক দর্শনার্থীদের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা। এছাড়া সার্কভূক্ত দেশগুলো ছাড়া অন্যান্য বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।

আহসান মঞ্জিল :

ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে পুরান ঢাকার ইসলামপুরে আহসান মঞ্জিলের অবস্থান।  ১৮৫৯ সালে আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আর শেষ হয় ১৮৭২ সালে। বর্তমানে আহসান মঞ্জিলকে মনে করা হয় ঢাকা শহরের প্রথম ইট-পাথরের তৈরি স্থাপত্য নিদর্শন।

আহসান মঞ্জিলের দোতলা ভবনের বারান্দা ও মেঝে তৈরি করা হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। প্রাসাদের ঠিক সামনে রয়েছে চমৎকার ফুলের বাগান ও সবুজ মাঠ। আহসান মঞ্জিলের দ্বিতীয় তলা থেকে একটি বড় সিড়ি সবুজ মাঠে নেমে এসেছে। এর স্থাপত্যশৈলী পশ্চিমাদেরও সমানভাবে আকর্ষণ করে। বর্তমানে আহসান মঞ্জিল বাংলাদেশ সরকারের জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষিত আছে। এখানে আসলে আহসান মঞ্জিল দর্শনের পাশাপাশি বুড়িগঙ্গা নদীর দর্শনটাও হয়ে যাবে ।

পরিদর্শনের সময় : আহসান মঞ্জিল দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে,শনিবার থেকে বুধবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৫টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত আর প্রতি শুক্রবার বিকেল ৩ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত। প্রতি বৃহস্পতিবার এবং অন্যান্য সরকারী ছুটির দিনে আহসান মঞ্জিল   বন্ধ থাকে।

প্রবেশ মূল্য : আহসান মঞ্জিলে প্রবেশের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের টিকেট মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা। ১২ বছরের নিচে অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশুদের জন্য জনপ্রতি ১০ টাকা করে। বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা। তবে প্রতিবন্ধী দর্শনার্থীদের জন্য টিকিটের কোন প্রয়োজন হয় না।

যাতায়াত : ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে গুলিস্তান এসে রিক্সা বা সিএনজিতে করে আহসান মঞ্জিলে যাওয়া যাবে। গুলিস্থানের নর্থ সাউথ রোড ধরে নয়াবাজার মোড় হয়ে বাবুবাজার ব্রিজ দিয়ে এগুলেই ইসলামপুর। আর ইসলামপুর এসে যে কারো কাছে আহসান মঞ্জিল যাওয়ার রাস্তা জানতে চাইলেই বলে দেবে। আবার সরাসরি পুরান ঢাকার সদরঘাট এসে পায়ে হেঁটে কিংবা রিক্সাযোগে আহসান মঞ্জিল যাওয়া যাবে।

লালবাগের কেল্লা :

পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে লালবাগ কেল্লা অবস্থিত। লালবাগ কেল্লা মোগল আমলের একমাত্র নিদর্শন যেখানে একই সাথে কষ্টিপাথর, মার্বেল পাথর ও নানান রঙ বেরঙের টালির ব্যবহার দেখা যায়। বাংলাদেশের আর কোন পুরাতন স্থাপনাতে এমনটা দেখা যায় না। ১৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম  লালবাগ দূর্গের নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন। শুরুতে লালবাগের নাম ছিল আওরঙ্গবাদ। পরবর্তীতে এলাকার নামের সাথে কেল্লাটির নামও পরিবর্তিত হয়ে লালবাগ কেল্লা নামে পরিচিতি পায়।  তিনশ বছরের ঐতিহ্য বহনকারী এই দূর্গটি বহুবছর আগে থেকেই স্থাপত্য কৌশল আর ‌সৌন্দর্যের কারণে জনসাধারণের কাছে একটি দর্শনীয় স্থান।

পরিদর্শনের সময় : লালবাগ কেল্লা রোববার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধ দিবস বন্ধ থাকে। এছাড়া সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে খোলা থাকে। তবে গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে ৬টা আর শীতকালে সকাল ৯ টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে সারা বছরই দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সাময়িক ভাবে বন্ধ থাকে লালবাগ কেল্লা। এছাড়াও সকল সরকারী ছুটির দিনে লালবাগ কেল্লা বন্ধ থাকে। 

প্রবেশ মূল্য : বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য কেল্লায় প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা, ৫ বছরের নিচে বাচ্চাদের প্রবেশের জন্য কোন টিকেটের প্রয়োজন হয় না। আর বিদেশী পর্যটকদের  জন্য টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০০ টাকা।

যাতায়াত : ঢাকার যে কোন জায়গা থেকে আজিমপুর এসে রিক্সা করে লালবাগ কেল্লা যাওয়া যাবে।  আবার ঢাকার নিউমার্কেট বা গুলিস্তান থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা রিক্সা ভাড়ায় সহজেই লালবাগ কেল্লায় যাওয়া যায়। 

জাতীয় চিড়িয়াখানা :

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা ঢাকার মিরপুরে অবস্থিত।  জনসাধারণ বিশেষ করে শিশুদের জন্য একটি প্রধান বিনোদন কেন্দ্র এই চিড়িয়াখানা। চিড়িয়াখানাটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৫০ সালে। তবে চিড়িয়াখানাটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন।

চিড়িয়াখানার তথ্যকেন্দ্র থেকে  পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকা চিড়িয়াখানায় ১৯১ প্রজাতির ২১৫০টি প্রাণী রয়েছে। তবে এসব প্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, এশীয় সিংহ, লোনা পানির কুমির, ইমপালা, এমু, টাপির, এশিয়ান কালো ভাল্লুক প্রভৃতি।

চিড়িয়াখানার পাশেই বোটানিক্যাল গার্ডেনের অবস্থান। এখানে রয়েছে নানা প্রকারের দেশী বিদেশী প্রায় আটশ প্রজাতির বৃক্ষ।  কেউ চাইলে চিড়িয়াখানার পাশাপাশি বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকেও ঘুরে যেতে পারেন।

পরিদর্শনের সময় : চিড়িয়াখানা প্রতি রোববার বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকি ছয়দিন খোলা থাকে। এছাড়া গ্রীষ্মকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা আর শীতকালে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিড়িয়াকানা খোলা থাকে। তবে সরকারি ছুটির দিনগুলোতে চিড়িয়াখানা বন্ধ থাকে।

প্রবেশ মূল্য : চিড়িয়াখানার প্রবেশ মূল্য আগে আগে  জনপ্রতি ৩০ টাকা থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে ৫০ টাকা হয়েছে।

যাতায়াত : ঢাকার যেকোন জায়গা থেকে মিরপুর এক নম্বর সনি সিনেমা হল গোল চত্তর আসলে, সেখান থেকে যে রাস্তাটি উত্তর দিকে গেছে সেই রাস্তা ধরে সরাসরি গেলেই দেখা মিলবে চিড়িয়াখানার। গোল চত্তর থেকে পায়ে হেটে অথবা রিক্সা যোগে যাওয়া যাবে চিড়িয়াখানায়।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট