ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ১:৫০:২৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

একা লড়াই করে জিতেছি: সামিয়া রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৪৯ পিএম, ৪ আগস্ট ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন জোর করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। যে প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না সেখানে এককভাবে আমাকে নিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আমার কোনো আস্থা ছিল না। কিন্তু আমি জানতাম হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দেবেন। কারণ, হাইকোর্ট প্রমাণ দেখবেন। সব প্রমাণ আমার পক্ষে ছিল। পুরো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একা লড়াই করে আমি জিতেছি।

বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) হাইকোর্টের রায়ের পর প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান।
 
এর আগে সকালে সামিয়া রহমানের পদাবনতির আদেশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে তাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন আদালত। 
সামিয়া রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আমাকে এ শাস্তির মুখোমুখি করেছে। আমি একা শক্ত হয়ে লড়াই চালিয়ে গেছি। অবশেষে আল্লাহর রহমতে আমি জয়ী হয়েছি। আমার বড় ছেলের অসুস্থতাজনিত কারণে বিনা বেতনে ছুটি চেয়েছি, সেটিও আমাকে দেওয়া হয়নি। মানবিক কারণে হলেও ছুটি দিতে পারত। যেটি আমার বিভাগের অনেক শিক্ষক পেয়ে থাকেন। আমাকে সবকিছু থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
 
‘আমি ভেবেছিলাম, আল্লাহ কোনো কারণে আমার ওপর নাখোশ। কিন্তু না, আল্লাহ আমার সঙ্গেই ছিলেন। কিছু মানুষ আমার ওপর বিশ্বাস রেখেছিলেন। বিশেষ করে আমার স্বামী ও আইনজীবী (ব্যারিস্টার হাসান এম এস আজিম)। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
 
ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের এ শিক্ষক আরও বলেন, আমি তৎকালীন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন, তৎকালীন উপ-উপাচার্য, ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছি। আমি বলেছি, লেখার আইডিয়া আমার। কিন্তু পরে তা জার্নালে ছাপা থেকে কোনো প্রক্রিয়ায় আমি যুক্ত ছিলাম না। প্রতিটি বিষয়ের প্রমাণসহ সংশ্লিষ্ট ডকুমেন্ট আমি জমা দিয়েছি। কিন্তু প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে আমাকে শাস্তি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
 
‘এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমার সাবেক আইনজীবীও জড়িত। কিন্তু অনেক পরে আমি এটা বুঝেছি। তিনি আমাকে প্রতিনিয়ত মিসগাইড করেছেন। আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে মুভমেন্ট করতে চেয়েছি, তখনই তিনি বলেছেন, তদন্তাধীন বিষয়ে কথা বলা যাবে না। আমি একটি পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে লিখতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তা করতে দেননি। অভিযোগ, তদন্ত… এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নানা হুমকি-ধামকি আমাকে শুনতে হয়েছে।’
 
পরবর্তী করণীয় কী — জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্ট আমাকে সব সুযোগ-সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আমি আমার আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় জানে। বর্তমানে আমি ছেলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছি।
 
সামিয়া রহমান ২০০০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে তিনি সহকারী অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তার বিরুদ্ধে গবেষণায় ‘চৌর্যবৃত্তির’ অভিযোগ আনা হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে ২০২১ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় তাকে এক ধাপ পদাবনতি দিয়ে সহকারী অধ্যাপক করা হয়। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন সামিয়া রহমান।
 
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সামিয়া রহমান ও মারজানের যৌথভাবে লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার : এ কেস স্ট্যাডি অব দ্য কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ শিরোনামের আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউ’ জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’-তে প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘দ্য সাবজেক্ট অ্যান্ড পাওয়ার’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।
 
শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।