ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৩:৪৩:০৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মানুষ এখন ডাল-ভাত নয়, মাছ-মাংস নিয়ে চিন্তা করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তীব্র তাপপ্রবাহ, সতর্ক থাকতে মাইকিং ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপ আজ শুরু জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা

একাত্তরে কচুরিপানা রক্ষা করেছে রাবেয়াকে

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০১:২১ পিএম, ১৮ জুলাই ২০১৮ বুধবার

মুক্তিযোদ্ধা রাবেয়া খাতুন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিলো মাত্র ১৪। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস দেশের ভেতরে থেকে কাজ করেছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র আনা-নেওয়া এবং ছদ্মবেশে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে তথ্য সংগ্রহ করেছেন এই কিশোরী৷ পাক সেনাদের কবল থেকে বাঁচতে কচুরি পানা মাথায় দিয়ে নদীর পানিতে লুকিয়ে থেকেছেন৷

 

গাজীপুরের কালীগঞ্জে ১৯৫৭ সালের পহেলা জুলাই জন্ম গ্রহণ করেন রাবেয়া খাতুন৷ তার বাবার নাম আলী আজম খাঁ এবং মা আউলিয়া খাতুন৷ ১৯৭১ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন রাবেয়া৷ তবে এই অল্প বয়সেই নারীনেত্রী ফোরকান বেগম এবং তার মা মুক্তিযোদ্ধা রোকেয়া বেগমের সাহচর্য এবং উৎসাহে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করেন৷

 

রাবেয়া এবং তার সঙ্গীরা বিডিআর-এর এক কমকর্তার কাছে স্থানীয়ভাবে গোয়েন্দাগিরি এবং প্রাথমিক নিরাপত্তার উপর প্রশিক্ষণ নেন৷ তিনি যুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থেকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অস্ত্র বহন করেছেন৷ ছদ্মবেশে তথ্য সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন৷

 


মুক্তিযুদ্ধে নিজের কাজ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমি কখনো সালোয়ার কামিজ পরে, কখনো বোরকা পরে আবার কখনো ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে যেতাম৷ আমাদের গ্রামটা শীতলক্ষ্মা নদীর পাড়ে৷ ফলে অনেক সময় আমরা নৌকার মধ্যে ডাল-পালা, গাছের পাতা, কলা গাছ ইত্যাদি নিয়ে যেতাম৷ ফলে পাক সেনা কিংবা তাদের দোসররা দেখলেও যাতে মনে করে যে, ছাগল-গরুর জন্য হয়তো এপার থেকে ওপারে খাবার নিয়ে যাচ্ছি।’

 

 

তিনি বলেন, ‘এভাবে আমরা নদীপথেই বেশি যাতায়াত করতাম৷ অনেক সময় অস্ত্রগুলোকে কাপড়ে পেঁচিয়ে নৌকার পাটাতনের নিচে রাখতাম৷ আর আমরা বোরকা পরে যেন নাইয়রি সেজে যেতাম৷ এছাড়া কালীগঞ্জ উপজেলার গহীন জঙ্গলে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবির ছিল৷ সেখানে গিয়ে আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতাম৷`

 


এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা ফোরকান বেগমের নির্দেশনা অনুসারে খাবার তৈরি করে ভারতে পাঠাতেন৷ কালীগঞ্জে পাক সেনারা বোমা ফেলতে শুরু করলে রাবেয়া এবং তাঁর সঙ্গীরা পাশের গ্রামে এবং পরে ঘন বনের মধ্যে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন৷

 


দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল৷ এর মধ্য থেকে এক দিনের ঘটনা স্মরণ করে রাবেয়া খাতুন জানান, ‘বালু নদীর তীরে পূবাইল নামে একটি জায়গা আছে৷ সেখানে আমরা বালু নদী পার হতে যাচ্ছিলাম৷ এমন সময় দেখি পাক সেনারা আসছে৷ তখন আমরা নদীর পানিতে নেমে কচুরিপানা মাথায় দিয়ে বসেছিলাম৷ এভাবে কয়েক ঘণ্টা পানিতে অপেক্ষা করে পাক সেনারা চলে যাওয়ার পর আমরা পানি থেকে উঠে জঙ্গলের পাশ দিয়ে বাড়িতে গিয়েছি৷`

 


দেশ স্বাধীন হলে আবারও লেখাপড়া শুরু করেন রাবেয়া৷ পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবং জাতীয় নির্বাচনের প্রচার অভিযানে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন৷ তবে যুদ্ধ বিধ্বস্ত নতুন দেশে পরীক্ষা ছাড়াই সপ্তম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন তিনি৷ ১৯৭৪ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন৷ এরপরই বিয়ে হয়ে যায়৷ ফলে আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি৷

 

১৯৮৫ সালে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে চাকুরিতে যোগ দেন৷ বর্তমানে তিনি ঢাকায় যুব উন্নয়নের পোশাক শাখায় নির্দেশিকা হিসেবে চাকুরিরত রয়েছেন৷ রাবেয়া খাতুন দুঃখের সাথে জানান যে, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ নেওয়ার গুরুত্ব বুঝতে না পারার কারণে তিনি কখনই এ ব্যাপারে চেষ্টা করেননি৷

 

সূত্র : ডয়চে ভেলে