ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ৭:৩৯:১৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

এগিয়ে চলেছে আদিবাসী নারী

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:৫০ এএম, ১৮ আগস্ট ২০১৮ শনিবার

সময়ের বিবর্তনে আদিবাসী নারীদের চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটছে। আধুনিক সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা। আর এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রয়োজন আরো জ্ঞান, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা। আদিবাসী পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও শিক্ষিত হচ্ছেন। অনেক জায়গায় পুরুষের তুলনায় নারীদের উচ্চশিক্ষায় এগিয়ে থাকতে দেখা যায়।

 

পার্বত্য অঞ্চলে পুরুষের তুলনায় নারীরা এগিয়ে। তাদের শিক্ষার হার আরো বেড়ে যেত, যদি এ অঞ্চলে  মানসম্মত শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকত। এ কারণে আদিবাসী নারীদের উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য শহরমুখী হতে হয়। আবার সমতলে দেখা যায় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও সুযোগ না পাওয়ায় নারীরা ঢাকামুখী হতে বাধ্য হয়। 



আদিবাসী নারীদের ঢাকামুখী হওয়ার আরেকটি বড় কারণ হলো পেশা। বিশেষত দারিদ্র্যসহ বিভিন্ন কারণে কর্মসংস্থানের খোঁজে তাদের ঢাকামুখী হতে হয়। এ ছাড়া নিজেদের সম্পদ অন্যের দখলে চলে যাওয়া, বন মামলায় জর্জরিত হওয়া, গ্রামে কর্মসংস্থান ও নিরাপত্তার অভাবসহ নানা সমস্যার কারণে তাদের বেছে নিতে হয় নগরজীবন। রাজধানী ঢাকায় তারা নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত। সচরাচর বিভিন্ন ধরনের সরকারি চাকরির মধ্যে তাদের দেখা না গেলেও বেসরকারি পেশায় চাকমাসহ বিভিন্ন জাতিসত্তার নারীদের যুক্ত থাকতে দেখা যায়। প্রধানত মিডিয়া, এনজিও, বেসরকারি ব্যাংক, মাল্টিন্যাশনাল কেম্পানি, পার্লার ও গার্মেন্টস কারখানায় তারা বেশি কাজ করে।




সাভারের ইপিজেডে  একটি বিউটি পারলারের মালিক কুহলীরঞ্জন চাকমা। এই নারী আট বছর আগে পারলারটি খোলেন। ২০১৫ সাল থেকে বিউটি পারলারে কাজ করছেন ছয়জন চাকমা নারী। তাদের বাড়ি বান্দরবানে।

 


তিনি বলেন, ‘জীবনের প্রয়োজন, একই সঙ্গে স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার ইচ্ছা—এই দুইয়ে মিলে পারলারে কাজ শুরু করেছিলাম। এখন ভালই আছি। ব্যবসা আগের থেকে অনেক ভালো।

 


গারো ইনডিজিনাস মিচিক অ্যাসোসিয়েশনের করা ‘বিউটি পারলারে মান্দি মেয়েরা কেমন আছেন’ শীর্ষক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকার বিউটি পারলারে কর্মরত গারো মেয়েদের ৫০ শতাংশের বেশি টাঙ্গাইলের মধুপুর বনের বাসিন্দা। ঢাকায় বিদেশি দূতাবাস, বিদেশি নাগরিকদের গৃহকর্মী, নার্সিং পেশায়ও গারো নারীরা কাজ করছেন।

 


এছাড়াও তৈরি পোশাকশিল্পসহ শ্রমনির্ভর বিভিন্ন পেশায় তাদের  অংশগ্রহণ দেখা যায়। সাভার বাইপালের পাশেই দুইটি ইপিজেড। একটি পুরোনো ইপিজেড, আরেকটি নতুন ইপিজেড। দুইটি ইপিজেডে কাজ করে প্রায় ২৫ হাজার আদিবাসী। এখানে পাহাড়ি আদিবাসীর সংখ্যা বেশি হলেও সমতলের মান্দি, সাঁওতাল, ওঁরাও কর্মীরাও আছেন। যাদের ৭০ শতাংশই নারী।

 


এসব নারীরা ইপিজেডের আশেপাশের এলাকায় থাকে। এরা এখনও দুই তিনটি পরিবার মিলে এক ফ্ল্যাটেই থাকে। এখানে গার্মেন্টেসে আদিবাসী নারীরা হেল্পার থেকে শুরু করে বড় বড় পদেও কাজ করে। কথা হয় লিলি ফ্যাশন এন্ড গার্মেন্টেসের প্রোডাকশন ম্যানেজার চাকমা আদিবাসী তেরেসা মাহতোর সঙ্গে।

 

তিনি বলেন, আমি ২০০৮ গার্মেন্টেসে যোগ দেই সুইং বিভাগে হেল্পার হিসেবে। তারপর প্রোমোশন হতে হতে এ অবস্থানে। এখানের ইপিজেডসহ গাজীপুর, সখীপুরের অনেক গার্মেন্টেসে আমাদের মত নারীরা ভাল অবস্থানে চাকরি করছে। আমরা কখনও কোন কাজে পিছিয়ে আসি না। সব সময় সব ব্যাপারে আমরা ধৈর্য রাখতে জানি। 

 

বার্ডস গার্মেন্টেসে কাজ করেন থাপসী চাকমা। বাড়ি রাঙামাটির শুভলং উপজেলার শিলছড়ি গ্রামে। এসএসসি পাস করে তিনি বছর পাঁচেক আগে পোশাকশিল্পে যোগ দেন। তিনি বললেন, যদি এলাকায় কাজের সুযোগ থাকত, তাহলে হয়তো এত দূরে আসতাম না। তবে এসে খারাপও হয়নি।

 


তবে বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে আদিবাসী নারীরা এখনো বেশ পিছিয়ে। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশের যে চারটি জেলার মানুষ সবচেয়ে কম বিদেশ যায়, তার মধ্যে আছে বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও শেরপুর। 



তবে দারিদ্র্য ও মানসম্মত শিক্ষার হারের কারণে এখনও অনেক আদিবাসী নারী পিছিয়ে আছেন। পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতাকেও তারা পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে মনে করেন। এ প্রসঙ্গে আদিবাসীদের মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারপারসন চৈতালী ত্রিপুরা বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দূরে হওয়ার কারণে অনেকেই লেখাপড়া পড়া ছেড়ে দিয়েছে, পার্বত্যাঞ্চলে এমন ঘটনা আছে অনেক। স্কুলে যেতে নিগ্রহের ঘটনা এখনো ঘটছে।



গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী বিপাশা চাকমা বলেন, অনেক উচ্চশিক্ষিত নারী পেশাগত কারণে ঢাকামুখী হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি শেষ করে ঢাকাতে থেকে যাচ্ছে ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের জন্য। একটু খেয়াল করলে দেখা যাবে, তাদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল এনজিওগুলোতে তাদের সিনিয়র পজিশনে দেখা যায় না। মাইনরিটি ইস্যু বা সিএইচটি বেইস প্রোগ্রামগুলোতেও আদিবাসী নারীদের সিনিয়র পজিশনে তেমন দেখা যায় না।

 

তিনি আরো বলেন, মেইনস্ট্রিম পপুলেশনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আদিবাসী নারীদের প্রতি সহযোগিতামূলক আচরণ বাড়াতে হবে। এটি খুব জরুরি। এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আদিবাসী নারীকেও পুরো বাংলাদেশের উন্নয়নের ইস্যু নিয়ে আরো মনোযোগী ও কৌশলী হতে হবে। যাতে আদর্শ বজায় রেখে যার যার অবস্থানে নিজেকে টিকিয়ে রেখে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।