ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ৫:৫২:২৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

ওরা গুলি করে মারতে পারত, তাহলে এত কষ্ট হতো না : আবরারের মা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:০৯ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২১ শনিবার

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ ও তার মা রোকেয়া খাতুন। ছবি : সংগৃহীত

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ ও তার মা রোকেয়া খাতুন। ছবি : সংগৃহীত

হত্যাকারীদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করলে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এভাবে চলে যেতে হবে না বলে জানান নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন।

কান্না করতে করতে রোকেয়া খাতুন বলেন, ‌‘আমার ছেলেকে ওরা গুলি করে মারতে পারত, তাহলে ওর এত কষ্ট হতো না।’

আগামীকাল রোববার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর আদালতে এ রায় ঘোষণা করা হবে। এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার সকালে ফাহাদের কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাসায় গেলে সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলেন রোকেয়া খাতুন।

এদিকে রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত থাকবেন- আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। শনিবার দুপুরে বাসযোগে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবেন তারা। তবে খুনিদের চেহারা সহ্য করতে পারবেন না বলে সঙ্গে যাচ্ছেন না মা রোকেয়া খাতুন।
তিনি বলেন, ‌‘ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলে গিয়েছে, কাল আরেক মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের কষ্ট নিতে না হয়।’
মামলায় আরও আসামি হওয়া দরকার ছিল বলে মন্তব্য করে আবরারের মা বলেন, ‘যারা আশপাশের রুম থেকে ফাহাদের নির্যাতনের খবর জেনেও কেন শিক্ষক বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জানায়নি। বিষয়টি জানালে ফাহাদের এই নির্মম অত্যাচার ও মৃত্যু হতো না।’
আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ বলেন, ‘আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আশা করছি। ভাইয়ের রায় ঘোষণা শুনতে আব্বার সঙ্গে আমিও ঢাকায় যাবো। আমাদের সঙ্গে আমাদের পরিবারের আরও অনেকে যাবে।’
আলোচিত এই মত্যা মামলার সব আসামির ফাঁসি চায় আবরারের পরিবার। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর দিনগত রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।
ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।
এই মামলার তদন্ত চলাকালে অভিযুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তারা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত এবং এস এম মাহমুদ সেতু।

পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। গ্রেফতার ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি।

মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত। মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামের পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। তাই এখন পলাতক রয়েছেন আর তিনজন আসামি।

তারা হলেন- মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না। চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ মার্চ মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ স্থানান্তরের আদেশ দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।

এরপর ১৮ মার্চ ওই আদালতে মামলাটি বদলির আদেশ দেন মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। করোনায় প্রথম দফা ছুটি শেষে ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরু করেন আদালত। এরপর মামলাটিতে ৬০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।

গত ১৪ মার্চ এ মামলায় কারাগারে থাকা ২২ আসামি আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। অপর তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেনি। এরপর কয়েকজন আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেন। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ ২৮ নভেম্বর এ মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।