ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১২:৪৭:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

ওয়েন ছেং কুং জু : তিব্বত সম্রাজ্ঞী

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৮:২৩ পিএম, ২৩ মে ২০১৮ বুধবার

বিশ্বের সর্বোচ্চ মালভূমি ও বরফ গলা নদী নিয়ে জাদুময়ী এক রাজ্য তিব্বত। আর এই জাদুময়ী রাজ্যের জাদুময়ী এক মহা সম্রাজ্ঞী ওয়েন ছেং কুং জু। তিনি তিব্বতের অত্যন্ত প্রভাবশালী এক সম্রাজ্ঞী। বলা হয়ে থাকে তিব্বতের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রের উন্নয়নে তার বিশেষ অবদান রয়েছে।

 

তিব্বতের রাজধানী লাসা। লাসা ইটালিয়ান শব্দ, যার অর্থ `ঈশ্বরের স্থান`। তিব্বতিদের জীবনে ধর্ম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সুপ্রাচীনকাল থেকেই বহির্বিশ্বের কাছে তিব্বত এক বিস্ময়! এর অন্যতম কারণ তিব্বতের পরিবেশ।

 

হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত চীনের এই স্বায়ত্বশাষিত অঞ্চলটি অত্যন্ত দুর্গম। লাসার অদূরেই অবস্থিত গোবি মরুভূমি। এই মরুভূমির কষ্টকর পরিবেশ মানুষকে কাছে আসতে নিরুত্সাহীত করে। এ অঞ্চলগুলো এতই উঁচু যে একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। তীব্বতের সমৃদ্ধ ইতিহাস, দুর্গম পরিবেশ, সংস্কৃতি প্রভৃতি বিষয় তিব্বত সম্পর্কে মানুষের কৌতূহল আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।

 


আর আজকের এই তিব্বতের গোড়া পত্তন করে গেছেন সম্রাজ্ঞী ওয়েন ছেং কুং জু। তার নামের শেষ অংশ `কুং জু` অর্থ রাজকুমারী। তিনি চীনের থাং রাজা থাং থাই জংয়ের ভাইয়ের মেয়ে। এ ছাড়া ওয়েং ছেং রাজা সোংচানগাম্বু`র স্ত্রী। ওয়েন ছেং কুং জু`র জন্ম ৬২৮ খৃষ্টাব্দে (কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে ৬২৫ খৃষ্টাব্দে)। ৬৮০ খৃষ্টাব্দে তিনি মারা যান।

 


এক নাটকিয় ঘটনার মাধ্যমে চীনা রাজকুমারী ওয়েন ছেং`এর বিয়ে হয় তিব্বতের রাজা সোংচানগাম্বু`র সঙ্গে। ৬৪১ খ্রিষ্টাব্দে তিব্বতের রাজা সোংচানগাম্বু থাং রাজার কাছে দূত মারফত উপটৌকন হিসেবে সোনা ও রেশম পাঠিয়ে চীনের একজন রাজকুমারীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এ প্রস্তাবে থাং রাজা থাং থাই জং আপত্তি করেন। ফলে তিব্বতের তরুণ এ রাজা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি তুয়ুহুন রাজ্য ও সোংঝৌ নামক থাং সাম্রাজ্যের সীমান্ত প্রদেশ আক্রমণ করেন।

 

থাংদের ইতিহাস বলছে, এ যুদ্ধে রাজা সোংচানগাম্বু পরাজিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে থাং সম্রাট থাং থাই জং তার বিয়ের প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। সে বছরই চীন থেকে রাজকুমারী ওয়েন ছেং তিব্বতে পৌঁছালে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। এ বিয়ের ফলে দুই নবগঠিত সাম্রাজ্যের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।

 


ইতিহাস মতে, তিব্বতের প্রসারে ব্যাপক অবদান রাখেন রাজকুমারী ওয়েন ছেং। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ওয়েন ছেং কুং জু`র আগমণের সাথে সাথে তিব্বতে বৌদ্ধ ধর্ম প্রবেশ করে। এ সময় থেকেই এ অঞ্চলে এ ধর্ম বিস্তার লাভ করতে থাকে। এর আগে এ অঞ্চলের মানুষ স্থানীয় ছোট ছোট প্রচলিত নানা ধর্ম অনুসরণ করতো।

 


ওয়েন ছেন কুং জু বিয়ের চুক্তি হিসেবে চীন থেকে প্রচুর সোনা, গয়না, রেশম, পোরসেলিন বা চীনা মাটির বাসন, বাদ্যযন্ত্র, ধর্মগ্রন্থ ও চিকিত্সাবিদ্যার বই তিব্বতে নিয়ে যান। এ ছাড়াও তার আগমণের ফলে চীনের কৃষি কৌশল, কৃষি যন্ত্রপাতি, ধাতুবিদ্যা, কাগজ ও কালি প্রস্তুতির কৌশল, বয়নশিল্প তিব্বতে প্রবেশ করে। এমন কি তা আগমণে উন্নত হয় তিব্বতের বর্ণমালা এবং লেখন পদ্ধতি। জ্ঞান-বিজ্ঞানে সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে তিব্বত।

 


তিব্বতের চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য পাহাড় ও গুহা। রাজা সোংচানগাম্বু লাসা নগরীর প্রতিষ্ঠাতা। ৬৪১ সালে তিনি একটি বিরাট জলাশয় ভরাট করে প্রাসাদ ও মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজকুমারী ওয়েন ছেং চীন থেকে বহু রকম বুদ্ধমূর্তি সঙ্গে নিয়ে যান। এসব বুদ্ধমূর্তি সযত্নে রাখার জন্য রাজা সোংচানগাম্বু লাসা শহরে এসব জোখাং বা মন্দির নির্মাণ করেন। ৬৪১ খ্রীষ্টাব্দে লাসা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত তা চাও সি মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয়। সোংচানগাম্বু সে সময় রাজকুমারী ওয়েন ছেংকে স্বাগত জানানোর জন্য এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।

 

 

মন্দিরের ভেতরে বৌদ্ধ কক্ষ এবং ধর্মগ্রন্থ রাখবার বেশ অনেকগুলো কক্ষ আছে। এ বৌদ্ধ ভবনটি চার তলা। ভবনের স্বর্ণমন্ডিত তাম্র ছাদ দেখতে উজ্জ্বল ও চমত্কার। এ ভবন নির্মাণে থাং রাজবংশ এবং নেপাল ও ভারতের নির্মাণ শিল্পের বৈশিষ্ট্য অনুসরণ করা হয়।

 


প্রধান কক্ষে ১২ বছর বয়সী সাইকমুনির সমান স্বর্ণমন্ডিত তাম্র মূর্তি স্থাপন করা হয়। এই মূর্তি থাং রাজবংশের রাজকুমারী ওয়েন ছেংয়ের সহযোগীতায় ছাং-আন থেকে আনা হয়। মন্দিরের বারান্দা ও কক্ষগুলোর চার পাশে রাজকুমারী ওয়েন ছেংয়ের তিব্বত আগমনের আড়ম্বরপূর্ণ ঘটনা বণর্না করা হয়েছে। রূপকথায় সমৃদ্ধ নানা রকম তিব্বতী দেয়ালচিত্র লাগানো হয়েছে। দেয়ালচিত্রগুলো একেকটি হাজার মিটার দীর্ঘ। দেখলে মনে হয় চিত্রগুলো জীবন্ত।

 


ওয়েন ছেং কুং জু তিব্বতে অাজও খুবই শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্রী। তিব্বতে তাকে `দ্রোলমা` বা তারার অবতার `সাদা তারা ` বা `দোল-কার ` হিসেবে পূজা করা হয়। প্রতি তিব্বতি বছরের চতুর্থ মাসের ও দশম মাসের পঞ্চদশ দিন ওয়েন ছেং কুং জু`র সম্মানে তিব্বতে উৎসব আয়োজন করা হয়।