ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১৮:৪৮:৫৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

করুণার দাদি: শারমিন সুলতানা মুনমুন

শারমিন সুলতানা মুনমুন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৮ এএম, ১৬ জুন ২০১৯ রবিবার

দু কামরার ভাড়া বাসায় আমাদের বাস। গ্যাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। রান্না-বান্না হয় খড়ির চুলায়। আধুনিক কালের ব্লেন্ডার নামক যন্ত্রটার নামও তখন জানি না। পাটায় মসলা বেটে তারপর রান্না করতে হয়। এদিকে মাকেও প্রতিদিন ছুটতে হয় কলেজে ক্লাস নেওয়ার জন্য। তারমধ্যে আবার আমার ভাইটার বয়স মাত্র এক বছর। সব মিলিয়ে বাসায় তখন হুলুস্থুল অবস্থা। 

বাঁধা একটা মেয়ে আছে বটে তবে সে শুধু আমার ভাইকে দেখভাল করে। এজন্য মাঝে মাঝে মায়ের কাজে সহযোগিতা করতে আসেন প্রতিবেশী এক দাদি। সামনাসামনি আমি ডাকি দাদি আর আমার মা ডাকে চাচি বলে। যদিও সবার কাছে তিনি করুণার দাদি নামে পরিচিত। 

করুণা তার নাতনীর নাম। দাদির একমাত্র ছেলের মেয়ে করুণা। করুণার মা-বাবা দুজনেই মারা গেছেন। এখন দাদির এই নাতনী ছাড়া তিন কূলে কেউ নেই। নাতনী করুণারও বিয়ে হয়ে গেছে কিছুদিন হলো। তিনি তাই একাই থাকেন।

দাদির বয়স সত্তরের একটু বেশিই হবে। কোমর পড়ে গেছে বলে হাঁটেন একটু কুঁজো হয়ে। পায়ে বাতের ব্যথার জন্য হাঁটেন এক পায়ে ভর দিয়ে। তবে মনের জোর কিন্তু ভীষণ রকম।

এদিকে সাপ্লায়ের পানি নেই, কল চেপে পানি তুলতে হয় আমাদের। কলচেপে পানি তোলা, পাটায় মসলা করা, খড়ির চুলায় রান্না চাপিয়ে দিলে আগুনের তাপে খড়ি ঠেলে সেই রান্না শেষ করা, সবই করতে পারেন দাদি। তবে প্রতিদিন না, যে দিন দাদির অন্য কোথাও কাজ থাকে না বা মা একেবারেই পারেন না সেদিন এসে সহযোগিতা করেন। এমনকি নিষেধ সত্ত্বেও মায়ের অনুপস্থিতিতে মাঝেমধ্যে ঘর মোছার কাজটাও করেন।

মা চেয়েছিলেন কাজের দরকার নেই দাদি এমনিতেই তিনবেলা আমাদের সাথে খাবেন। কিন্তু আত্মসম্মানবোধ অত্যন্ত প্রবল হওয়ায়  তিনি রাজি হননি।

এরমধ্যে বেশ কিছুদিন হয় দাদির কোনো খোঁজ না পেয়ে মা আমাকে পাঠালেন খবর নিয়ে আসার জন্য।

করুণার দাদি অন্যের ভিটের উপরে ঘর তুলে থাকেন। তবে একদম মাগনা নয়। থাকার বিনিময়ে তাদের ফাইফরমাশ খাটেন তিনি। ছনের বেড়া দেওয়া ছোট্ট একটা কুঁড়ে ঘর। ছাউনিটাও ছনের। পুরনো হয়ে কালচে হয়ে গেছে। ঘরের ভেতরে একটা চৌকি পাতা। চৌকির উপর একপাশে কয়েকটি মলিন শাড়ি ভাজ করে রাখা। পাশে রাখা আছে একটি ট্রাঙ্ক।  হয়তো মূল্যবান কিছু আছে ওটাতে। ট্রাঙ্কের উপর ছেঁড়া দুটো কাঁথা ভাজ করে রাখা। একপাশে ঝুলছে মশারি। ঘরের মেঝেতে রাখা আছে একটি পানিভর্তি কলস, তার পাশে রাখা অল্পকিছু বাসনপত্র। 

আমি ঘরে ঢুকতেই উনি চেষ্টা করলেন উঠে বসতে। আমি উঠতে না দিয়ে ধরে শুইয়ে দিলাম। কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। যাদের বাসায় থাকেন তারাই দেখভাল করছে বলে জানালেন। 

তবে দাদি জানালেন, জ্বরটা তার জন্য কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হলো তিনি যেই ভিটেটাতে ঘর তুলে আছেন সেটা বিক্রি হয়ে গেছে। যারা কিনেছে তারা তাকে দশ দিনের মধ্যে উঠে যেতে বলেছে। এখন তিনি কোথায় যাবেন সেটাই বড় চিন্তা। 

এবার আমি জ্বরের কারণটা বুঝলাম। কোনো একটা ব্যবস্থা নিশ্চয় হবে বললাম। চিন্তা করতে না করে বাসায় ফিরে এলাম।

পরের দিন খুব ভোরে হইচই শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। মায়ের কাছে জানতে চাইলাম কিসের শব্দ। মা জানালেন- গতকাল রাতে টয়লেটে যাওয়ার সময় কাঁঠাল গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে করুণার দাদি মারা গেছে। কেউ জানতো না। সবাই ভোরবেলা দেখতে পেয়েছে।