ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ২১:০৮:০৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি কৃষক লীগ নেতাদের গণভবনের শাক-সবজি উপহার দিলেন প্রধানমন্ত্রী চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি শিশু হাসপাতালের আগুন সম্পূর্ণ নিভেছে

ক্ষুদ্র পার্লার ব্যবসায়ি জহুরা আজ উইমেন চেম্বারের সদস্য

ফিচার ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:৪৬ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

নারায়নগঞ্জের রুপগঞ্জ উপজেলার বাগবের গ্রামের কিশোরী জহুরা। পারিবারের আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে মাত্র ১২ বছর বয়সেই যাকে বসতে হয়েছিল বিয়ের পিঁড়িতে। তবে সেটা তার নিজের ইচ্ছেতে নয়, বাবা-মা বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেন জহুরাকে। 

বাবা-মা এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দেন তার চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি বয়সী এক লোকের সাথে। ঘটনাটি ২০০৩ সালের শুরুতে। বিয়ের পর কিছুদিন হাসি-খুশি দিন কাটে তার। নতুন হলেও সকলের সাথে মিলিয়ে নিয়েছিলেন জহুরা। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। কারণএকটাই। জহুরার স্বামীসহ তার পরিবারের সদস্যরা তাকে চাপ দিতে থাকে যৌতুকের জন্য। আস্তে আস্তে শুরু হয় শারিরীক নির্যাতন।

এই নির্যাতনের মধ্যেই ২০০৩ সালের শেষের দিকে জহুরার কোল জুড়ে আসে একটি কন্যা সন্তান। তারপরও পাল্টেনি জহুরার ভাগ্য। বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা। এতকিছুর পরও সব মুখ বুঝে সহ্য করে যাচ্ছিলেন জহুরা শুধুমাত্র তার সন্তানের মুখ দেখে। কিন্তু নির্যাতনের মাত্রা যেন দিন দিন বেড়েই চলে। 

এমন অবস্থায় জীবনের সবচেয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেয়ার ভাবনা পেয়ে বসে জহুরাকে। সন্তানের বয়স যখন মাত্র তিন বছর তখন জীবনের কঠিন এক সিদ্ধান্ত নেন জহুরা। স্বামীকে তালাক দেন তিনি। এরপর ২০০৬ সালে ফিরে আসেন বাবার বাড়ি। 

কিন্তু বাড়ি এসেও শান্তির দেখা মেলেনি জহুরার। উল্টো পরিবারের সবাই দোষ দিতে থাকে তাকে। জানিয়ে দেয়া হয়, তাকে কোনো সহযোগীতা করবে না পরিবার। কিন্তু জহুরা অনড়। শশুর বাড়ি আর ফিরে যাবেন না। বরং যে কোন ভাবেই তিনি আবার শুরু করতে চান একটি নতুন জীবন। বুঝতে পারেন তাকে নিজ পাঁয়ে দাঁড়াতে হলে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। 

এদিকে দিন দিন বাড়তে থাকে নিজ পরিবারের নির্যাতনও। তাদের একটাই কথা আবার ফিরে যেতে হবে আগের স্বামীর কাছে। দিন দিন বাড়তে থাকে পরিবারের মানসিক নির্যাতন।

এরই মাঝে একদিন জহুরার সাথে দেখা হয় স্থানীয় এক এনজিও কর্মকর্তার। তার বুদ্ধিতেই জহুরা প্রশিক্ষণ নেন নারীদের মেকআপ করানোর বিষয়ে। প্রশিক্ষণ শেষে নিজের জমানো মাত্র ৩,৩৫০ টাকায় নিজ বাড়িতে শুরু করেন কাজ। অল্প দিনেই স্থানীয় নারীদের মাঝে তিনি হয়ে উঠেন খুব জনপ্রিয়। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে তার সেবা গ্রহীতার সংখ্যা। 

এরপর একদিন জহুরা সিদ্ধান্ত নেন এবার বাড়ির বাইরে নিয়ে যেতে হবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে। দৃঢ় প্রত্যয়ী জহুরা বাগবের বাজারে ভাড়া নেন এক রুমের একটি দোকান। শুরু করেন নতুন জীবন। শুরু করেন বিউটি পার্লারের ব্যবসা।

ব্যবসায় যখন সাফল্য আসে ঠিক তখনই আবারো তার পরিবার চাপ দিতে থাকে সংসার করার জন্য। কিন্তু জহুরা আবারো তাদের ফিরিয়ে দেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা জহুরার তের বছর বয়সী কন্যা জয়ীতাকেও নির্যাতন শুরু করে। জহুরাকে চাপ দেয় জয়ীতাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু তাতেও রাজি না জহুরা।

সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন জহুরা। সিদ্ধান্ত নেন আর পরিবারের সাথে থাকবেন না। বিউটি পার্লারের পাশেই এক রুম ভাড়া নিয়ে সেখানে থাকা শুরু করেন মা-মেয়ে। ২০১৫ সালে জহুরা ভর্তি হন মৌরাপুরা ডিগ্রী কলেজে। পাশাপাশি সে  আরো উচ্চতর ট্রেনিং নেন মেকআপের উপর। 

এরপর থেকেই  আরো জমজমাট হয়ে ওঠে জহুরার বিউটি পার্লারের ব্যবসা। এখন আর তিনি একা নন, আরো নারীদের  নিজেই প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যবসার পরিধি আরো বৃদ্ধি করেন।  

এক সময় যার সংসার চালানোই কঠিন ছিল যার বর্তমানে সেই জহুরার মাসিক আয় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও তিনি এখন বাংলাদেশ উইমেন চেম্বারের একজন নির্বাচিত সদস্য। তার মেয়ে জয়ীতা অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী।

পুরানো দিনের কথা বলতে গিয়ে জহুরা বলেন, সেসব দিনের কথা আমি মনেও করতে চাই না। সে সব দিনের কথা মনে উঠলে আমার গাঁ শিউড়ে উঠে। স্বামী আর তার পরিবার যেমন নির্যাতন করেছে...আমার পরিবারও আমাকে কম নির্যাতন করেনি। 

তিনি বলেন, ভেবেছিলাম আমার পরিবারের সদস্যরা অন্তত আমাকে বুঝবে। কিন্তু উল্টো তারাই আমাকে দোষ দিয়েছে।

জহুরা বলেন, আমি এখন আর পুরনো দিনের দিকে তাকাতে চাই না। আমার মেয়েকে ঘিরেই এখন আমার সব স্বপ্ন। তাকে আমি পড়ালেখা শেষ করাবো, সে যেন নিজের পাঁয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ শিক্ষিত হওয়া একটি মেয়ের জন্য খুবই জরুরী।