ঢাকা, শনিবার ২০, এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৮:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
চট্টগ্রামে আজ শুরু উইম্যান এসএমই এক্সপো হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউ পুড়ে ছাই, রক্ষা পেল ৭ শিশু সবজির বাজার চড়া, কমেনি মুরগির দাম সারা দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি, হিট এলার্ট জারি

গরিবের খাদ্য সংকটে নির্ভরতা ৩৩৩’ হেল্পলাইন

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৫৭ পিএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১ বুধবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সরকারের ‘জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩’ খাদ্যসেবার জন্য সিলেটে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মুঠোফোনে কল দিয়ে অনেকেই সহযোগিতা নিচ্ছেন। সংকটে দ্রুত সেবা পাওয়ায় এ সেবাকে তারা দুঃসময়ের বন্ধু হিসেবে দেখছেন।
গত বছরের মে মাসে খাদ্য সংকটে পড়েন সিলেটের বিশ্বনাথের গাড়িচালক সুহেল। কঠোর লকডাউনের কারণে চার সন্তানের কথা ভেবে অবশেষে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেন তার স্ত্রী। যাচাই বাছাই-এর পর সরকারি নির্দেশনায় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের পূর্ব চান্দশির কাপন গ্রামের সুহেলের বাসায় ত্রাণ নিয়ে হাজির হন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি সুহেলের স্ত্রীর হাতে তুলে দেন খাদ্যসামগ্রী। এতে ছিল ১০ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ৫ কেজি আলু, ২ লিটার তেল ও একটি সাবান।
গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হলে এলাকাবাসি সেবা সম্পর্কে জানতে পারেন। পরবর্তীতে আরও অনেকেই খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেন। এখন পর্যন্ত এই উপজেলায় খাদ্য সহায়তা চেয়ে ফোন করেছেন প্রায় পাঁচশ ব্যক্তি। এর মধ্যে প্রকৃত আবেদনকারী চার’শ জনকে চিহ্নিত করে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দাস।
পাঁচ বছর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “দেশে আর কোনো দিন দুর্ভিক্ষ হবে না। মঙ্গা থাকবে না। একটি মানুষও না খেয়ে মরবে না।” কিন্তু ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়েন শ্রমজীবী মানুষেরা। নি¤œ আয়ের মানুষের ঘরে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। ঠিক তখন ত্রাতা হয়ে উঠে এই জাতীয় হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ এর সেবা। এতো প্রধানমন্ত্রীর সেই বক্তব্যেরই প্রতিফলন।
করোনা সংকট মোকাবেলায় এটুআই গত বছরের শুরুতেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। তার অন্যতম হলো ৩৩৩’ জাতীয়। এই হেল্পলাইনে ফোন করে করোনা বিষয়ক তথ্য সেবা, জরুরী স্বাস্থ্য পরামর্শ, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য, ওষুধ এবং খাদ্য সহায়তার মতো জরুরী সেবাগুলো দেয়া হয়ে থাকে। 
এটুআই কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, ৩৩৩-০ এ কল করে ডায়াল করে নাগরিকগণ তথ্য ও  সেবা পাচ্ছেন এবং সামাজিক সমস্যার প্রতিকারে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তাও পেতে পারেন। এ পর্যন্ত ৪ কোটি ৬৪ লক্ষেরও অধিক কল গ্রহণ করা হয়েছে। 
এছাড়াও ৩৩৩-১ নম্বরে ডায়াল করে নাগরিকরা বিভিন্ন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত সেবা পেতে পারেন। ইতিমধ্যে টেলিমেডিসিন সেবা পেতে এই হেল্পলাইনে ৬২ লাখেরও  বেশি কলের মাধ্যমে নাগরিকরা সেবা গ্রহণ করেছেন। এ মেনুতে প্রবেশ করে ঘরে বসেই নিরাপদে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে কথা বলে স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করতে পারছেন দেশের যে কোনো প্রান্তের মানুষ। জনসাধারণ ৩৩৩-৫ নম্বরের মাধ্যমে ডায়াল করে নিত্যপণ্য এবং ওষুধ কিনতে পারছেন। এ পর্যন্ত এই হেল্পলাইনে ৯ লাখ ১৯ হাজারেরও বেশি নাগরিক কল করে সেবা গ্রহণ করেছেন। ৩৩৩-৫ নম্বরের মাধ্যমে ‘ফোনে নিত্যপণ্য’ সেবা প্রদানের কার্যক্রম চলছে। এ পর্যন্ত এই হেল্পলাইনে ১ লাখ ৪২ হাজারের বেশি মানুষকে নিত্যপণ্য পৌঁছে দেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির অবনতি ও লকডাউনের সময়সীমা বেড়ে যাওয়ায় সিলেট মহানগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দিনদিন খাদ্য সহায়তার চাহিদা বৃদ্ধি  পেতে শুরু করে। যারা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাদ্য সংকটে তারা ৩৩৩-৩ নম্বরের মাধ্যমে ডায়াল করে সাহায্য চাইলে তাদের ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় খাদ্যসামগ্রী। 
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার মেজবাহ উদ্দিন জানান, সিলেট মহানগর এলাকায় গত ২২ আগস্ট পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা চেয়ে ৫৫৬ টি কল এসেছে। এর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৩৬৯ ব্যক্তিকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।  তবে তথ্য বিভ্রান্তি, একই পরিবারে একাধিক ব্যক্তির সহায়তা চাওয়া ও অপ্রয়োজনে ফোন করার কারণে ১৮৭ ব্যক্তিকে সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি।
সিলেটের সীমান্তবর্তী  উপজেলা গোয়াইনঘাটের পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের দ্বারিখেল গ্রামের বিধবা নারী সুরুতুন নেছা। স্থানীয় এক ব্যক্তির সহযোগিতায় ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে খাদ্য সহায়তা চান। সেদিনই খাবার নিয়ে হাজির হন উপজেলা প্রশাসনের লোকজন।
সুরুতুন নেছা বলেন,“প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার এই মূহুর্তে আমাদের জীবন বাঁচিয়েছে। এ জন্য আমরা তার কাছে কৃতজ্ঞ।” বাসস সংবাদদাতার সাথে কথা বলতে বলতেই তিনি দুহাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেন।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান জানান, ২৮ আগস্ট ২০২১ পর্যন্ত এই উপজেলায় ৬ হাজার ১২২ টি খাদ্য সহায়তার আবেদন পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ৩৮৯ জনকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। বাকিগুলো যাচাই-বাছাই শেষে খাদ্য পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলায় আগস্ট মাস পর্যন্ত ৫৬০ টি খাদ্য সহায়তার আবেদন পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন। যাচাই-বাছাই করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে ৪৮০ জনকে। সিলেট সদর উপজেলায় গত জুন পর্যন্ত ২২০ জনকে এবং এরপর গত আগস্ট পর্যন্ত ২৭১ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। কানাইঘাট উপজেলায় দেওয়া হয়েছে ৬০০ জনকে। জকিগঞ্জে দেওয়া হয়েছে ১৯৮ জনকে। বিয়ানীবাজার উপজেলায় ১ হাজার ৩৮৬ আবেদন পেয়েছে উপজেলা প্রশাসন। এর মধ্যে যাচাই বাছাই করে ৬৮৭ জনকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। অন্যদের তথ্য যাচাই করে খাদ্য সহায়তার বিষয়টি চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউএনও।
মৌলভীবাজার জেলায় মধ্য আগস্ট পর্যন্ত প্রায় চার হাজার পরিবারকে খাদ্য সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তানিয়া সুলতানা। তিনি জানান, এবছর ১৪ এপ্রিল থেকে ১৬ আগস্ট পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলায় ৩৩৩ নম্বরে কল সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। এর মধ্যে থেকে সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা প্রাপ্ত কলের ভিত্তিতে যাচাই বাছাই করে ৩ হাজার ৭৭৪ টি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। এর মাধ্যমে জেলার ১৮ হাজার ৮৭০ জন ব্যক্তি সরকারি খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন।
চলতি বছরের ৬ মে জেলার বড়লেখা উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের সুজাউল পাঁচপাড়া গ্রামের শারীরিক প্রতিবন্ধী তাজ উদ্দিন ৩৩৩ নম্বরে ফোন দিয়ে খাদ্য সহায়তা চান। ফোন পাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তার প্রতিনিধির মাধ্যমে প্যাকেট খাবার পৌঁছে দেন। 
বিস্ময় প্রকাশ করে তাজ উদ্দিন বলেন, “বিষয়টি ভাবতে অবাক হচ্ছি। আগে সামান্য সহযোগিতার জন্য কতজনের কাছে যেতে হত। যখন খাদ্য সহায়তার জন্য ফোন দিলাম তখনও ভাবিনি এত তাড়াতাড়ি সহযোগিতা পাব।”
তার মতো একই জেলার জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের মধ্যবটুলী গ্রামে এমরান আহমদ হেল্পলাইনে ফোন দিয়ে গত ৩ মে খাদ্য সহায়তা চান। পরদিন তার বাড়িতে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়। সহায়তাপ্রাপ্ত এমরান বলেন,আমি পেশায় দিনমজুর। ছোট ভাই বোনসহ ৫ সদস্যের পরিবার। সবাই আমার উপর নির্ভরশীল। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কয়েকদিন অসহায় ছিলাম। খাদ্য সহায়তা চাইতে সহযোগিতা পেয়েছি। এখনো  স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।”
জাতীয় হেল্পলাইন ৩৩৩ এর মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলায় খাদ্য সহায়তার আবেদন পেয়েছেন কর্মকর্তারা। লকডাউনের পরেও এ ধরনের সহযোগিতার আবেদন পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। যারা সত্যিই সমস্যায় আছেন তাদের তথ্য যাচাই করে প্রকৃত আবেদনকারীকে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মাহফুজুর রহমান। 
মাহফুজুর রহমান বলেন, তবে, অনেকে অপ্রয়োজনে ফোন দিচ্ছেন। কেউ বিষয়টি যাচাই করার জন্যও ফোন দিচ্ছেন। এতে কিছুটা বিড়ম্বনাও তৈরি হয়।