ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ৬:১৬:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

চিতল মাছ, পাঞ্জাবি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ : মেহেনাজ আহমেদ

মেহেনাজ আহমেদ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৯:০৭ এএম, ২২ মে ২০১৯ বুধবার

বাবা-মার সঙ্গে লেখক

বাবা-মার সঙ্গে লেখক

প্রতি বছর শীতের সময় চিতল মাছ খাওয়া টা আমাদের বাসায় একটা নিয়ম হয়ে গেছে। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি, কবে একটু ভাল করে শীত পড়বে, আর আব্বা চিতল মাছ কিনে আনবে। কেন জানিনা ২০১৭ আর ২০১৮ সালে চিতল মাছ খাওয়া হয়নি। শীত শেষ হয়ে যায়, আব্বা চিতল মাছ কিনে আনেনা। অভিমান করে বলিও না, আবার ভাবি, হয়তো আব্বার খেয়াল নেই। 
এবার সিডনি থেকে ফেরার পর আম্মা নিজেও বলল তুমি গত দুই বছর যাবত চিতল মাছ খাওয়াও না, এবার কিন্তু আনবা। 
এই ফেব্রুয়ারিতে বোধহয় শেষের দিকে, তখনও হালকা শীত ছিল, হঠাৎ আব্বা বিশাল এক চিতল মাছ নিয়ে এসে হাজির!! আম্মা তার নতুন বড় পাথরের কড়াইতে চিতল মাছ রান্না করলো। এত বড় বড় টুকরা, বড় কড়াই ছাড়া হতো না রান্না। 
দুপুরে বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় ফিরে আমি খেতে বসলাম। আব্বা আমার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। মাছ কেনার গল্প বললো। আমি বড় মাছ খেতে ভালবাসি, আব্বা সেটা জানতো। আমার মনে আছে, আব্বা আমাকে বললো আসলেই গত দুই বছর খাওয়া হয়নি চিতল মাছ! 
আমিও বললাম তুমিই তো আনোনি, কিভাবে খাওয়া হবে? আব্বা বললো, এবার এনেছি, এবার খাও। সেদিন জানতাম না, আব্বা যাওয়ার আগে আমার একটা অপূর্ণ শখ পূরণ করে দিয়ে গেল।
রমজান মাস চলছে, রোজ সবাই ইফতার করি, কেবল আব্বা নেই। আব্বার চেয়ারটায় আমি বসি, নয়তো জামী বসে। আব্বা প্রতি শুক্রবার বাইরের ইফতার খাওয়ার জন্য দুপুর থেকেই প্রস্তুতি নিতো। সবার পছন্দের খাবার কিনে আনতো। এখন সেই প্রস্তুতি আমি নেই। গতবছর আব্বা জারামনিকে কোলে নিয়ে বসে ইফতার করেছিল। এবার জারামনি ইফতারের সময় টেবিলের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। ফ্রিজ খুলে আব্বার ইনসুলিনের পেনটা বের করে, ওর যেন ঠিক মনে আছে, নানাভাই ইনসুলিন নিতো ইফতারের সময়।
ফিজামনি তখন বলে, নানাভাই তো স্টার হাউজে চলে গেছে। 
আজ দুই মাস হতে চললো, আব্বা তোমাকে দেখিনা। এবার পাঞ্জাবির দোকানগুলোতে ঢুকে পাঞ্জাবিগুলোতে একটু হাত বুলিয়ে চলে আসি। প্রতি বছর তোমার জন্য পাঞ্জাবি কিনেই ঈদের কেনাকাটা শুরু করতাম। চেষ্টা করতাম তোমার আর রকিবের জন্য প্রায় একইরকম  পাঞ্জাবি কিনতে। এবার আমি কার জন্য পাঞ্জাবি কিনবো, আব্বা? রকিবও বোধহয় উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। 
ইফতারি কিনতে গিয়ে তোমার খোঁজ করে কতজন, তোমার খবরটা পেয়ে চোখের পানি ফেলে, কেউ ভাবতেই পারেনা যে তোমার ঐ হাসিমুখটা আর কোনদিন আমরা দেখতে পাবো না। 
তুমি ভাল থেকো আব্বা, মহান আল্লাহ তায়ালা তোমার সকল ভাল কাজের জন্য তোমাকে পুরষ্কৃত করুক।

৥ লেখক : বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক