ঢাকা, বুধবার ২৪, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৪২:০৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

চিম্বুকের পথে পথে আনারসের ঘ্রাণ

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৫৪ পিএম, ২৬ জুলাই ২০১৯ শুক্রবার

নারীরা আনারস সংগ্রহ করছেন বাগান থেকে

নারীরা আনারস সংগ্রহ করছেন বাগান থেকে

বান্দরবান পার্বত্য জেলার পাহাড়ের উঁচু নিচু বাগানগুলোর বাতাসে এখন পাকা আনারসের ঘ্রাণ। সুউচ্চ চিম্বুক পাহাড়ের সড়কে গেলেই দেখা মিলবে রাস্তার দুই পাশে শতাধিক আনারসের বাগান।

আর সেই বাগান থেকে আনারস তুলতে সকাল থেকে ব্যস্ত সময় পার করছেন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর বম জনগোষ্ঠী। ছোট বড় সকলেই রোদ আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে রসে ভরা টসটসে আনারস বাগান থেকে কেটে পিঠে ঝুলানো বাঁশের খাঁচা ভর্তি করছেন। তবে নারীর সংখ্যাই বেশি।

বড়-ছোট কিংবা মাঝারি আকারের আনারস কিনতে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকাররা ভিড় করছেন পাহাড়িদের বাগানগুলোতে। এবছর উর্বর মাটিতে বিষমুক্ত আনারস চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। তাই প্রতি বছরই বাড়ছে আনারস চাষের জমির পরিমাণ। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে বান্দরবানের আনারস।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে গ্যাসমনি পাড়ার চাষী জেসি চাকমা এসেছেন তার নিজ বাগান থেকে ধারালো পাতলা দা দিয়ে আনারস কাটার জন্য। হাতে মোজা আর পায়ে জুতা পরে ধারালো দা দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করে একে একে রসালো জাইনকুইন আনারস কাটছেন তিনি। কাটা শেষে পাহাড়ের ধাপে ধাপে আলতো পা ফেলে সেই আনারস বাঁশে তৈরি খাঁচা ভর্তি করে পাহাড়ের উপরের সমতল জায়গায় নিয়ে আসছেন।

একটু ক্লান্তি শেষে বিশ্রাম নেওয়ার সময় আনারস নিয়ে প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, এ বছর আবহাওয়া অনেক ভালো। গত বছর আনারস বিক্রি করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পেয়েছি। তবে এবার ২ লাখ টাকা পাবেন।

তিনি বলেন, চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষি বিভাগ থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়।

শুধু জেসি চাকমাই নয় পাশের পাহাড়ের আনারসের কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লাইমি পাড়ার চাষী পাকসিয়াম বম।

তিনি বলেন, পাঁচ একর জমিতে আনারসের চারা গাছ আছে ১৫ হাজার। ফলে পোকামাকড় নেই, ফলন ভালো। বাগানের ফল বাজারে বিক্রি করে পরিবারের বাড়তি আয় হয়। এ টাকা সংসারে খরচ করি।

বেতনী পাড়ার চাষী বানসিয়াম বম জানান, এক হাজার আনারস বিক্রি করলে ৩০ হাজার টাকার মত পায়। বাগানে এসে পাইকাররা আনারস কিনে ট্রাক অথবা সিএনজি গাড়ি ভর্তি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্রির জন্য নিয়ে যায়।

বান্দরবান সদরের গ্যাসমনি পাড়া ও ফারুক পাড়ার কয়েকজন আনারস চাষী জানিয়েছেন, আনারস চারা রোপণের জন্য প্রথমে জঙ্গল কেটে শুকিয়ে আগুন লাগাতে হয়। তারপর আবর্জনা পরিষ্কার করে পাহাড়ের ঢালে আড়াআড়ি করে চারা লাগানো হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে চার রোপণ করলে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে ফুল আসে এবং মে, জুন ও জুলাই এ তিন মাস ফলন পাওয়া যায়।

আরো জানা যায়, বড় আকারের এক একটি জায়ান্ট কিউ আনারসে ওজন হয়ে থাকে ৫০০ গ্রাম থেকে ৩ কেজি। চাষীদের কাছ থেকে এ ওজনের একটি আনারস নিলে দাম হয় ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। আর ছোট আকারের দাম পড়ে ১০ টাকা এবং মাঝারি আকারের আনারসের দাম পড়ে ২০ টাকা।

বান্দরবান পার্বত্য জেলার ফারুক পাড়া, গ্যাসমনি পাড়া, লাইমি পাড়া, বেতনি পাড়ার পাশের পাহাড়গুলোতে গেলেই দেখা মিলবে আনারস বাগান।

বান্দরবান কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, তিন পার্বত্য জেলায় জায়ান্ট কিউ এবং হানিকুইন নামে দুই প্রজাতির আনারসের ভালো চাষাবাদ হয়। তবে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জায়ান্ট কিউ আনারসের উৎপাদন হয় বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৮৩২ হেক্টর জমিতে ৮৬ হাজার ৭৯৪ মেট্রিক টন এবং ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৮৭২ হেক্টর জমিতে ৯৭ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন আনারসের উৎপাদন হয়।

বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. একে এম নাজমুল হক জানান, এশিয়ার মধ্যে জায়ান্টকিউ আনারসের জাতটা খুবই বিখ্যাত। এ আনারস ৩-৫ কেজি পর্যন্ত হয়, ওজন বেশি, মিষ্টি এবং বড়। যার কারণে এর চাহিদা বেশি। প্রতি বছর প্রায় ৮৭ হাজার মেট্রিক টন আনারস বান্দরবানে উৎপাদন হয় ।