ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১৫:৪৯:৫৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

ঝুমা-পুতুল কামারের কাজ করে চালাচ্ছেন সংসার

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:১৭ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২১ সোমবার

ঝুমা-পুতুল কামারের কাজ করে চালাচ্ছেন সংসার

ঝুমা-পুতুল কামারের কাজ করে চালাচ্ছেন সংসার

বরগুনা জেলার আমতলীতে দুই নারী কামারের কাজ করে  সংসার চালাচ্ছেন। ঝুমা কর্মকার ও পুতুল কর্মকার নামের দুই জা’ আমতলী শহরে কামারের কাজ করছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। শহরের সদর রোডে তাদের পারিবারিক কামারশালাটি অবস্থিত। সমগ্র জেলায় এ পেশায় তারাই কেবল মাত্র নারী। 
আমতলী উপজেলা শহরের আশীষ কর্মকার ও অসীম কর্মকার দুই ভাই মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে এক প্রকার অনন্যোপায় হয়েই ধুমা ও পুতুল এ পেশায় আসেন। প্রতিদিন পুরুষ কামারের মতো যুদ্ধ করেন আগুন ও লোহার সাথে। ধরে রেখেছেন বংশ পরম্পরায় পেশাটিকে। সংসারে এনেছেন স্বচ্ছলতা। 
তারা জানান, করোনা ভাইরাসের কারণে বেচাকেনা কম থাকলেও সম্প্রতি কোরবাণীর ঈদ উপলক্ষে কাজ ও বিক্রি বেড়েছে।
জানা গেছে, আমতলী পৌর শহরের সদর রোডে দুই ছেলে আশীষ কর্মকার ও অসীম কর্মকারকে নিয়ে শ্যাম কর্মকারের কামারশালাটি বেশ জমজমাট ছিল। গত ৬০ বছর ধরে পারিবারিকভাবে এ কাজের সাথে জড়িত তিনি। ২০১০ সালে শ্যাম কর্মকারের বড় ছেলে আশীষ কর্মকার মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। ২০১২ সালে মারা যান তিনি।। বিধবা হয়ে পড়ে তার স্ত্রী ঝুমা কর্মকার। বৃদ্ধ শ্বশুড় ও দেবর অসীম কর্মকারের পাশাপাশি কামারশালায় কামারের কাজে সহযাগিতা শুরু করেন ঝুমা। 
কিছুদিন পর ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হন অসীম কর্মকারও। দুই ছেলের চিকিৎসায় যথাসর্বস্ব হারিয়ে ফেলেন শ্যাম কর্মকার। ৫ বছর ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে ২০১৯ সালে ৫ নভেম্বর অসীমও মারা যায়। দুই ছেলেকে হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বৃদ্ধ বাবা শ্যাম কর্মকার (৮০)। 
এমনই মূহুর্তে দুই ছেলের দুই বিধবা স্ত্রী ঝুমা রানী কর্মকার ও পুতুল রানী কর্মকার স্বামীর পরিবারের হাল ধরতে বন্ধ হয়ে যাওয়া তাদের কামারশালায় পুরুষের মতো কাজ শুরু করেন। কারিগরের পাশাপাশি নিজেরা শারীরিক শ্রম দিয়ে প্রতিদিন দা, বটি, কুঠার, হাতুড়ি, ছেনা, চাকু ও খুন্তিসহ লোহার জিনিস পত্র তৈরি করছেন। আগুন এবং লোহার সাথে এ দুই নারীর গভীর মিতালীতে কামারশালা থেকে হওয়া আয় দিয়ে তাদের ৭ সদস্যের পরিবারের জীবিকা চলছে। 
তাদের শ্বশুড় শ্যাম কর্মকার বর্তমানে বয়সের ভারে ক্লান্ত। চোখেও কম দেখেন, সারা শরীরের ফোসকা পড়ে চামড়া উঠে যাচ্ছে। বৃদ্ধ শ্বশুড়ের চিকিৎসা, ভরন-পোষণ, এই দুই নারীর দুই সন্তান অন্তু কর্মকার ও অন্তরা কর্মকারের লেখাপড়া ও ননদের দেখভাল চলে এ কাজে অর্জিত টাকা দিয়েই। 
নারী কামার পুতুর রানী কর্মকার জানান, স্বামীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে দুই জা মিলে কাজে লেগে পড়ি। দিন-রাত লোহা ও আগুনের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছি। সংসারতো চালাতে হবে। 
ঝুমা রানী কর্মকার জানান, যতদিন শক্তি সামর্থ আছে ততদিন স্বামীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাব। 
আমতলীর ব্যবসয়ি সমিতির সভাপতি হারুন অর রশিদ হাওলাদার জানান, ঝুমা ও পুতুল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমি একটি পেশায়  রয়েছে। সারা জেলায় তারা দুজন ছাড়া আর কোন নারী কামার নেই।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান জানান, দুই নারী স্বামীর পরিবারের ঐতিহ্য কামার শিল্পকে ধরে রাখতে জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেলে তারা এ পেশায় আরও উন্নতি করতে পারতেন।