ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১০:৫৭:০৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের

ডাকসুতে মেয়েদের সংখ্যা কেন হাতেগোনা

বিবিসি বাংলা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ১৮ মার্চ ২০১৯ সোমবার

দীর্ঘ ২৮ বছর পর যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন হল তখন অনেকেই ধারণা করেছিলেন যুগের চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে নারীদেরও সামনের কাতারে দেখা যাবে।

সামনের কাতারে তাদের ঠিক‌ই দেখা গিয়েছিল কিন্তু বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামের সময়। তবে ডাকসুর নির্বাচনে নেতৃস্থানীয় পদে তাদের দেখা যায় নি।

ডাকসু নির্বাচনে যেসব কেন্দ্রে ভোট জালিয়াতির ঘটনার অভিযোগ এসেছে, সেখানে মেয়েদের তীব্র প্রতিবাদ এবং বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এছাড়াও গত বছর কোটা সংস্কার আন্দোলনেও মেয়েদের অংশ গ্রহণ ছিল সামনের সারিতে।

কিন্তু ডাকসু আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত থাকলেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুতে মেয়েদের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা।

রোকেয়া হলে ভিপি পদে স্বতন্ত্র জোট থেকে দাঁড়িয়েছিলেন মৌসুমী।

তিনি বলছিলেন কেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি প্রার্থী হননি।

"কোন ব্যানারের আন্ডারে করতে চাই নি। ছাত্রজীবনে রোকেয়া হলে আমার যে পরিমাণ অর্জন, আমার কোন ছাত্র সংগঠনের সাথে সেই অর্জনটা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো বৈধ আন্দোলনে আমার সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। যতগুলো প্যানেল হয়েছে আপনারা দেখেছেন যে, এর মধ্যে থাকতে হলে কোন না কোন দলীয় সংগঠনের আন্ডারে যেতে হবে। আমাকে নিশ্চয় ছাত্রলীগ একটা পদ দেবে না,"।

কেন্দ্রীয় কমিটিতে হাতে গোনা যে কয়জন ছাত্রী প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে একজন প্রার্থী শ্রবনা শফিক দীপ্তি। স্বতন্ত্র জোট থেকে প্রার্থী হওয়ার পর তাকে নানা ধরণের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে বলে তিনি বলছিলেন।

"আমি যেহেতু কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত না আমি কোন ফান্ড পাইনি। আমার টিউশনির টাকা দিয়ে লিফলেটিং করেছি। আবার আমার নামে ভুয়া লিফলেট গিয়েছে। আমি ছেলেদের হলে পৌঁছাতে পারিনি। আমাকে শুধু নারী ভোটারদের উপর নির্ভর করতে হয়েছে," বলেন শ্রবনা শফিক দীপ্তি।

তিনি আরো বলছিলেন "আমার যে প্রতিদ্বন্দ্বী (ছাত্রলীগ) ছিল সে সবকটা ছেলেদের হলে গিয়েছে। প্রতিদিন ৪০ হাজার লিফলেট ছাপিয়েছে। আমি তো ছেলেদের হলে যেতে পারিনি।"


সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যেসব আন্দোলন হয়েছে সেখানে মেয়েরা তীব্রভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।

মিছিলে, মিটিংএ, অবস্থান ধর্মঘট, অনশন এসব কর্মসূচিতে তারা অংশ নিয়েছে, যার নজির দেখা গিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ডাকসু নির্বাচন পরবর্তীতে যে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল ঘণ্টায় ঘণ্টায় সেসব সময়গুলোতেও।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে-জানার চেষ্টা করেছিলাম মেয়েরা কি নেতৃত্বের জায়গা আসতে পারছে না, নাকি চাচ্ছে না?

একজন বলছিলেন, "যেহেতু ২৮ বছর পর (নির্বাচন) হচ্ছে, মেয়েদের অভিজ্ঞতা ছিল না। তাই সবাই হয়ত কেন্দ্রীয়ভাবে যাওয়ার চেয়ে হলে থাকাটা বেটার মনে করেছে। পরবর্তীতে আবার যখন নির্বাচন হবে, তখন আমি মনে করি আরো বেশি মেয়ে সেন্ট্রালে যাবে।''

"আসলে এরা মুখে মুখে খুব প্রগতিশীলতার কথা বলে,'' বলছিলেন আরেক শিক্ষার্থী, ''কিন্তু মনে মনে সেই সনাতনী হীনমন্যতাটাই জেগে উঠে। সেখান থেকে তারা বের হতে পারেনি, সেই পুরুষতান্ত্রিকটা থেকে। যার ফলে মেয়েদের যোগ্যতা থাকার পরেও তারা ঐখানে স্থান করে নিতে পারছে না বা (তাদের স্থান করে নিতে) দিচ্ছে না।''

এবারের ডাকসু নির্বাচনে যতগুলো প্যানেল অংশ নিয়েছে সেখানে ভিপি পদে মাত্র একজন মেয়ে অংশ নেন। অরণি সেমন্তি খান নামে এই প্রার্থী স্বতন্ত্র ভাবে দাঁড়ান এবং ভোট পান ২৬৭৬টি।

আর যিনি ভিপি হয়েছেন সেই নুরুল হক পেয়েছেন ১১০৬২ ভোট।

অন্য কোন প্যানেল থেকে ভিপি, জিএস বা এরপরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদ রয়েছে সেসব পদে কোন প্রার্থী দেয়া হয় নি।

তার অর্থ কি মেয়েদের যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং সমাজবিজ্ঞানী তৌহিদুল হক বলছিলেন, মেয়েদের যোগ্যতার ঘাটতি নেই। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা সবচেয়ে বেশি দরকার।

"আজকে আমরা সাধারণ পদ বা সদস্য পদে মেয়েদের দেখছি। কিন্তু আমরা প্রত্যাশা রাখতে চাই, আশা রাখতে চাই যে ভবিষ্যতে ডাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় পদগুলোতে আমরা নারী নেতৃত্বের উপস্থিতি দেখবো," মি. হক বলছিলেন।

"তবে এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা এবং সক্রিয় ভূমিকা সবচেয়ে বেশি এবং তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো যদি সোচ্চার থাকে,সহনশীল থাকে এবং নারী নেতৃত্বের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান রাখে, তবেই আমি মনে করি এটা সম্ভব," বলছিলেন মি. হক।

ডাকসুর নব নির্বাচিত কমিটির ২৫টি পদের মধ্যে মাত্র ৭টি পদে মেয়েরা নির্বাচিত হয়েছে।

এর মধ্যে একজন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সম্পাদক, অন্যজন কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়ার সম্পাদক ।