ঢাকা, মঙ্গলবার ১৯, মার্চ ২০২৪ ১৬:২৩:৪৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খুলনায় পৌঁছেছেন সুইডেনের রাজকন্যা মীমের বিষয়ে যে আশ্বাস দিলেন জবি উপাচার্য হিলিতে পেঁয়াজের দাম কেজিতে কমেছে ৫০ টাকা ভোরে গাজায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত ২০ রোহিঙ্গাদের জন্য ইউএনডিপিকে যে আহ্বান জানালেন প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দগ্ধ আরো শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু

তরুণ লেখক প্রকল্প: সেই সব জলপতনের গান-৩

শান্তা মারিয়া | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৫ পিএম, ২৯ আগস্ট ২০১৯ বৃহস্পতিবার

মতিন রায়হান, শান্তা মারিয়া ও মনিরা মীম্মু।

মতিন রায়হান, শান্তা মারিয়া ও মনিরা মীম্মু।

বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্প নিয়ে সেসময় অনেক বিরুপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে। অনেকে বলতেন, লেখক কি প্রকল্প দিয়ে বানানো সম্ভব? এখানে কি কবিতা লেখা শেখানো হয়? নিবিড় মৎস্য চাষ প্রকল্প ও উচ্চ ফলনশীল লেখক, লেখক বানানোর কারখানা ইত্যাদি অনেক মন্তব্য, হাসি তামাশা করতেন অনেকেই।

প্রকৃতপক্ষে লেখক প্রকল্প কখনও বলেনি যে তারা লেখক বানাবে। যে তরুণরা ইতোমধ্যেই লিখছে তাদের আরও পরিশীলিত করাই ছিল প্রকল্পের উদ্দেশ্য। সেসময় অনেকেই লিখতেন ভালোভাবে ছন্দ, ব্যাকরণ না জেনে। বিশ্বসাহিত্য ও বাংলা সাহিত্য বিষয়ে বেশ কয়েকজনের বিন্দুমাত্র ধারণাও ছিল না। লেখালেখি বা সাহিত্যচর্চা, সাহিত্যের ইতিহাস এগুলোকে হালকাভাবে নিয়ে, শিল্পের প্রতি কোনরকম দায়বদ্ধতা ছাড়াই অনেকে লিখতেন। সকলের কথা বলছি না অবশ্যই, তবে কারও কারও বেলায় এটা খুবই সত্যি ছিল। যাদের মধ্যে কিছুমাত্র সম্ভাবনা আছে তাদের সৃজনী শক্তির বিকাশে সহায়তা করাই ছিল লেখক প্রকল্পের লক্ষ্য। তাদের মননের দিগন্ত প্রসারিত করা, তাদের সৃজনশীলতা বিকাশের অনুকুল পরিবেশ তৈরি করা ছিল এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
 
অন্যদের কথা জানি না, আমি নিজে এই প্রকল্প থেকে যথেষ্ট উপকৃত হয়েছিলাম। আরও বেশ কয়েকজন উপকৃত হয়েছে একথা বলতে পারি। আর্থিকভাবেও প্রকল্পটি বেশ সহায়ক ছিল সকলের জন্য। প্রতি মাসে তিনহাজার টাকা করে দেওয়া হতো। সেযুগে তিন হাজার টাকা খুব কম নয়। প্রকল্প থেকে একাডেমির খরচে প্রত্যেকের একটি করে বই প্রকাশ করাও ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য।  

লেখক প্রকল্পে আমাদের প্রত্যেকেরই একটি করে বই লেখার কথা ছিল। সে কথা অবশ্য সকলে রক্ষা করেননি। কয়েকজনের বই শেষ অবধি আলোর মুখ দেখেনি। যাদের বই প্রকাশিত হয়েছিল তাদের মধ্যে কয়েকটি বইয়ের নাম আমি এখানে উল্লেখ করছি। তিতাস পুরাণ (মতিন রায়হান), অসমাপ্ত শিরদাঁড়া (চঞ্চল আশরাফ), আসমুদ্র আফ্রিকা (ফাতিমা তামান্না), রূপের নদী (সাকী মোহাম্মদ), কে তুমি ইভের ছায়া (সিকান্দার ফয়েজ), জল মার্বেলে অবগাহন (শাহিন রিজভি), শীতাভ সনেটগুচ্ছ ও অন্যান্য (বায়তুল্লাহ কাদেরী), অন্তর নগর ট্রেন (টোকন ঠাকুর), উজান জোয়ান (শাকিল মামুদ), ভূগোলের সবুজ বাকল (শামিম সিদ্দিকি), জলাত্যয় জোনাক (মনিরা মীম্মু), রাজর্ষি ইমার্গো ও আধুনিক রূপকথা (সেলিনা শিরীন শিকদার), জন্মের পিছনে যাব (কুমার বিপ্লব), আঁধার যান (আয়শা ঝর্না), কবিতার চিত্রকল্প (নাজিব তারেক), সাগর ছুঁয়েছে আকাশ আমি তোমাকে (ফয়জুল আলম পাপ্পু), কেতকীর প্রতি পক্ষপাত (তপন বাগচী), তিথিক্ষয় ও আকাশগঙ্গা (মহিবুল আলম), বাপী শাহরিয়ার: অকাল প্রয়াত ছড়াশিল্পী (আইরীন নিয়াজী মান্না), সুফিয়ার গাথা (জেনিস মাহমুদ), কাঠ চেরাইয়ের শব্দ (শোয়াইব জিবরান), হাতের আঙুলে খেলা করে পাঁচ পৃথিবীর রোদ (কবির হুমায়ূন)।  আরও অনেক বইয়ের নাম ভুলে গেছি।

অনেক বিখ্যাত লেখকের লেখা বইয়ের কথা মনে নেই। কিন্তু একটি বইয়ের নাম প্রায় প্রতিদিন মনে পড়ে। বইটি প্রণয় পলিকার্প রোজারিওর লেখা ‘হাত পুড়ে গেছে জলে’। এক আড্ডায় লেখক আমাকে বলেছিলেন, মানুষের হাত পোড়ে আগুনে। জল হচ্ছে শীতল। অথচ ‘হাত পুড়ে গেছে জলে’ বলতে তিনি বুঝিয়েছেন বিপরীত স্বভাব ও চেতনা ইত্যাদি ইত্যাদি। যেকথাটি তখন তাকে বলতে পারিনি কিন্তু তখনি মনে এসেছিলো যে, জল যদি গরম হয় তাহলে তাতে মানুষের হাত পোড়ে বৈকি। প্রতিদিন রান্না করার সময় গরম জল দেখলেই আমার মনে পড়ে ‘হাত পুড়ে গেছে জলে’।

কবির হুমায়ূন বলেছিলেন তার বইয়ের নাম ‘হাতের আঙুলে খেলা করে পাঁচ পৃথিবীর রোদ’ কারণ একটি শিল্পোতীর্ণ কবিতা ধারণ করতে পারে সমগ্র বিশ্বকে। ব্যাখ্যাটা আমাকে তখন চমত্কৃত করেছিল।  

তরুণ লেখক প্রকল্পের বইগুলো প্রকাশ করেছিল বাংলা একাডেমি। বইগুলোর প্রচ্ছদ এঁকেছিলেন কাইয়ুম চৌধুরী, সমর মজুমদার, হাশেম খান, মামুন কায়সার, উত্তম সেন এবং আরও কয়েকজন নামজাদা শিল্পী। বইগুলোর কম্পিউটার কম্পোজ করেছিলাম আমরা নিজেরাই। তখন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড ছিল না। আমরা ম্যাকিনটস কম্পিউটারে ওয়ার্ড পারফেক্ট এ শহীদলিপিতে কম্পোজ করেছিলাম। কম্পিউটার শেখার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিল একাডেমি। আর প্রকল্পের জন্য বিশেষ কম্পিউটার কক্ষেই আমরা কাজগুলো করতাম। আমাদের কম্পিউটার চালানো শিখিয়েছিলেন শহীদ ভাই। তিনি এখন বাংলা একাডেমিতে উচ্চতর পদে কর্মরত আছেন। সুদর্শন শহীদ ভাইয়ের প্রেমেও কিন্তু কয়েকজন লেখক (নারী) পড়েছিলেন কিন্তু তাদের নামগুলো না হয় আর নাই বললাম।

বলছিলাম আমাদের বইগুলোর কথা। অনেকগুলো বইয়ের সঙ্গে জড়িয়ে আছে আনন্দ-বেদনার ছোট ছোট গল্প।  আমার বইটির নাম ‘সকল দোকান বন্ধ ছিল’। এই নামটি স্থির করেছিলাম অনেক তর্ক বিতর্ক  আর বিনিদ্র রাতের চিন্তার পর। প্রথমে নাম রেখেছিলাম ‘ইভের জন্য একটি সন্ধ্যা’। তারপর বিশেষ একটি কারণে সেটি বদলে ফেলি। এর পর নাম রাখি ‘কবোষ্ণ পূর্ণিমা’। সেটিও পালটাই। ‘সকল দোকান বন্ধ ছিল’ নামটির পিছনে আমার ব্যাখ্যা ছিল প্রতিটি মানুষ একেকটি দোকান। সে কিছুর বিনিময়ে কিছু দেয়। কিন্তু সেই দোকানও আবার সর্বদা খোলা থাকে না। মানুষ এতটাই নিঃসঙ্গ যে, প্রয়োজনে কোন দোকানই সে খোলা পায় না। বইটির প্রুফ দেখে বানান সংশোধন করে দিয়েছিলেন অনুভাই। সেজন্য তার প্রতি আমি কোনদিন কৃতজ্ঞতা জানাইনি। বন্ধুকে কৃতজ্ঞতা জানাতে হয় না।

অনুভাই তার বইটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন। সেটি এখনও রয়েছে। ‘বাংলাদেশের কবিতা প্রসঙ্গে: ১৯৪৭-৯৬’। তার একটি প্রবন্ধের কথা আমার মনে পড়ে। ‘ষাটের পৃথক পালঙ্কে আবুল হাসান’। এর আগে আমি কবি আবুল হাসানের কবিতা কয়েকটি পড়েছিলাম এবং আবৃত্তি করতাম। কিন্তু এই প্রবন্ধটি পড়ার পরই আবুল হাসান সম্পর্কে বিশদ ধারণা জন্মায়। আমি এই অনন্য কবির কবিতা পড়তে শুরু করি, মুগ্ধ হই, ভালোবাসি। সে মুগ্ধতা আজও কাটেনি।

অনু ভাইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল তার জীবনের শেষ অবধি। তিনি যখন ভোরের কাগজে, যুগান্তরে, ডেসটিনিতে, তখন সব সময়ই সাহিত্য পাতায় আমার কবিতা প্রকাশ করেছেন।  যখন আবার বাংলা একাডেমিতে ফিরে এলেন তখনও তার সঙ্গে আড্ডা হয়েছে, গল্প হয়েছে।  অনুভাই সম্পর্কে পরে আবার বলবো।

প্রত্যেকের বইয়ের নামকরনের ইতিহাস অবশ্য আমার জানা নেই। মতিন রায়হান বলেছিলেন তিনি তিতাস পাড়ের কবি। তাই তার ‘তিতাস পুরাণ’ লেখা। তিনি শিকড়ের সন্ধানে নিবিড় মগ্নতায় লিখছিলেন কবিতাগুচ্ছ। তার পরিকল্পনা ছিল বাংলাদেশের প্রতিটি নদীকে নিয়ে একটি করে কবিতা লিখবেন। জানি না সে পরিকল্পনার বাস্তবায়ন কতদূর। তবে তিতাস পুরাণে শুধু নদীর প্রতি প্রেমই নয়, নারীর প্রতি প্রেমও ছিল বৈকি। মতিন তখন এক জলধারায় নিমগ্ন ছিলেন। যদিও সে নদী ভিন্ন সাগরে প্রবাহিত হয়েছে পরে, রেখে গেছে ‘তিতাস পুরাণে’ অনবদ্য কিছু উচ্চারণ।  

তপন বাগচী তখন তার ভবিষ্যত স্ত্রী কেয়ার সঙ্গে প্রেমে ধ্বনিত ছিলেন। তার কবিতার বই স্বাভাবিকভাবেই ‘কেতকীর প্রতি পক্ষপাত’। মহিবুল যখন তার গল্পগুলো লিখছিল তখন প্রতিটি গল্প আমাদের পড়ে শোনাতো। তার ‘তিথিক্ষয় ও আকাশগঙ্গা’র সঙ্গে আমার পরিচয় অতি নিবিড়। মহিবুল তার লেখায় বাংলাদেশের গ্রামের একেবারে কাদামাটির সোঁদা গন্ধটুকু তুলে আনতে পেরেছিল। অথচ এরপরই সে চলে যায় দেশ ছেড়ে। কিন্তু আমার মনে হয়, মহিবুল শারিরীকভাবে নিউজিল্যান্ডে থাকলেও আজন্ম গ্রামীণ বাংলাদেশকে ধারণ করে রয়েছে।  

শাহিন রিজভির ‘জল মার্বেলে অবগাহন’-এ জলমার্বেল মানে চোখ। সে তখন চোখের গভীরে লুকিয়ে থাকা সত্য খুঁজে বেড়াচ্ছিল হয়তো। তার এই বইয়ের কবিতাগুলোর মধ্যে ঘুমিয়ে আছে অনেক গভীরতর গল্প। আমাদের কোন একটি ঘটনা, কোন একটি ‘মানুষী দুর্বলতা’র ছাপ পড়েছে সেসময়কার কবিতায়। অনুভূতি বদলে যায়, আবেগ প্রবাহিত হয়ে যায় এক নদী থেকে ভিন্ন নদীতে, আমাদের দেহে বয়সের ছাপ পড়ে, কিন্তু কবিতা তো স্থির যৌবনা। সেই সময়কার কবিতাগুলো পড়লে অজান্তেই মনের পর্দায় ঘটনাগুলো ভেসে ওঠে। জানি না কখনও সেই ঘটনাগুলো বলবো কিনা।

মনিরা মীম্মু বলেছিল সে চাঁদ, তারা, সূর্য,  কিছুই নয়, সে শুধু জোনাকের উজ্জ্বলতা নিয়ে ক্ষণিকের আলো দিতে এসেছে, তাই সে জল প্রত্যাশী জোনাক (জলাত্যয় জোনাক)। মৃন্ময়ী কন্যা মীম্মুর এই কথাগুলোর মধ্যে কি কোনো অভিমান প্রচ্ছন্ন ছিল? এর উত্তর আমি জানি, কিন্তু বলবো না।  সে অভিমানের ঝলক পড়েছিল তার কবিতায়। তাই সেই কবিতাগুলোয় রয়েছে নরম আলোর ছায়া। মীম্মু এর পরে বিশ-বাইশ বছর সংসার, সন্তানের বলয়ে ঘুরপাক খাওয়া নির্ভেজাল সংসারী হয়ে যায়। তার স্বামী আইয়ুব ভুঁইয়া প্রখ্যাত সাংবাদিক। সেই সুবাদে মীম্মুর সঙ্গে প্রেসক্লাবে মাঝে মধ্যে আড্ডা হয়। কবিতাপত্রে তার এখনকার কবিতাগুলোও পড়ি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তার সেই সময়কার কবিতাগুলোর মতো মর্মস্পর্শী নয় এগুলো। হয়তো অভিমানটা কবিতার জন্য উপকারী।
বলছিলাম আমাদের সে সময়কার আলো-আঁধারির দিনগুলোকে। সেই আলো-আঁধারি সন্ধ্যার নয়, ঊষার। তখনও ‘দিনের তাপে রৌদ্রজ্বালায়’ পূজার থালার ফুলগুলো শুকিয়ে মমি হয়ে যায়নি।

রণক মুহম্মদ রফিক তখন লীথির সঙ্গে হাঁটতে ব্যস্ত অন্যদিকে বায়তুল্লাহ কাদেরী খুঁজছিলেন বৈদিক সভ্যতার বিস্মৃত উচ্চারণ। আমার মনে আছে বায়তুল্লাহ তখন বলেছিলেন, তিনি প্রতিদিন একটি করে সনেট লেখেন। সেই সনেটগুলো এই বইতে স্থান পেয়েছে। প্রতিদিন একটি করে সনেট? সম্ভব? তখন সম্ভব ছিল। সত্যিই। আমরা প্রত্যেকেই তখন এমনি সৃষ্টিশীলতায় অবগাহন করছিলাম।  
সিকান্দার ফয়েজ ভাই তখন পত্রিকায় (যতদূর মনে পড়ে) চাকরি করতেন। আমার চেয়ে বেশ খানিকটা সিনিয়র ছিলেন। প্রথমদিকে তার সঙ্গে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল। তুচ্ছ কারণে একটু মনোমালিন্য হলেও পরে আবার ঠিকঠাক হয়ে যায়। তার বইটির নাম ছিল ‘কে তুমি ইভের ছায়া’। সেই বইয়ের কবিতাগুলো যখন লিখছিলেন আমাদের পড়ে শোনাতেন। ভালোবাসার গভীর কিছু উচ্চারণে তা সমৃদ্ধ ছিল বলে মনে পড়ে। হয়তো তিনি তখন কোনো অধরা প্রতিবিম্বকে তুলে আনতে চেয়েছিলেন কবিতায়।

বন্ধু শামীম সিদ্দিকিকে আমি বলতাম টি এস এলিয়ট। কেন? শামীম ছিল মহা আাঁতেল। যে কোন বিষয়কে ঘুরিয়ে না বললে, স্বতঃসিদ্ধ নিয়েও তর্ক না তুললে তার শান্তি হতো না। নরসুন্দার তীর থেকে শুরু করে তার অভিযাত্রা ছিল মিসিসিপি অবধি। ভূগোলের সবুজ বাকল বিশ্লেষণ করে সে দেখতে চাইতো অদেখা অনেককিছু। সব সময় অমন আঁতলামী আমাদের পরিহাসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। হ্যা, পরিহাস। তারুণ্যের বিদ্বেষহীন সমধুর পরিহাস। এমন হাসি তামাশা আমরা অনেকেই অনেককে নিয়ে করতাম। সেটা ছিল বন্ধুত্বেরই ভিন্নতর প্রকাশ। তখনও আমরা নেহাতই সেকেলে ছিলাম। একালের কবির লড়াই মানে পরষ্পর কাদা ছোড়াছুড়ি আর কুশ্রী ব্যক্তিগত ফেসবুকীয় আক্রমণ আমাদের অজানা ছিল।  

এমনি প্রত্যেকের বই, প্রত্যেকের লেখার সঙ্গেই জড়িয়ে ছিল নিজস্ব রক্তক্ষরণের কাহিনি। বড় বেশি দরদ মিশে ছিল প্রতিটি উচ্চারণে। সেসময়কার লেখাগুলোর মধ্যে রয়ে গেছে আমাদের ভালোবাসার ইতিহাস, আমাদের নিজস্ব নদীর প্রবাহ ও একান্ত বৃষ্টির গান।

গত বইমেলায় বাংলা একাডেমির তরুণ লেখক প্রকল্পের বইগুলো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি হতে দেখলাম। বইগুলো মলিন, ধুলো মাখা, পোকায় কাটা। ভীষণ মায়া হলো। আমাদের জীবন্ত হৃদয়গুলোকে, সেই স্বপ্নমুখর তরুণবেলাকে, ভালোবাসার দিনগুলোকে যেন ফেলে রাখা হয়েছে অনাদরে, অবহেলায়, পথের পাশে।

(চলবে)