ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৮:০৪:৩৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

তিমির বিনাশিনী বেগম রোকেয়া: তপতী বসু

তপতী বসু | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:৩১ এএম, ৯ ডিসেম্বর ২০২১ বৃহস্পতিবার

বেগম রোকেয়া ও পায়াবন্দরে তার বসতভিটার একাংশ।

বেগম রোকেয়া ও পায়াবন্দরে তার বসতভিটার একাংশ।

বেগম রোকেয়া৷ যাঁর জন্ম অখন্ড ভারতের রংপুর শহরের সাত মাইল দক্ষিণের পায়রাবন্দ গ্রামে৷ জমিদার পরিবার-বুঝতে অসুবিধা হয়না! ধনাঢ্য-যাঁদের অন্তত সম্পদের অভাব নেই৷ বাবা ছিলেন জ্ঞান পিপাসু কিন্তু তখনকার দিনে, স্বাভাবিকভাবেই রক্ষণশীল৷ পর্দাপ্রথা এমনই ছিল যে, এমনকি বহিরাগত নারীদের সামনেও বাড়ির মেয়েরা আসতে পারতেন না যখন-তখন৷

কঠোরতম অনুশাসনের সেই পরিবারের ছোট্ট মেয়ে রোকেয়ার লেখাপড়া শেখার অদম্য আগ্রহ দিয়েছিলেন ঈশ্বর৷ মেম শিক্ষিকার কাছে তাঁর প্রাথমিক পাঠের শুরু কোলকাতায়, বড় বোনের শ্বশুরবাড়িতে! নিজ বাড়িতে ফিরে এলে বড়ভাই ইব্রাহিম সাবের তাঁকে পড়তে সাহায্য করেছিলেন৷ অতি গোপনে, রাতের অন্ধকারে মোমের আলোয় দাদার কাছে শিখতেন ইংরেজি!আদরের 'রকু'কে বাংলা শিখিয়েছিলেন বড়বোন৷ জ্ঞানের যে বিশাল পৃথিবী, সেখানে আরবী-ফারসী ভাষাকেও আয়াসে আপন করে নিয়ে ছিলেন রোকেয়া৷

রকু' যখন বছর ষোলোর, মেয়েদের অনালোকিত জীবনে বিয়ের জন্যে সেটা ছিল অনেক বেশি বয়স! তাঁর বিয়ে হয়েছিল বিহারের ভাগলপুেরর সাখাওয়াত হোসেনের সাথে৷ বিপত্নীক, উর্দুভাষী, চল্লিশ বছরের মানুষটি ছিলেন রংপুরের পরিবারটি থেকে অনেক আলাদা, কুসংষ্কারমুক্ত-উদার-শিক্ষানুরাগী এবং ধীর-গম্ভীর৷ রোকেয়ার বিদ্যানুশীলন আর প্রতিভা বিকাশের উপযোগী পরিবেশ তৈরি আর আনুসঙ্গিক সমস্ত সহযোগিতা তিনি করেছিলেন-আমৃত্যু!

সরোজিনী নাইডু সম্পাদিত ‌‌‘indian ladies magazine’ পত্রিকায় রোকেয়ার একমাত্র উপন্যাস 'পদ্মরাগ' সাখাওয়াতের উৎসাহেই প্রকাশিত হয়৷ সাহিত্য জীবনের এই সাফল্যের মূহুর্তে স্বামীর চোখ নষ্ট হয়ে যায়৷ বিহার থেকে কোলকাতা দীর্ঘ সময় স্বামীকে সুস্থ করার আপ্রাণ চেষ্টায় সাহিত্য রচনায় মন দিতে পারেননি তিনি! তারপর তের বছরের যৌথ জীবনের সমাপ্তিতে রোকেয়া তখন একা-বড় একা! দুটি কন্যা সন্তান এসেছিল, বাঁচেনি৷ তবু, ঊনত্রিশ বছরের রোকেয়ার জীবনে নতুন যাত্রা শুরু হল-ভয়হীন অন্তরে, অচেনা জগতে৷ সেখানে নিজের আসন জায়গা করে নিয়েছিল বাঙালি পরিবারের মেয়েদের মনে-মননে!

অসংখ্য লেখক আর অজস্র বই জোয়ারে পুরুষ লেখকদের ভিড়ে চোখ টানে যাঁর ছবি, তিনি ‘বেগম রোকেয়া’ ৷ মেয়েদের তিনি অনুপ্রেরণা ৷ বাংলার পশ্চিমে ‘ভগিনী নিবেদিতা’, পূর্বে বেগম রোকেয়া৷ ভাগাভাগির সীমারেখাকে ছাড়িয়ে, যাঁরা শুধু আলো দেখাননি, নিজেরাই আজও হয়ে আছেন অন্তহীন পথের — আলোক শিখা!

মৃত্যুর পরে স্বামীর সাথে বেগম রোকেয়াকে কবর দেওয়া হয় গঙ্গা নদীর তীরবর্তী ‘পানিহাটি’ তে৷ রোকেয়া কলকাতায় বসবাস করতেন। তাঁকে সে সময়ের মূল শহর থেকে অনেক দূরে পানিহাটিতে সমাহিত করার পিছনে একটি কারণ ছিলো। পানিহাটিতে বেগম রোকেয়ার আত্মীয়-স্বজনের পারিবারিক কবরস্থান। স্যার আবদুল করিম গজনবী ছিলেন রোকেয়ার বড় বোনের বড় ছেলে। তিনিই সেখানে রোকেয়াকে সমাহিত করায় উদ্যোগী ছিলেন।

রোকেয়াকে সেখানে সমাহিত করার কারণ হিসেবে আরেকটি মতও রয়েছে ৷ ১৯৩২ সালে বেগম রোকেয়ার মৃত্যুর পর কলকাতার রক্ষণশীল সমাজের একটি অংশ তাঁকে কলকাতায় কবর দিতে আপত্তি জানায়। তাদের কাছে শিক্ষা ও জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ায় অনন্য অবদান রাখা এ নারী ধর্মদ্রোহিণী ছাড়া কিছুই নয়। তাদের অভিযোগ, মুসলিম নারীদের তিনি পাপের পথে চলতে উৎসাহ দিয়েছিলেন! রোকেয়ার জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে পানিহাটিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য জমি খোঁজা হচ্ছিল। উদ্যোক্তারা স্থানীয় পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সহায়তা চাইলেন। পৌরসভা থেকে তাদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল রোকেয়ার ওই আত্মীয়ের পারিবারিক সম্পত্তির একটি অংশ। তবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কিংবা পৌরসভা কেউই জানত না, এ এলাকাতেই রয়েছে নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার কবর। পশ্চিমবঙ্গের স্পিকার মনসুর হবিবুল্লাহ নব্বইয়ের দশকে উদ্যোগী হন রোকেয়ার কবরস্থানটি সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে। সে সময়ে পানিহাটি পৌরসভার পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে রোকেয়াকে সমাহিত করার স্থানটির সন্ধান মেলে।

উপমহাদেশের মুসলিম নারীরা তার সময় শিক্ষায় অনেক পিছিয়ে ছিলেন। মুসলিম নারীদের শিক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে তার ভূমিকা ছিল ‘অবরোধ-বাসিনী’ হয়ে অবরোধ উন্মোচনের৷

রোকেয়ার জীবন ও আদর্শকে সম্মান দিয়ে বাংলাদেশে ৯ ডিসেম্বর তারিখটি ‘রোকেয়া দিবস’ হিসাবে পালিত হয়৷ সমাজের বিশিষ্ট নারীদের অনন্য অর্জনের জন্য আছে ‘বেগম রোকেয়া পদক’৷

তথ্যঃ উইকিপিডিয়া৷