ঢাকা, বুধবার ২৪, এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩৪:৪৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ফের কমল স্বর্ণের দাম মক্কা ও মদিনায় তুমুল বৃষ্টির শঙ্কা খালেদার গ্যাটকো মামলায় চার্জগঠনের শুনানি পেছাল কুড়িগ্রামে তাপদাহ: বৃষ্টির জন্য নামাজ আদায় থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

নারীবান্ধব গণপরিবহন এখন সময়ের দাবি

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৬:০৮ পিএম, ২৭ নভেম্বর ২০২০ শুক্রবার

নারীবান্ধব গণপরিবহন সময়ের দাবি

নারীবান্ধব গণপরিবহন সময়ের দাবি

বাসা থেকে বেরিয়েছেন আটটা দশ মিনিটে। সোয়া আটটায় এসে পৌঁছেছেন কমলাপুর বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে। আর এখন বাজে পৌনে নয়টা। এতক্ষণ পর্যন্ত প্রায় ২৫ টির মত তার রুটের গাড়ি চলে গেলেও উঠা সম্ভব হয়নি মনিকার। যাবেন কাওরান বাজার।

আর বেশি দেরি হলে তখন অফিসে যাওয়া-না যাওয়া সমান। কারণ আধঘন্টা লেইট হলে অফিসের রেজিস্ট্রি খাতায় নামের পাশে লাল কালি পড়ে যাবে। উপায় না দেখে এখন সিএনজি চালিত অটো রিকশার দিকে এগোয় মনিকা।

অন্যসময়ে সে সিএনজির দিকে ভুলেও যায়না। কারণ এই সময় সিএনজির ভাড়া আকাশ ছোঁয়া। আর সেই ভাড়া দেওয়ার মত অবস্থা মনিকার নেই। আর তাই এমন সময় সিএনজিই একমাত্র ভরসা। এতে বেশ কিছু টাকা গেলেও উপায় নেই।

মনিকা বলেন, এটা প্রায় নিত্যদিনের ঘটনা। এভাবে রিকশা ভাড়া দিয়ে যেতে গেলে বেতনের একটা মোটা অংকই গাড়ি ভাড়ার পেছনে ব্যয় করে ফেলতে হয়। আর সকাল বেলা এমন অবস্থা হয় যে আমার অন্য কোন উপায় থাকে না। আর এসময় অফিসগামী মানুষের পাশাপাশি থাকে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়ে আর তাদের অভিভাবকরা। আবার কোন কোন দিন গাড়িতে উঠতে পারলেও সেখানে পড়তে হয় ঝামেলায়। সিটতো পাওয়াই যায় না। আবার অনেকসময় পুরুষ বসে থাকে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনে। তাদের উঠতে বললে কেউ কেউ উঠে গেলেও প্রায়ই সময়ই ঝগড়া করতে হয়। আবার অনেকে বাজে মন্তব্যও করে।

সায়মা ইসলাম নামের স্কুলগামী এক ছাত্রীর মা জানান, প্রতিদিনই যুদ্ধ করে বাসে উঠতে হয়। আর আমাদের সেই সামর্থ্য নাই যে প্রতিদিন সিএনজি, রিকশা বা স্কুলের গাড়ি ব্যবহার করব। তাই এই পাবলিক বাসই আমাদের ভরসা। মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে যাই অফিসে।

উপরের ঘটনা দুটি শুধু এই দুই নারীর ক্ষেত্রেই নয়, গণপরিবহন ব্যবহারকারী নারীদের নিত্যসঙ্গী এই বিড়ম্বনা। অনেক নারী যাত্রীর অভিযোগ বাসে উঠার সময় যেমন বিড়ম্বনার শিকার হন তেমনি বাসের ভেতরে যাত্রীদের দ্বারাও অনেক সময় হয়রানির শিকার হন তারা।

আবার নারী আসনে পুরুষ বসে থাকলে তাদের উঠাতে গিয়েও নানা ধরণের বাজে মন্তব্যের শিকার হতে হয় তাদের।

অ্যাকশন এইডের জরিপ বলছে, দেশের ৪৭ শতাংশ নারী রাস্তায় বা গণপরিবহনে চলাচলের সময় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে থাকেন। গণপরিবহনে নারীদের জন্য বরাদ্দ আসনের সংখ্যা খুবই কম। আবার বেশিরভাগ সময়ই কিছু পুরুষ কখনও জেনে আবার কখনও না জেনে এসব আসন দখল করে রাখেন। তাছাড়া যেভাবে গণপরিবহনগুলো চলাচল করে তা নারীদের জন্য একেবারেই বন্ধুসুলভ না। অতিরিক্ত মানুষের ভিড়, ধাক্কাধাক্কি আর চলন্ত গাড়িতে উঠানো বা নামানোর মতো বিপদজনক ব্যবস্থা নারীদের গণপরিবহন বিমুখ করে তুলেছে।

তবে এবার এই চিত্র পাল্টানোর আশা করছেন নারীরা। কারণ এখন থেকে তাদের নির্ধারিত আসনের আইনী সুরক্ষা পাবেন তারা। গত বছর নারী আসনে পুরুষ বসলে বা বসতে দিলে জেল জরিমানার আইনে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

২০১৭ সালের ২৭ মার্চ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৭ এর খসড়ায় বলা হয়েছে, কেউ যদি বাসে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন বা বসতে দেয়া হয় তবে তাকে এক মাসের জেল অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা গুনতে হবে।

সে সময় নতুন এই আইনকে স্বাগত জানান নারীর অধিকার আদায়ে কাজ করা বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকারকর্মী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

মানবিধকারকর্মী এডভোকেট মনোয়ারা হক বলেন, এই আইনের বিষয়ে প্রচারণা, মানুষকে সচেতন করা এবং মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কিছু অভিযান চালিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া গেলে গণপরিবহণ আরও নারীবান্ধব হবে।

প্রচলিত অনেক আইন রয়েছে যা নারীর সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট। গণপরিবহণে হেল্প লাইনগুলোর নাম্বার টানিয়ে দেয়া উচিত। আর নারীদেরও প্রতিবাদ করতে হবে, কারণ জরিপে আমরা দেখেছি হয়রানির ঘটনায় অর্ধেক নারীই কোন প্রতিবাদ করেন না।

একশনএইড’র এক গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকা শহরে গণপরিবহণে যাতায়াত করেন মাত্র ২১ শতাংশ নারী। আবার এসব নারীর অধিকাংশই (৪৭ শতাংশ) চলাচল করেন সিএনজি রিকশায়, আর ১৯ শতাংশ নারী হেঁটে যাতায়ত করেন।

কারণ হিসেবে গবেষণায় বলা হয়েছে গণপরিবহণে হয়রানির ভয়ে নারীরা এই বিকল্প পরিবহণ ব্যবহার করছেন।

এডভোকেট মনোয়ারা হক বলেন, সিএনজি অটোরিক্সায় যাতায়াত করছেন সাত শতাংশ নারী। কাজেই গণপরিবহণকে আমরা নারীবান্ধব করতে পারলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ আরো বাড়বে।

এছাড়াও বর্তমানে অ্যাপস ভিত্তিক যাতায়াত সেবা চালু হওয়ায় নারীরা কিছুটা স্বত্ত্বি পেয়েছেন বলে মনে করেন এই নারী মানবাধিকার কর্মী।

তিনি বলেন, এখন অনেক নারীই এসব অ্যাপস ব্যবহার করে যাতায়াত করছেন, যা সত্যিই আশাব্যাঞ্জক। তবে এসব সেবার মান আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কতৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত তারা দেড় লাখ চালককে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন, যেখানে যাত্রীদের প্রতি বিশেষ করে নারীদের প্রতি আচরণের বিষয়টিও তাদের প্রশিক্ষণে আলোচনা করা হয়।