ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ৭:৪২:৪৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

নার্সিং পেশায় ক্যারিয়ার

চাকরি ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১২:৪৬ পিএম, ১১ জানুয়ারি ২০১৮ বৃহস্পতিবার

নার্স সবার কাছে একটি অতিপরিচিত শব্দ। আর নার্সিং শব্দের আভিধানিক অর্থ তত্ত্বাবধান করা বা সেবা করা। এই নার্সিং শব্দ থেকেই এসেছে নার্স শব্দটি। যারা নার্সিং বিষয়ে দক্ষ, তাদেরই বলা হয়ে থাকে নার্স। এর বাংলা অর্থ সেবিকা।

 

হাসপাতালে অসুস্থ মানুষের সেবায় যারা নিয়োজিত থাকেন, তারাই সাধারণত নার্স হিসেবে পরিচিত। দিন দিন মানুষ বাড়ছে, বাড়ছে হাসপাতাল, বাড়ছে রোগ। সাথে সাথে বাড়ছে নার্সের চাহিদা। ফলে পড়ার বিষয় হিসেবে নার্সিং একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে পড়ার মাধ্যমে যেমন মানবসেবার সুযোগ রয়েছে, তেমনি সুযোগ রয়েছে ভালো ক্যারিয়ারেরও।

 

এই পরিস্থিতিতেই পেশা হিসেবে নার্সিং বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এর পেছনে অবশ্য যথেষ্ঠ কারণও রয়েছে। বর্তমান বাজারে যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে পড়ালেখা করলে পড়ালেখা শেষে কাজের পর্যাপ্ত ক্ষেত্র নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়, তার মধ্যে নার্সিং অন্যতম। এ কারণেই এই খাতে বছর-বছর প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে।

 

বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব দেশেই রয়েছে নার্সদের চাহিদা। আসলে এটি এমন একটি পেশা, যার চাহিদা স্থান, কাল, পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশে হাসপাতালসহ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়গনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। চিকিত্সা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানে নার্স বা সেবিকাদের চাহিদাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। এ কারণে অনেক সময়েই দেখা যায়, ভালো অনেক প্রতিষ্ঠানেই দক্ষ নার্সদের অভাব রয়েছে।

 

আমাদের দেশে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারদের যতটা চাহিদা রয়েছে এবং অভিভাবকদের এসব বিষয়ে পড়ানোর যে প্রবণতা রয়েছে, নার্সিং পেশাতে পড়ার এবং পড়ানোর প্রবণতা তেমন করে নেই। ফলে পড়ালেখা শেষ করে মানবসেবা করা ছাড়াও ভালো ক্যারিয়ারের যে সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সম্ভাবনা তাই অনেকেই গ্রহণ করতে পারছেন না। নার্সিং বিষয়ে অনেকের স্পষ্ট ধারণাও নেই। এ বিষয় নিয়ে কোথাও পড়ালেখা করা যায় কিংবা কীভাবে ক্যারিয়ার গঠন করা যায়, সেসব বিষয় নিয়েই জানানো হচ্ছে এই লেখায়।

 

নার্সিং পেশার ইতিহাস : আধুনিককালে নার্সিং সেবা গড়ে উঠার পূর্বে খ্রিস্টান যাজিকা বা নান এবং সামরিক বাহিনীতে প্রায়ই নার্সিং জাতীয় সেবাকার্য পরিচালিত হতো। যুক্তরাজ্যে জ্যেষ্ঠা নারী সেবিকারা সিস্টার নামে পরিগণিত হয়ে থাকেন। নার্সিংয়ের ইতিহাসে বৈপ্লবিক উন্নয়ন ও পরিবর্তন সাধন ঘটে ক্রিমিয়ার যুদ্ধে। বিশ্বখ্যাত ইংরেজ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল নার্সিংয়ের পেশাদারী পর্যায়ে সূচনা করেন। তার প্রণীত নোটস অন নার্সিং গ্রন্থটিকে এই বিষয়ে পথিকৃত মনে করা হয়।

 

পেশাদারী পর্যায়ে এ পেশার মানোন্নয়নে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নার্স ব্যক্তিত্বরূপে ম্যারি সিকোল, এগনেস এলিজাবেথ জোন্স এবং লিন্ডা রিচার্ড ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে আছেন। ম্যারি সিকোল ক্রিমিয়ায় কাজ করেছেন; এগনেস এলিজাবেথ জোন্স ও লিন্ডা রিচার্ডস গুণগত মানসম্পন্ন নার্সিং বিদ্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানে প্রতিষ্ঠা করেন। তন্মধ্যে-লিন্ডা রিচার্ডস আমেরিকার প্রথম পেশাদার ও প্রশিক্ষিত নার্স হিসেবে ১৮৭৩ সালে বোস্টনের নিউ ইংল্যান্ড হসপিটাল ফর উইম্যান অ্যান্ড চিল্ড্রেন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন।

 

বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে নিউজিল্যান্ডে জাতীয় পর্যায়ে নার্সদের নিবন্ধিত করা হয়। ১২ সেপ্টেম্বর, ১৯০১ সালে নার্সেস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট প্রণীত হয়। এলেন ডাফার্টি ছিলেন নিউজিল্যান্ডের প্রথম নিবন্ধিত নার্স। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে নর্থ ক্যারোলিনায় নার্সিং লাইসেন্স ল ১৯০৩ সালে গৃহীত হয়। ১৯৯০-এর দশকে নার্সদেরকে ওষুধ দেওয়া, ডায়াগনস্টিক, প্যাথলজি পরীক্ষাসহ রোগীদের প্রয়োজনে অন্য পেশাদারী স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিত্সকের কাছে স্থানান্তরের অনুমতি দেওয়া হয়।

 

কোথায় পড়বেন : বিএসসি ইন নার্সিং তথা নার্সিংয়ের ওপর গ্র্যাজুয়েশন বা স্নাতক পর্যায়ের পড়ালেখা করার সুযোগ কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ছিল না। এই বিষয়ে কেবল ডিপ্লোমা এবং প্রাইমারি কোর্সই চালু ছিল। তবে বর্তমানে সরকারি পর্যায়ে ৭টি বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজে এই কোর্স চালু রয়েছে। এদের প্রতিটিতে আসন সংখ্যা ১০০টি করে। এর বাইরে বেসরকারি কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও রয়েছে নার্সিংয়ের ওপর অনার্স করার সুযোগ। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস, এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি) এবং স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ। আর ৪টি সরকারি পোস্ট-বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজে রয়েছে ১২৫টি করে আসন।

 

কোর্সের ধরণ : বাংলাদেশ উপরোক্ত দুইটি প্রতিষ্ঠানেই বিএসসি ইন নার্সিংয়ের ওপর চার বছরের অনার্স কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এটি স্কুল অব হেলথ সায়েন্সের অন্তর্ভুক্ত। এখানে চার বছরে ১২টি সেমিস্টারে ১৫০ ক্রেডিট পড়ানো হয়। আর আইইউবিএটিতে স্নাতক পর্যায়ের চার বছরে ১১টি সেমিস্টারে ১৪৩ ক্রেডিট পড়ানো হয়।

 

কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয় : বিদেশি কারিকুলামের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই দেশের বিএসসি ইন নার্সিংয়ের পাঠ্যসূচি তৈরি করা হয়েছে। এ কোর্সের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্ট্রোডাক্টরি অব নার্সিং, হিউম্যান অ্যানাটমি, কমিউনিটি নার্সিং, সেমিনার অ্যান্ড রিসার্চ ইন নার্সিং, হিউম্যান ফিজিওলজি, কনসেপ্ট অব হেলথ অ্যান্ড ইলনেস, মেন্টাল হেলথ নার্সিং, পপুলেশন কন্ট্রোল অ্যান্ড ফ্যামিলি প্লানিং, ইন্ট্রোডাক্টরি অব ফার্মাকোলজি, ম্যাটারনাল অ্যান্ড চাইল্ড নার্সিং, নার্সিং অ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রভৃতি।

 

ভর্তি সংক্রান্ত তথ্য : বিএসসি ইন নার্সিংয়ে ভর্তি হতে চাইলে প্রার্থীকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক এবং সমমানের পরীক্ষার প্রতিটিতে ন্যূনতম জিপিএ ২.৫০ করে পেতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়াদের জন্য অগ্রাধিকার হলেও মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরাও ভর্তি হতে পারে এই বিভাগে। ভর্তি সাধারণত জিপিএ`র ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। এইচএসসি`র ফলাফল বের হওয়ার পরপরই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। ভর্তির সার্বিক খরচ বাবদ তিন থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা লাগে। তবে গরিব ও মেধাবীদের জন্য বৃত্তির সুযোগ রয়েছে।

 

কাজের সুযোগ : এ বিষয়ে পড়ার পর দেশ-বিদেশে সর্বত্রই ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, সমাজসেবা অধিদপ্তর, হোটেল, মোটেল, এনজিও এমনকি পর্যটন কর্পোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া বিদেশে নার্সিংয়ে বিএসসি পাস করে CFNS বা Commission on Graduates of Foreign Nursing Schools-এর পরীক্ষায় পাস করে কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে সহজেই কাজ করার সুযোগ আছে। তবে বিদেশে চাকরি পেতে হলে নার্সদের প্রশিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি ইংরেজিতে পারদর্শী হতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে ১৩শ` নার্স সৌদি আরব, লিবিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের তেরটি দেশে কর্মরত রয়েছেন। ইংরেজি জানা ও উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নার্স গড়ে তুলতে পারলে এই খাতে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।

 

নার্সিং পেশার সম্ভাবনার দিক বিবেচনা করেই এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই নার্সিংয়ে পড়ালেখার সুযোগ করে দেওয়ার কথা জানাচ্ছে। তবে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অর্ডিন্যান্স নং LXI-1983 অনুযায়ী কাউন্সিল এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ব্যতিরেকে কোনো প্রতিষ্ঠান নার্সিং বিষয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা, ভর্তি করা, সনদপত্র প্রদান ইত্যাদি কাজ করতে পারবে না। কাজেই কোনো প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই জেনে নিতে হবে তার সঠিক অনুমোদন রয়েছে কি না।

 

সরকারি বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজ : 

১. ঢাকা নার্সিং কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা। ২. ময়মনসিংহ নার্সিং কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ময়মনসিংহ। ৩. রাজশাহী নার্সিং কলেজ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী। ৪. চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম। ৫. রংপুর নার্সিং কলেজ, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রংপুর। ৬. সিলেট নার্সিং কলেজ, এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিলেট। ৭. বরিশাল নার্সিং কলেজ, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বরিশাল।

 

সরকারি পোস্ট-বেসিক বিএসসি নার্সিং কলেজ :

১. সেবা মহাবিদ্যালয়, মহাখালী, ঢাকা। ২. ফৌজদারহাট নার্সিং কলেজ, চট্টগ্রাম। ৩. বগুড়া নার্সিং কলেজ, শজিরমেকহা, বগুড়া। ৪. খুলনা নার্সিং কলেজ, খুলনা।