ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৩:০১:১২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

নেত্রকোনায় বাল্যবিয়ে রুখে দিচ্ছে ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৪ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ শনিবার

নেত্রকোনায় বাল্যবিয়ে রুখে দিচ্ছে ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’

নেত্রকোনায় বাল্যবিয়ে রুখে দিচ্ছে ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’

নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার রাংছাতি ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার মোমেনা খাতুন। একদিন হঠাৎ করেই জানতে পারেন, তার গ্রাম চৈতন্যপুর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে রামনাথপুর গ্রামে বাল্য বিয়ের আয়োজন চলছে। খবরটি শুনেই বসে থাকতে পারলেন না মোমেনা।
তিনি বলেন, গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর আমার এক শুভাকাংখী জানান রামনাথপুর গ্রামে মাত্র ১৬ বছর বয়সী কলি আক্তার নামের এক মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে। এক প্রকার জোর করেই বিয়ে হচ্ছে তাকে। আর বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য সবকিছুই প্রস্তুত। আমি খবরটি শোনার পর দ্রুত সেই এলকায় যাই এবং স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় বিয়েটি বন্ধ করি।
ওই বাল্য বিয়ে বন্ধের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করতে গিয়ে মোমেনা বলেন, বিষয়টি খুব একটা সহজ ছিলনা। আমি গেলাম আর তারা আমার কথা শুনে বিয়ে বন্ধ করে দিল–এমন ভাবার কোন কারন নেই। সে সময় আমি প্রথমে স্থানীয় নেতা এবং মেয়ের পরিবারের অভিভাবকদের সাথে কথা বলি। তাদেরকে অনুরোধ করি বিয়ে বন্ধ করার জন্য। তাদেরকে বুঝাই যে, বাল্য বিয়ে একটি অপরাধ। আর এতে করে মেয়েটিরই সমস্যা বেশী হবে। সে শারীরিক এবং মানসিক দুই ভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিন্তু তারা আমার কোন কথাই শোনেনি। উপরন্তু আমাকে অপমান করে। তারা আমাকে চোখ বন্ধ রাখার পরামর্শ দেয় আর নিজের কাজ করতে বলে।
মোমেনা বলেন, কিন্তু আমি দমে যাইনি। এরপর আমি রাংছাতি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করি। তিনি আমাকে বেশ কিছু পরামর্শ দেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী আমি স্থানীয় নারী ও শিশু অধিদপ্তরের অফিসে ফোন দিই। তাদেরকে বিষয়টি খুলে বলি এবং বাল্য বিয়েটি বন্ধে সহযোগীতা চাই। অবশেষে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে তারাই বিয়েটি বন্ধ করে।
তিনি জানান, গত দু’মাসে দুটি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছেন তার একক প্রচেষ্ঠায়।
মোমেনা খাতুনের বাল্য বিয়ে বন্ধের এসব উদ্যোগ দেখেই অনেকটা উৎসাহ পান কলমাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের আরেক মহিলা মেম্বার পারুল আক্তার। এক মাস আগে তিনি জানতে পারেন পেঁচামারি গ্রামে অষ্টম শ্রেনীতে পড়–য়া এক ছাত্রীর বিয়ে ঠিক হয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক জহুরা খাতুনকে এক প্রকার জোর করেই ফোনের মাধ্যমে বিয়ে দেওয়া হয় চান্দাইল গ্রামের বাবুল মিঞার সাথে।
পারুল বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে (ইউএনও) জানান। ইউএনও বিষয়টি জানার পর তার নেতৃত্বে এক মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয় বিয়ের দিন। তিনি বিয়েটি বন্ধ করেন এবং তিন ব্যক্তিকে এই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অপরাধে শাস্তি প্রদান করেন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে।
পারুল বলেন, এ সময় বিয়ে রেজিষ্ট্রার খায়রুল কবিরকে ৩০,০০০ টাকা এবং বর এবং কনের অভিভাবককে ৫০,০০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
কলমাকান্দা উপজেলার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আফরোজা বেগম শিমু বলেন, এলাকার সকল নারী জন প্রতিনিধিদের নিয়ে ‘নারী উন্নয়ন ফোরাম’ নামের একটি সংগঠন করা হয়েছে এখানে। এতে টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছে ইউএনডিপি’র এফিসিয়েন্ট এন্ড একাউন্টেব্যাল এন্ড লোকাল গভর্ণেন্স (ইএলজি) প্রোজেক্ট। বর্তমানে এই সংগঠনের সবাই এই এলাকায় বাল্য বিয়ে বন্ধ এবং নারী নির্যাতন প্রতিরোধে কাজ করছেন।
তিনি বলে, অন্যান্য জায়গার তুলনায় এখানে বাল্য বিয়ে এবং নারী নির্যাতনের হার একটু বেশী। মূলত শিক্ষার অভাব এবং অজ্ঞতার কারনেই এসব সমস্যা এখানে বেশি।
তবে গত বছরের প্রথম দিকে নারী উন্নয়ন ফোরাম গঠনের পর থেকে এই উপজেলায় বাল্য বিয়ে এবং নারী নির্যাতন অনেকাংশে কমে এসেছে। আমার নিজেরাই অনেক বাল্য বিয়ে বন্ধ করতে সফল হয়েছি।
ইউএনপিপি’র কর্মকর্তা মো আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কলমাকান্দায় এমন অনেক এলাকা রয়েছে যেখানে মানুষ অনেক নিম্ম আয়ের। মূলত কম শিক্ষার হার, কর্মসংস্থানের অভাব এবং স্থানীয়দের মধ্যে সচেতনতার অভাবই এই বাল্য বিয়ে এবং নারী নির্যাতনের হার কিছুটা বেশি এই অঞ্চলে।
তিনি বলেন, তবে বর্তমানে স্থানীয় অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রশাসন এই বাল্য বিয়ে এবং নারী নির্যাতন বন্ধে কাজ করে চলছে। এছাড়াও আরো বেশি পরিমান সচেতনতামূলমক কার্যক্রম চালানোর ব্যাপারে তিনি জোর দেন।