ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, মার্চ ২০২৪ ১৩:৫৯:৩৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া ট্রেনে ঈদযাত্রা: ৭ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু গাজায় নিহত বেড়ে ৩২ হাজার ৪৯০ অ্যানেস্থেসিয়ার ওষুধ বদলানোর নির্দেশ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঈদ কেনাকাটায় ক্রেতা বাড়ছে ব্র্যান্ড শপে বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও, শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার

পাকিস্তানে এইচআইভিতে আক্রান্ত শত শত শিশু

| উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৫ পিএম, ২২ মে ২০১৯ বুধবার

ছবি: ইন্টারনেট

ছবি: ইন্টারনেট

পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলীয় ছোট শহর রাত্তো ডিরোতে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম নজরে আসে যে কিছু একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেসময় কিছু সংখ্যক উদ্বিগ্ন বাবা-মা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলেন এবং জানালেন যে, তাদের ছোট ছোট শিশুদের জ্বর কিছুতেই কমছেনা। সপ্তাহের ব্যবধানে আরও অনেক শিশু একই ধরনের অসুস্থতা নিয়ে হাজির।

হতবাক চিকিৎসক ইমরান আরবানি শিশুদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠালেন। রিপোর্ট ফিরে আসার পর দেখা গেল যেমনটা তিনি আশঙ্কা করেছিলেন তাই। এইসব অসুস্থ শিশুরা এইচআইভি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত, কিন্তু তা কিভাবে, কেন ঘটেছে কেউ জানে না।

গত ২৪শে এপ্রিলের মধ্যে ১৫টি শিশু এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে, যদিও তাদের কারও বাবা-মায়ের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া যায়নি। খবর বিবিসির।

তবে এটা ছিল কেবল ঘটনার শুরু। সিন্ধু প্রদেশে এ নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়লে বহু উদ্বিগ্ন বাবা মা বিশেষভাবে প্রস্তুত করা ক্যাম্পে ভিড় জমালে গতমাসে ৬০৭ জনের বেশি মানুষের এইচআইভি সংক্রমণ নির্ণয় করা হয়েছে, যাদের ৭৫ শতাংশ শিশু।

তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে এই যে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই অঞ্চলটিতে এটাই প্রথম এই ধরনের প্রাদুর্ভাব নয়। ২০১৬ সিন্ধু প্রদেশের লারকানায় গুজবের কারণে হাজার হাজার মানুষকে প্রয়োজনীয় রক্ত পরীক্ষা করেন।

সিন্ধু এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তথ্য অনুসারে, সেসময় ১ হাজার ৫২১ জন এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে শনাক্ত হন। সংক্রমিতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল পুরুষ, এর পেছনে কারণ হিসেবে ছিল সেই অঞ্চলের যৌনকর্মীরা যারা ছিল প্রধানত তৃতীয় লিঙ্গের এবং তাদের ৩২ জন এইডস বহন করছে বলে জানা যায়।

এই প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর লারকানায় আগন্তুকদের প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়, যেখানে পাকিস্তানে পতিতাবৃত্তিতে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও যৌনকর্মীরা অপেক্ষাকৃত স্বাধীনভাবে তাদের ব্যবসা চালাতে সক্ষম হয়েছে।

কিন্তু এই প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সাম্প্রতিক উদ্ভাবনের সঙ্গে কি সম্পর্কিত? সিন্ধু এইডস নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি বা সংক্ষেপে এসএসিপির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ডক্টর আসাদ মেমনও তেমনই মনে করেন, যদিও সরাসরি নয়।

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এই ভাইরাস (এইডস)অতি ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপের সদস্যদের (তৃতীয় লিঙ্গ এবং নারী যৌনকর্মী) দ্বারা পরিবাহিত হয়েছে এবং পরে স্থানীয় হাতুড়ে ডাক্তারদের অসতর্কতার কারণে তা অন্যান্য রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটিয়েছে।

পাকিস্তানের মত দেশে বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার অনেক মানুষ প্রায়ই দক্ষ চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসার জন্য ছুটে যান। কারণ টাকা-পয়সা কম লাগে। সহজে পাওয়া যায় এবং রোগীদেরকে দেয়ার মত প্রচুর সময় রয়েছে তাদের হাতে।

ড. ফাতিমা মীর, আগা খান ইউনিভার্সিটি হসপিটালের হয়ে কাজ করেন এবং শিশুদের মধ্যে এইডস বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তিনি বর্তমানে রাত্তো ডিরোতে স্বেচ্ছায় কাজ করছেন। তিনি সম্মত হলেন যে অবহেলাপূর্ণ চিকিৎসা সেবা অধিকাংশ শিশুর সংক্রমণ এবং ২০১৬ সালের প্রাদুর্ভাবের পেছনে দায়ী।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘তিনটি উপায়ে শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ঘটতে পারে। হয়তো এই ভাইরাস বহনকারী মায়ের দুধ পানের মাধ্যমে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে, কিংবা সংক্রামিত অস্ত্রোপচার সরঞ্জাম বা সিরিঞ্জের মাধ্যমে’।

তার অভিজ্ঞতা অনুসারে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মা এইচআইভি পরীক্ষায় নেগেটিভ দেখা যায় এবং কিছু শিশুদের রক্ত সঞ্চালনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বাকি যে ব্যাখ্যাটি এসেছে তা হল স্থানীয় ক্লিনিকগুলোতে একই সিরিঞ্জ একাধিক রোগীর শরীরে পুশ করা হয়।

পুরো প্রদেশ জুড়ে প্রায় ৫০০ অনিয়ন্ত্রিত ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ তেমনই জানাচ্ছে। স্থানীয় একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডক্টর মুজফফর ঘাংগ্রুকে সিরিঞ্জের মাধ্যমে এইডস ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে পাকিস্তানে সবচেয়ে বেশি এইচআইভি সংক্রমের শিকার এলাকা সিন্ধু প্রদেশের কর্মকর্তারা এই প্রাদুর্ভাবের কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছে।

রাত্তো ডিরোর হাসপাতাল ক্যাম্পে ২৫শে এপ্রিল পর্যন্ত ১৮ হাজার ৪১৮ জনের পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। কমপক্ষে ৬০৭ জনের পজিটিভ বলে শনাক্ত হয়েছে। শিশুদের মধ্যে এক মাস থেকে ১৫ বছর বয়সীরাও রয়েছে। বাবা-মাকে চরম মূল্য চোকাতে হচ্ছে-সন্তানের চিকিৎসা এবং তাদের রোজকার টিকে থাকার লড়াই- দুটোর জন্যই।

একজন মা বলছিলেন যার তিন বছর বয়সী সন্তান এইচআইভি আক্রান্ত লারকানায় বড়দের জন্য ওষুধপত্র সাধারণত পাওয়া যায় (স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে) কিন্তু শিশুদের ওষুধের জন্য যেতে হয় করাচি। প্রতিটি ভ্রমণে হাজার হাজার রুপি খরচ করা হয়।

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর, ফলে দীর্ঘদিন এটার ব্যয় নির্বাহ করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না।’

-জেডসি