ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৩০:২৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বাড়ছে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৪:৫৩ পিএম, ২৩ আগস্ট ২০১৮ বৃহস্পতিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

দেশে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু। অন্য যে কোনো কারণে শিশু মৃত্যুর চেয়ে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। নদীমাতৃক দেশে এটি নীরব ঘাতকে পরিণত হয়েছে।

 


গত মাসের ঘটনা। কক্সবাজারের উখিয়ায় পুকুরের পানিতে ডুবে একই পরিবারের তিন শিশুর মৃত্যু হয়। নিহত শিশুরা হলো মো. ফাহিম (৮), আবদুল তাসফিয়া (৬) ও ছাফা মারওয়া (৩)। সেই দিন বিকালে তিন শিশু একটি খেলনা গাড়ি নিয়ে বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে খেলছিল। এসময় পরিবারের সদস্যদের অজান্তে গাড়িসহ তারা পুকুরের পানিতে পড়ে যায়। পরে অনেক খোঁজাখুঁজির পর সন্ধ্যায়  তিন শিশুর মৃতদেহ পানিতে ভাসতে দেখা যায়।

 


এভাবে প্রতিদিনই পানিতে ডুবে অসংখ্য শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। বিশেষ করে এ বছরের শুরু থেকেই পানিতে ডুবে মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সংবাদ নজরে আসে।

 


সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) নামে একটি বেসরকারি সংস্থার বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে ২০১৬ এর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। যাতে দেখা যায়  বাংলাদেশে পানিতে ডুবে প্রতি বছর মারা যাচ্ছে ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজারের বয়স অনুর্ধ ১৮। অর্থ্যাৎ দৈনিক ৫০ জনেরও বেশি শিশু এই নীরব মহামারির শিকার।

 


চলতি বছরের মার্চে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) বাংলাদেশ হেলথ অ্যান্ড ইনজুরি সার্ভে ২০১৬ এবং ভাসা প্রকল্প বেইজলাইন জরিপ-২০১৬-১৭ প্রকাশ করে। 

 


জরিপে উঠে এসেছে বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বঙ্গপোসাগরে উপকূলে অবস্থিত এবং এখানে জলাশয় যেমন পুকুর, নদী, খাল বিলের আধিক্য থাকায় এই বিভাগে পানিতে ডুবে মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি। বরিশাল বিভাগে অন্য জেলার থেকে তিনগুণেরও অধিক মানুষ পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে। জরিপে আরও উঠে এসছে বরিশালে সব বয়সের ক্ষেত্রে বছরে প্রতি লাখে ৩৮ জনের মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে। আর সারাদেশে এই সংখ্যা প্রতি লাখে ১২ জন। বরিশালে ১-৪ বছরের শিশুদের প্রতি লাখে পানিতে ডুবে মৃত্যু ঘটে ২৬২ জন। আর সারাদেশে এই সংখ্যা প্রতি লাখে ৭২ জন।

 


জরিপে বলা হয়, যে কোনো পানির উৎসই পানিতে ডুবার কারণ হতে পারে। বরিশাল বিভাগে পরিচালিত বেইজলাইন সার্ভে দেখা গেছে, পানিতে ডুবে যেসব মৃত্যু ঘটেছে তার ৬৭ শতাংশই পুকুরে আর খালে ১৫ শতাংশ, ডোবায় ১১ শতাংশ এবং নদীতে মাত্র ৫ শতাংশ। পানিতে ডোবার ঘটনার দুই-তৃতীয়াংশই ঘটে পুকুরে এবং বাড়ির ১০০ মিটারের মধ্যে। বিভিন্ন উপাত্ত থেকে জানা যায়, শিশুদের ডুবা জনিত মৃত্যুর ৬৩ শতাংশই ঘটে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে। কেননা এই সময় বাবা-মা বিভিন্ন গৃহস্থলীর কাজে ব্যস্ত থাকেন, যে কারণে শিশুদের দেখে রাখার পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না।

 


আন্তর্জাতিক সংস্থা সুইমসেইফ ( প্রেভেন্টিং চাইল্ড ড্রওনিং) এর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সর্বোচ্চ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ দেশে গত দশকের চেয়ে সার্বিক শিশুমৃত্যুর হার কমলেও পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু বেড়েছে। সুইমসেফের তথ্যমতে, ১-৪ বছর বয়সী শিশুর পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। কারণ হিসেবে বলা হয়, মা বাড়ির কাজে ব্যস্ত থাকায় শিশুর প্রতি অনেক সময় খেয়াল করতে পারেন না। এছাড়াও বালতি বা অন্য কিছুতে রাখা সামান্য পানিও যে শিশুমৃত্যুর কারণ হতে পারে সে ব্যাপারটিও অনেকের মাথায় থাকে না। গবেষণা মতে, এশিয়ায় প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে একজন শিশুর ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। তবে সংস্থাটি মনে করে বাস্তবচিত্র আরও ভয়াবহ। পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলো হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছায় না বলে সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া খুব কঠিন, বলেছে তারা।

 


সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) ২০০৫ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইনজুরি প্রতিরোধ, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা এবং পানিতে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে রয়েল ন্যাশনাল লাইফ বোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই) ইউকে’র আর্থিক সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার আওতাধীন কলাপাড়া, বেতাগী ও তালতলী উপজেলায় পানিতে ডুবা প্রতিরোধের উদ্দেশে ভাসা নামক একটি প্রকল্প পরিচালনা করছে। এছাড়াও সারাদেশে সাত লাখেরও বেশি শিশুদের সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি।

 


সিআইপিআরবি’র পরিচালক ও শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে গঠিত দলের প্রধান ডা. আমিনুর রহমান বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ তিনটি। সাঁতার না জানা, কম নজরদারি এবং ডুবে গেলে করণীয় সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব। এজন্য শিশুদের অবশ্যই সাঁতার শেখাতে হবে। পাশাপাশি কেউ পানিতে ডুবে গেলে করণীয়, প্রাথমিক চিকিৎসা, হাসপাতালে নেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয় জানতে ও শেখাতে কমিউনিটিভিত্তিক সচেতনতা কর্মসূচিও থাকতে হবে বলে জানান আমিনুর রহমান।