ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৮, এপ্রিল ২০২৪ ১০:৫৯:৫৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রসঙ্গ অপু-শাকিব, অতপর!

জামশেদ নাজিম | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০২:৪৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার

আওলাদ ভাই নেই। চলার পথে আজও তাকে মনে পড়ে। তখন আমি চিত্রাকাশের তথ্য ভিক্ষুক। এফডিসে ঘুরে বেড়াতাম। নায়িকাদের প্রতি ছিলো আমার অবাক দৃষ্টি। রাজৈর মহুয়া, টেকের সোনালী সিনেমার পর্দার সেই নায়িকারা খুব কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। দৃষ্টিতে অসহায়ত্ব প্রকাশ পেত।


সন্ধ্যার দিকে তথ্য সংগ্রহ করতে প্রায় দিন বিকেলে ঘুরে বেড়াতাম কাকরাইল সিনেমা পাড়ায়। সেখানে প্রথম দেখ হয় আওলাদ ভাইয়ের সাথে। বিশাল দেহ আর লম্বাচুলের মানুষটি আমাকে প্রশ্ন করেন- আপনার নাম কি?


– নাজিম।


-কোন পত্রিকায় আছেন?


– দৈনিক আমাদের সময়!


– আমাকে চিনেন?


– জী আপনি সিনেমার ভিলেন।


“ভালো বলছেন” বলে একটা ভিজিটিং কার্ড দেন। কার্ডটি হাতে নিতেই আমি অবাক! তিনি মানবজমিন পত্রিকার সাংবাদিক। ওই দিন আর কথা হয়নি। আমি লজ্জায় দ্রুত চলে যাই।


এরপর যত দিন বিনোদন সংবাদিকতায় ছিলাম আওলাদ ভাই আমাকে সহায়তা করেছেন। ডেকে নিয়েছেন অনেক শুটিং স্পটে।


একদিন বিকেলে আওলাদ ভাই ফোন দিলেন। বেশ উচ্চস্বরে বলেন- ‘কাল সকাল ৭টায় কাকরাইল থাকবেন।


‘জ্বী ভাই’ বলে লাইন কেটে দিলাম।


যেই কথা সেই কাজ। সকাল ৭টার আগে হাজির হলাম। এসে দেখি অনেক সাংবাদিক। দুটি গাড়িতে উঠলো। সবাই যাচ্ছেন। কোথায় যাচ্ছেন জানি না। আসলে জানার জন্য প্রশ্ন করার সাহস আমার নেই।


গাড়িতে বসে ভাবছি আওলাদ ভাইয়ের কথা। মানুষটা কেমন যেনো। যেখানে যান, সেখানে তিনিই প্রধান। অনেকে পা ছুয়ে সালাম করেন। কেমন যেনো পীর আউলিয়াদের মত তিনি।


সাভারের বিশাল এক প্রাসাদের সামনে গাড়ি থামার সাথে অগোছালো ভাবনা দূর হলো। সবাই নামছে। আমিও নামছি। ডিপজল ভাই সামনে আসলেন। মানুষটার আচরণের সাথে পর্দায় চেনা আচরণ মিলেছে না।


তার পাশে বসা একটি মেয়ে। সবার সাথে পরিচয় হলো। আমি গিয়ে পরিচিত হলাম- আমার নাম বললাম। বললাম পত্রিকার নাম। তিনি একটি হাসি দিয়ে বললেন- আমি অপু বিশ্বাস। এফআই মানিক পরিচালিত ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার অভিনয় করবো। সিনেমার নায়ক শাকিব খান।


যতটুকু মনে পড়ে কোটি টাকার কাবিন সিনেমার অভিনয় করতে করতে বাস্তব প্রেমে চলে যান শাকিব-অপু। তারপর অনেক সময়। সিনেমার পর সিনেমা। শাকিব-অপু চিত্রাকাশের সফল তারকা বনে যান।


আমার তথ্য সংগ্রহ করার স্থান পরিবর্ত হয়। নতুন মানুষদের সাথে পরিচয়। পেশাগত সম্পর্কের মানুষদের সাথে ব্যস্ত সময় কাটতে থাকে। এফডিসিতে যাবার সময় পাই না।


অপু-শাকিবের ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের সংবাদ দেখে আমি হতাশ। নিউজগুলোতে তথ্যের অনেক ঘাটতি থাকে। অন্যদের কথা নাই বললাম। আমি নিজেই মনগড়া কিছু লিখি। ভুলে যাই আমার লেখার কারণে কেনো সন্তানের ভবিষৎ নষ্ট হলো কিনা। কোনো সংসারের সামান্য ফাটল আমার কোনো সংবাদে প্রকট আকার ধারন করছে কিনা।


আমরা যারা শাকিব-অপুর গল্প কিংবা সংবাদ প্রকাশ করছি কতজনের সাথে শাকিব অথবা অপুর বন্ধুত্ব হয়েছে। মন খারাপ থাকলে ডেকে নিয়ে গল্প করেন? শাকিব অপুকে পাবার জন্য কার সাথে বেশি যোগাযোগ করছে। আমরা কি জানি- বিয়ের কাজী কে ছিলেন। বিয়ের স্বাক্ষি কারা। কিভাবে একটা মেয়েকে সারাজীবন সঙ্গী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জন্মগত ধর্ম ত্যাগ করানো হয়েছে?


আমরা অনেকেই জানি না “শাকিব-অপুর বিচ্ছেদ” শিরোনামে এমন একটা সংবাদ চলচ্চিত্র জগতের এক শ্রেণীর মানুষ প্রতাশ্যা করে। কারণ চলচ্চিত্র ব্যক্তি ও দলীয় রাজনীতির বাইরে না।


জীবন কত বছরের! হয়ত একদিন অপুর গায়ের চামড়ায় টান টান ভাজ পরবে। শাকিবেরও যৌবন শেষ হবে। তখন কি মনে পরবে আবেগী ভালোবাসার কথা! অপুর যে সব কথায় শাকিব পাগল হয়ে রাত দুপুরে অপুর বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেন।


আমি ছোটবেলায় মাকে খুব জ্বালাতন করতাম। বাবা আমার সাথে রাগ করতেন। আমি কষ্ট পেতাম। রাগ করে ভাত খেতাম না। মা আমাকে শান্তনা দিয়ে বলতেন, যেদিন বাবা হবি সে দিন বুঝবি।


আমি আজ বাবা। দুই সন্তানের বাবা। বড় ছেলে যেমন তেমন, ছোট ছেলে কিছু মানে না। তার পরেও শান্তি। হাজার ক্লান্তি দূর হয় ওদের দুষ্টুমি দেখলে।


পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশন কিংবা ফেসবুকে শাকিব-অপুর নিউজ দেখলে, খুব মন খারাপ হয় না। নায়ক-নায়িকাদের বিয়ে কিংবা ডিভোর্স নতুন কিছু নয়। নতুন হলো আব্রাহামের মত একটা নিষ্পাপ সন্তান।


এই ছেলেটা কি পরিচয়ে বড় হবে। ডিভোর্সী মায়ের পরিচয়, নাকি নাম্বার ওয়ান নায়ক শাকিব খান বাবার পরিচয়। আব্রাহাম কি তার দুই হাতে বাবা- মাকে ধরে কোনো সবুজ মাঠে হাঁটতে পারবে।


দিন শেষে আমি যখন বাসায় ফিরি তখন আমার জাররার আর জাফির আমার কাছে আসে। তারা তাদের মায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। আমি তাদের শান্তনা দেই। বলি, মায়ের কথায় কষ্ট পেতে নেই। মা সারা দিন তোমাদের কষ্ট সহ্য করে।


অপু যখন আব্রাহামের সাথে রাগ করবে, ছেলেটা তখন কার আদর নেবে। আচ্ছা, আব্রাহাম কি কখনও বাবার কাছে খেলনা কিনতে চাইবে!


এমন কত প্রশ্ন আছে। কত নিউজ করা যাবে। কিন্ত আমরা কি আব্রাহামের কথা ভাবি। দেশের দুজন তারকা বসে নিজের ভুলগুলো ক্ষমা করে এক সাথে পথ চলতে পারেন না!


আজ আওলাদ ভাই নেই। চলে গেছেন আমাদের নায়ক রাজ রাজ্জাকও। মান্না ভাইয়ের ধমকের সুরে আমাকে কেউ আর ডাকবেন না। ডিপজল ভাই হয়ত তার বাসায় আর সাংবাদিকদের ডেকে অপুর সাথে পরিচয় করে দিবেন না।


কেন যেনো আমার মনে হয় অপু-শাকিবের মাঝে বসার মত একজন মুরুব্বির খুব অভাব। যে তার নিজ ক্ষমতার বল প্রয়োগ করবে। শাকিবকে বলবেন, তুমি অপুকে নয় তোমার সন্তানের জন্য অপুকে তোমার বাসায় রাখবে। আবার অপুকে ধমক দিয়ে বলবেন, শাকিব যা বলে শোন। বুঝে-শুনে চলতে হবে।

তোমরা সবাই ফুটফুটে সন্তানের কথা ভেবে এক সাথে থাকবে। দুটি চোখ বন্ধ করে দেখত হয় জীবন কয় দিনের। সবাই চলে যাবে। একদিন আমি-তুমি চলে যাবো। হয়ত একদিন শাকিব-অপুও থাকবে না।

লেখক : সাংবাদিক ও গল্পকার