ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ১৭:১৭:১৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

ফুলকন্যা ইয়াসমিনের দু‘চোখ ভরা স্বপ্ন

শারমিন সুলতানা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৬ পিএম, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ শুক্রবার

ফুলকন্যা ইয়াসমিন। ছবি : শারমিন সুলতানা

ফুলকন্যা ইয়াসমিন। ছবি : শারমিন সুলতানা

নানা রঙের বেশ কিছু দেশী জারবেরা ফুলসহ একটা বালতি কোমরে চেপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিল ছোট্ট মেয়েটি। সবাইকে ফুল কিনতে অনুরোধ করছিল। মাথাভরা চুল, অযত্ন-অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে গায়ের রঙ। তারপরও চেহারাজুড়ে সরলতার ছাপ। চোখ দুটো যেন কথা বলে।

ডাকতেই কাছে এসে দাঁড়ালো। ছবি তুলতে চাইলে সোজা জানিয়ে দিলো, ছবি তোলা যাবে না। অথচ ফুল কিনবো বলতেই হাসি মুখে দাড়িয়ে গেলো। সেই ফাঁকে জেনে নিলাম তার সংগ্রামের কাহিনী।

বাসা পুরোন ঢাকার ইসলাম বাগ। মেয়েটির নাম ইয়াসমিন। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট সে। বয়স কত জানতে চাইলে বললো, আট বছর। এই বয়সে যার বই হাতে স্কুলে যাবার কথা, সে ফুল হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের দাড়ে দাড়ে।

পড়াশোনা করতে ইচ্ছে করে কিনা জানতে চাইলে বললো, হ পড়ুমতো। মায় কইছে কার্ড করা হইলেই স্কুলে ভর্তি করবো। কিসের কার্ড জানতে চাইলে ইয়াসমিন সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারলো না। বোঝা গেলো ওকে মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। ও জানালো, রিক্সাচালক বাবা মেয়েদের লেখাপড়া করা পছন্দ করে না। তাই ওদের দুবোনকে স্কুলে ভর্তি করা হয়নি। তার বড়বোনকেও না পড়িয়ে বিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ ভাইকে পড়ানো হচ্ছে। ভাই ইয়াসিন পড়ে ক্লাস নাইনে।

ফুল বিক্রির কারণ জানতে চাইলে জানালো, বাবার একার আয়ে সংসার চলে না। পাশাপাশি আছে ভাইয়ের পড়ার খরচ। এজন্য তাকে ফুল বিক্রি করতে হয়। আট বছরের ইয়াসমিন তার বড় ভাইয়ের পড়ার খরচ চালাতে ফুল বিক্রি করছে।

ইয়াসমিন জানালো, ফুল বিক্রির কাজে মা তাকে সহযোগিতা করে। ফুল কিনে এনে মা-ই তাকে সেগুলো গুছিয়ে দেয়। সকালে বাসি ভাত-তরকারি খেয়ে সে বেড়িয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে। মায়ের গুছিয়ে দেওয়া ফুলের বালতি হাতে ঘুরে বেড়ায় ক্যাম্পাসের এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। ঘুরে ঘুরে তার এই ফুল বিক্রি চলে বালতি খালি না হওয়া পর্যন্ত। প্রতি পিস জারবেরা ফুল সে বিক্রি করে পাঁচ টাকায়। দিন শেষে কোনো দিন দু’শ, কোনো দিন আবার তিন‘শ টাকাও বিক্রি হয়। প্রতিদিনের ফুল বিক্রির আয় থেকে যে লাভ হয় তার পুরোটাই তুলে দেয় বাবার হাতে। তবে হ্যাঁ তাকে সেখান থেকে চকলেট, চিপস খাওয়ার জন্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। 

ফুলকন্যা ইয়াসমিনের দু‘চোখ ভরা স্বপ্ন সে স্কুলে ভর্তি হবে। বড় হয়ে ডাক্তার হবে। কিন্তু স্বপ্ন দেখা আর বাস্তবায়নের মধ্যে যে যোজন যোজন দূরত্ব তা হয়তো আট বছরের শিশু ইয়াসমিন এখনই বুঝবে না। তবে তার স্বপ্ন বাস্তব হোক।