ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, এপ্রিল ২০২৪ ১৯:৩৭:২৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘পদ্মশ্রী’ গ্রহণ করলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা কাতার-বাংলাদেশ ১০ চুক্তি-সমঝোতা সই কয়েক ঘণ্টায় ৮০ বারেরও বেশি কেঁপে উঠল তাইওয়ান ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল মাকে অভিভাবকের স্বীকৃতি দিয়ে নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা নতুন করে ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী : জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলী

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫৮ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, ফাইল ছবি

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী, ফাইল ছবি

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী শুধু একটি নাম নয়, ইতিহাসও বটে। আজ ১৯ ফেব্রুয়ারি তার জন্মদিন। তিনিই দেশের প্রথম বীরাঙ্গনা যিনি নিজের সাথে হওয়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী কেবল একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন, তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত ভাষ্করও। শেষ বয়সে এসে তিনি তাঁর শিল্পকর্ম নিয়েই পুরোটা সময় ব্যয় করতেন।

একমাত্র তিনিই একাত্তরের ভয়াল দিনগুলো সম্পর্কে জবানবন্দী দিয়েছেন। দৃঢ়তার সাথে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে তিনি ছিলেন সোচ্চার। শিখিয়েছেন অবর্ণনীয় অত্যাচার সত্ত্বেও নিজের মনোবলকে কিভাবে দৃঢ় রাখা যায়।সংগ্রামী এই নারী বুঝিয়েছেন কিভাবে শত প্রতিকূলতাতেও নিজেকে শক্ত রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয়।

কেমন ছিলো এই মহিয়সী নারীর জীবন। শুরু থেকেই কি তিনি ছিলেন সংগ্রামী ও প্রতিবাদী। না তা কিন্তু নয়। সময় ও পরিস্থিতিই তাঁকে করেছিলো সংগ্রামী। করতে শিখিয়েছিলো প্রতিবাদ।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর জন্ম খুলনায় তাঁর নানার বাড়িতে।জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি। মা রওশন হাসিনা ছিলেন একজন গৃহিণী। বাবা সৈয়দ মাহবুবুল হক পেশায় কলেজ শিক্ষক ছিলেন। ফেরদৌসী  প্রিয়ভাষিণীর বয়স যখন পাঁচ বছর তখন তাঁর অ্যাডভোকেট নানা আব্দুল হাকিম সুপ্রিম কোর্টে কাজ করার জন্য ঢাকায় আসেন। তিনিও নানার পরিবারের সাথে ঢাকায় চলে আসেন। 

ঢাকায় এসে প্রথমে তিনি নারীশিক্ষা মন্দিরে এবং পরে সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলে ভর্তি হন। পরে অবশ্য তিনি স্কুল, কলেজ সমাপ্ত করেছেন খুলনাতে বাবা-মায়ের কাছে। ১১ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি।

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তাঁর সংগ্রামী জীবন শুরু করেন মাত্র ষোল বছর বয়সে। সেই সময় তিনি ভালোবেসে ঘর ছাড়েন প্রথম স্বামীর সাথে। পরে বুঝতে পারেন নিজের ভুল। শিক্ষিত বলে জানা লোকটা ছিলো আসলে অশিক্ষিত। তারপরও তিনি ছেড়ে যাননি অশিক্ষিত স্বামীকে। ভর্তি করান স্কুলে। ছোট একটা চাকরি আর কয়েকটা টিউশনি করে পুরো সংসারের দায়িত্ব তুলে নেন নিজের কাঁধে। এরই মধ্যে এক সন্তানের মা হন তিনি। শেষ রক্ষা অবশ্য হয়নি। বেকার স্বামীর শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে অবশেষে ১৯৭১ সালে আলাদা হন দুজনে। 

এরপর শুরু হয় আরেক সংগ্রাম। দেশে যুদ্ধ শুরু হলে, পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। দীর্ঘ সাত মাস বন্দী রেখে তাঁর উপর চালানো হয় অমানবিক নির্যাতন।

যুদ্ধ শেষে ফিরে এসে লড়তে হয়েছে সমাজের মানুষের সাথে।একদিকে যুদ্ধের দিনগুলোর দুঃসহ স্মৃতি তাড়া করে ফিরেছে সবসময়। অন্যদিকে সমাজের মানুষের লাঞ্ছনা, গঞ্জনা আর অপমানে সারাক্ষণ হতে হয়েছে নাকাল।
 
আর তাই একাত্তরের সেই ভয়াল দিনগুলোর বর্ণনা করতেও তাঁর লেগে গেছে দীর্ঘ ২৮ বছর। শুরুতে একজন সাধারণ নারীর মতো তাঁরও মনে হয়েছিলো, একথা জানাজানি হলে সমাজ তাঁর দিকে আঙুল তুলবে, তাকে লাঞ্ছিত করবে। পরে অবশ্য ভাবলেন, যে ঘটনার জন্য তিনি নিজে দায়ী নন কেন তার দায়ভার বহন করে বেড়াবেন সারাজীবন।কেন অপরাধীর মতো লুকিয়ে রাখবেন নিজেকে। যদি অন্যের অপরাধের জন্য সমাজ তাকে অপমানিত করেই থাকে তাহলে সেই সমাজের তার কোন প্রয়োজন নেই। এরকম ভাবনা থেকেই পরবর্তীতে মুখ খোলেন তিনি।

তবে পাশে যে কাউকে পাননি তেমনটাও নয়। তাঁর বড় মামা যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন তিনি পুরো ঘটনাটা মামাকে জানান।ওই অবস্থাতে জানতে পেরেও বড় মামা তাকে উৎসাহ দিয়েছিলেন। মামার উৎসাহটাকে পরবর্তীতে তিনি সামনে চলার অনুপ্রেরণা হিসেবে কজে লাগান।  

অবশেষে তাঁর দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের ফলও তিনি পেয়েছেন।স্বাধীনতাযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১০ সালে তিনি স্বাধীনতা পদক পান। আর ২০১৬ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা খেতাব দেয়। এছাড়াও তিনি দেশী, বিদেশী আরো নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন। 

১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত তিনি ইউএনডিপি, ইউএনআইসিইএফ, এফএও, কানাডিয়ান দূতাবাস প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন। 

২০১৭ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই মহিয়সী নারীর জীবনাবসান ঘটে। তবে তিনি চলে গেলেও নারী জাতির জন্য রেখে গেছেন এক সাহসিকতার নিদর্শন। যা পরবর্তী নারী প্রজন্মকে সাহসিকতার সাথে পথ চলতে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

আজ তার জন্মদিন উপলক্ষে গ্যালারী চিত্রক তার শিল্পকর্ম নিয়ে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্মরণ সভার আয়োজন করেছে।

উইমেননিউজ২৪।কম পরিবারের পক্ষ থেকে এই গুণী ও নিবেদিতপ্রাণ নারীর জন্মদিনে রইলো শুভেচ্ছা, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।