ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ২০:০৯:১২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

বিলুপ্ত মেটে তিতির দেখা মিলেছে

দিলরুবা খাতুন | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১২:৪৫ পিএম, ১৬ অক্টোবর ২০১৮ মঙ্গলবার

মেটে তিতি

মেটে তিতি

‘আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ’ (আইইউসিএন) এর প্রতিবেদনে ‘মেটে তিতি’ পাখিটিকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ থাকলেও তার দেখা মিলেছে। কুষ্টিয়ার গড়াই নদী সংলগ্ন হরিপুর চরে এই মেটে তিতিরের সন্ধান পেয়েছে ‘কিচির মিচির’ সংগঠন। সাম্প্রতিক সময়ে পাখিটির দেখা পাওয়াতে পাখি প্রেমিকদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।


‘কিচির-মিচির’ সংগঠনের বার্ডওয়াচার সদানন্দ মন্ডল জানান, বসবাসের অভাব ও পাখি শিকারিদের দৌরাত্মে মেটে তিতি পাখিটি বিলুপ্ত হয়েছিল। ফের পাখিটি দেখা মিলছে। পাখিটি বড়ই লাজুক। দৈর্ঘ্য ৩৩ সেমি, ওজন ২৭৫ গ্রাম, প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠে রয়েছে হালকা পীত, তামাটে, ধূসর-বাদামি ও বাদামি ডোরা, কালো চক্ষু-রেখা; পিঙ্গল-বাদামি চোখ, সরু কাল ডোরাকাট হয়ে থাকে এই পাখি। পাখিটির পা লালচে হওয়াতে কাশ ঘাসের লালচে কা- ও তামাটে নলঘাসের সঙ্গে অদ্ভুতভাবে মিশে যায়। উপরন্তু বুকের ধুসর ডোরাকাটা দাগগুলো যেন মাটি আর শুকনো ঘাসের সঙ্গে মিলে-মিশে একাকার। ফলে পাখিটি এমন ছদ্মবেশে ঘাসবনের মধ্যে চলাফেরা করে যে, সামনে দাঁড়িয়ে থাকলেও খুঁজে বের করতে বেশ বেগ পেতে হয়!’’


পাখিটির ইংরেজি নাম Grey Francolin, বৈজ্ঞানিক নামঃ Francolinus pondicerianus, বাংলায় মেটে তিতির। ১৬৬ বছর অতীতে তৎকালীন বেঙ্গল ইনফ্রেন্ট্রির কর্ণেল আর.সি.টিটলার এদেশ থেকে এই পাখির একটি নমুনা সংগ্রহ করেন। এরপর ২০১০ সালে আরেকটি নমুনা পাওয়া যায়। এর মাঝে পাখি বিজ্ঞানীদের কাছে এদের অস্তিত্ব নিয়ে বেশ সংশয় ছিল এবং আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)-এর প্রতিবেদনে পাখিটিকে বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে বলে (regionally extinct) উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে এই আগস্ট মাসেই রাজশাহী পদ্মার চরে ও পরবর্তীতে কুষ্টিয়ার গড়াই তীরবর্তী চরাঞ্চলে এদের পুনরায় দেখা পাওয়াতে পাখি-প্রেমিদের মনে বাংলাদেশে এদের অস্তিত্ব সম্পর্কে নতুন আশার সঞ্চার করেছি।


মেটে তিতির অতি লাজুক পাখি। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর এদের প্রজনন মৌসুম। পুরুষ পাখি জোরালো কণ্ঠে ডেকে উঠে এলাকায় তার আধিপত্যের জানান দেয় এবং স্ত্রী-পাখিকে আকর্ষণ করে। জোড়া বাঁধার পর ঘাস-পাতা দিয়ে তৈরি বাসায় সচরাচর ৮-৯টি ডিম পাড়ে, তবে একসঙ্গে ১৪টি পযর্ন্ত ডিমও কখনো বা দেখা গেছে। টানা ১৮-১৯ দিন যাবত ডিমে তা দেওয়ার কাজটি স্ত্রী পাখিই করে। পুরুষ পাখিও সেই সময়টা তার আশেপাশেই থাকে এবং বিপদ আসন্ন দেখলে ডেকে উঠে স্ত্রীটিকে সতর্ক করে দেয়। এদের প্রধান খাবার, ঘাসের ডগা, ঘাসবীজ ও পোকা-মাকড়।


‘ফাঁদ পেতে ধরা এবং আবাসস্থল ধ্বংস’-মূলত এই দু’টো কারণেই এদেশে এরা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। তবে আশার কথা হলো; লোক চক্ষুর আড়ালে থাকা পদ্মা বিধৌত কিছু চরাঞ্চলে অনুকূল আবাসস্থলের কারণে এখনও পযর্ন্ত এদের অস্তিত্ত্ব ও বিস্তৃৃতি রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিপদাপন্ন এই প্রজাতিটি সংরক্ষণের লক্ষ্যে সচেতন হওয়ার এখনই সময়, নতুবা আমাদেরই অজ্ঞতা ও অমানবিকতার শিকার হয়ে এদেশ থেকে মেটে তিতিরের চিরতরে হারিয়ে যাওয়া বিষয়টা এখন সময়ের ব্যবধান মাত্র।

সূত্র : বাসস