ঢাকা, শুক্রবার ২৯, মার্চ ২০২৪ ২০:০৪:২৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

বিশ্ব নদী দিবস আজ, নদী ও নারীর যোগসূত্র এক সুতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৫:০১ পিএম, ৬ অক্টোবর ২০১৮ শনিবার

আজ বিশ্ব নদী দিবস। এই পদ্মা, এই মেঘনা, এই যমুনা, সুরমা নদী তটে... নদীও নারীর মতো কথা কয়। নদীর সাথে নারীর যোগসূত্র এক সুতায় গাঁথা। তাই নদী দিবসে নদীকে বিশেষভাবে স্মরণ করলে নারীর বিষয়টিও মুখ্য হয়ে উঠে।

১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ রোববার বিশ্ব নদী দিবস হিসেবে পালন শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে এ দিবস পালিত হচ্ছে। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘দখল দুষণমুক্ত প্রবাহমান নদী, বাঁচবে প্রাণ ও প্রকৃতি’।

পৃথিবীতে সব ধরনের সম্পর্কের গুরুত্ব আছে। এর মাঝেও কিছু সম্পর্ক রয়েছে যার গুরুত্ব কখনও শেষ হয় না। শেষ হবারও নয়। নদীতে প্রবাহমান স্রোতের মতোই আন্দোলিত সে সম্পর্ক। সে সম্পর্ক নদী ও নারীর সম্পর্ক।

নদী ও মানুষের জীবন যেন অবিচ্ছেদ্য। নদীমাতৃক বাংলাদেশের মানুষের জন্য এ কথাটি একটু বেশিই সত্য। কিন্তু আমাদের বেশির ভাগ নদী আজ মৃতপ্রায়। এক সময়ে বাংলাদেশে ছোট-বড় প্রায় সাড়ে ১১শ’ নদী ছিল। বর্তমানে আছে ৪০৫টি। নদী না বাঁচলে বাঁচবে না বাংলাদেশ। তাই নদী নিয়ে পরিবেশবাদী ও বিশেষজ্ঞসহ সাধারণ মানুষের যত উদ্বেগ। তবে নদী রক্ষার তৎপরতা গোটা দুনিয়াজুড়েই।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী তার মায়া-মমতা দিয়ে জড়িয়ে রেখেছে এই দেশকে। নদীর সাথে দেশের অন্যরকম সম্পর্ক। অন্যদিকে একইভাবে নারী তার আবেগ, ভালবাসা দিয়ে এগিয়ে নিচ্ছে সম্পর্ককে।

নদী এবং নারী ছাড়া কবি অচল। সাহিত্যিকের কাছে দুটিই প্রেরণার। কবি জসীমউদ্দদীন তার ভগ্ন প্রেম কবিতায় লিখেছেন, প্রেমের তটিনী বড় বাঁকা সখি, বাঁকা এর পথ-ঘাট/এ দেশেতে সখি, জলের ডিঙ্গা ফেরে ডাঙ্গার বাঁট।

নদী যেমন নারীর উপমা তেমন নদীর উপমা নারী। কবি কালিদাস মেঘদূত কাব্যের নদীগুলোর রূপ-ধর্ম-বর্ণনা করেছেন তার সবটাই রমণীসদৃশ। সেই রমণীরূপ নদীর বর্ণনার অনবদ্য অনুবাদ করেছেন কবি বুদ্ধদেব বসু।

কোনো নদীর ঢেউ রূপসীর ভঙ্গির মতো,

কোনো নদী তার ঘূর্ণিরূপে নাভি দেখাচ্ছে,

কেউ বিরহে কৃশ, কারো বায়ু মিলনোৎসুক প্রিয়ের মতো চাটুকার

কারও বায়ুতে যুবতীর জলকেলির সৌরভ ভেসে আসছে,

(কালিদাস মেঘদূত, অনুবাদ বুদ্ধদেব বসু)


নদী ও নারীর মধ্যে নানাভাবেই মিল খুঁজে পেয়েছেন চিন্তাবিদেরা। উভয়ই নানাভাবে সৃষ্টির প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে। নদী এবং নারী আর্ট বা শিল্পের এক অনুসঙ্গও বটে। আবহমান কাল ধরে নদী আর নারীকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য কাব্য কথা গান। বিভিন্ন প্রবাদ প্রবচন সৃষ্টিতেও নদী আর নারী নানাভাবে প্রভাবিত করেছে মানুষকে।

নদীর ধারা বদলায়। এ পাড় ভাঙবে ওপাড় গড়বে। পুরোনো পাড় ছেড়ে নতুন পাড় খুঁজবে। নদীর নীতিই এই। তবু পুরোনো পাড়কে ভোলে না নদী। বারবার পুরোনো পাড়ে ফিরে আসে। এই যে নদীর ধারাবদল ,এপাড় ভেঙে ওপাড় গড়া এর সঙ্গে মানবজীবনের বিস্তর মিল। মানুষের জীবনের শুরু থেকে মৃত্যু পর্যন্ত ভাঙাগড়ার খেলা। আর এই ভাঙাগড়ায় নারীর অবদান অনেকটাই। নারীর জীবনে সৃষ্টি বা গড়ার আনন্দ অন্যরকম। জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে বাবামা,ভাইয়ের সাথে থাকার পর পুরনো সংসার ছেড়ে সে যায় নতুন সংসারে। তবুও সেই নারী পুরনো পরিবারের টান ভুলতে পারেনা। দুই পরিবারই তাকে ঘিরে আবর্তীত হয়।

এভাবেই নদীর সঙ্গে নারীর আর নারীর সঙ্গে নদীর সম্পর্কের ভিন্ন মাত্রা সৃষ্টি হয়। আবার নদীর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে নারীর যৌবনকে। নদীর যেমন প্লাবন আসে দুই কূল ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঠিক একইভাবে নারীর দেহে যৌবন আসে। যার তোড়ে অনেক হিসেবনিকেশ উল্টে যায়। আর তাই নদীর বাঁকের সঙ্গে নারীর যৌবনের বাঁকেরও মিল খুঁজে ফিরেছেন কবি, শিল্পী আর সাহিত্যপ্রেমীরা। নারীর যৌবনের জোয়ারে প্রেম ভালবাসার পালা নিয়েও রচিত হয়েছে বহু কবিতা, গান আর কথাসাহিত্য।

দুই কূল প্লাবিত নদীর মধ্যে যেমন নারীকে দেখেন কবি ঠিক তেমনি নদীর দীর্ণ শীর্ণ শরীর, শুকিয়ে যাওয়া স্রোত, হারানো নদীর মধ্যেও বিগত যৌবনা নারীর অবয়ব ফুটে উঠে।


যৌবনবতী নারী বা বিগতযৌবনা বৃদ্ধা যেন নদীরই নানা সময়ের প্রতিরূপ। নদীর সঙ্গে নারীর যেন প্রতি পদে পদে মিল। মিল নানা বয়সের, নানা ঢংয়ের। নদী তাই কখনও যৌবনবতী নারী, কখনও চঞ্চলা কিশোরী ।

শুধু যৌবনা, বৃদ্ধা আর চঞ্চলা কিশোরীই নয়। নদী ও নারীর মিল যেন মাতৃত্বেও। নদী যেমন মায়ের মতো বুকে টেনে নেয়, জল দেয়, স্নেহ দেয়, স্নিগ্ধ করে তেমনি নারীর মাতৃত্বেও কবি দেখেন নদীকে। নারীত্বে, মাতৃত্বে, সন্তানবতী নারীতে দেখা যায় পরিপূর্ণ এক নদীরই অবয়ব। কবির ভাষায় -

সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।

(মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কপোতাক্ষ নদ)।

নারী আর নদীর মধ্যে আধুনিক কবি এতটাই মিলিয়ে ফেলেন যে নারী আর নদীকে আর আলাদা করে চিহ্নিত করা যায় না। প্রিয় নারীর জন্য যে তৃষ্ণা, প্রিয় নদীর জলে যে তৃষ্ণার তৃপ্তি ,দুটোকে এক করে নদী আর নারী চলে আসে একই সরলরেখায়।

কবিতায়, সাহিত্যে, চিত্রে, মানুষের মন ও মননে এভাবেই নদী আর নারী পাশাপাশি অবস্থান করে। এভাবেই নদী আর নারী এক হয়ে আছে সৌন্দর্য, অস্তিত্ব আর শরীরী সত্ত্বায়। দুইটিই পরস্পর পরস্পরের প্রতীক। নারীদেহের বাঁক, লাবণ্য, সৌন্দর্য ,অন্তঃস্রোত আর অন্তঃক্ষরণ নিয়ে নদীর উপমা যেন একজন নারীকে মায়া, প্রেম, প্রীতি, কাম, ভালবাসা, যৌবন আর রহস্য নিয়ে পরিপূর্ণ নদীতে প্রকাশ করেছে।

নদী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও নদীপ্রেমী সংগঠন নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। ইতিমধ্যে শনিবার বিশ্ব নদী দিবস সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, রিভারাইন পিপলসহ ৪৫টি সংগঠন ‘নদীর জন্য পদযাত্রা’ করে রাজধানীতে। দুপুরে পুরান ঢাকার বাহাদুরশাহ পার্ক থেকে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে সদরঘাট টার্মিনাল অভিমুখে ছিল ওই পদযাত্রা। এতে পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলহাজ মো. হুমায়ন কবিরসহ উল্লিখিত সংগঠনের নেতারা এতে যোগ দেন। পদযাত্রার শুরুতে ঐতিহাসিক বাহাদুরশাহ পার্কে একটি উৎসবমুখর ও বর্ণিল গণজমায়েত অনুষ্ঠিত হয়।