ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ১৩:২৮:৫১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মানুষ এখন ডাল-ভাত নয়, মাছ-মাংস নিয়ে চিন্তা করে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তীব্র তাপপ্রবাহ, সতর্ক থাকতে মাইকিং ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রথম ধাপ আজ শুরু জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেফালী রানী: সাহসী এক যোদ্ধা

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:৪৯ পিএম, ৫ মার্চ ২০২১ শুক্রবার

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেফালী রানী

বীর মুক্তিযোদ্ধা শেফালী রানী

ঝালকাঠি জেলার অজপাড়া গাঁয়ের এক অতি সাধারণ কৃষক পরিবারের সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেফালী রানী। নিজের দৃঢ় মনোবলের কারণে বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরিয়ে মহাবিদ্যালয়ে পা দেন সাহসী এই নারী৷ ঠিক এ সময়ই দেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।  
১৯৭১ সালে চাখার এ কে ফজলুল হক কলেজের ছাত্রী ছিলেন শেফালী৷ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করলেও মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় পরীক্ষা হয়নি৷
এ সময় তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পর আত্মীয় স্বজনের সাথে কলকাতায় চলে যান শেফালী৷ সেখানে গিয়ে চিকিৎসা সেবা এবং অস্র চালানোর প্রশিক্ষণ নেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ের ঘটনা জানিয়ে শেফালী রানী বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল অনেক৷ এর মধ্যে আমাদের বাড়িতে একদিন ২০/২৫ জন অতিথি এসে হাজির৷ আমি সবার জন্য চুলায় ভাত চাপিয়েছি৷ ঠিক এই মুহূর্তেই গুলির আওয়াজ৷ এমনকি আমাদের ঘরের ভেতর পর্যন্ত গুলি আসতে লাগলো৷ তখন পাশের বাগানের মধ্যে ভাতের হাঁড়ি লুকিয়ে রেখে আমরা দূরে গিয়ে আশ্রয় নিলাম৷ এক সময় এমন অবস্থা হলো যে, আমরা পেয়ারাবাগানে মাটির নিচে বাঙ্কার করে থেকেছি দিনের পর দিন৷’
তিনি আরও বলেন, ‘লুকানো অবস্থায় ১৮/২০ জন মিলে দলবেঁধে পরিকল্পনামাফিক অপারেশনে বের হতাম আমরা৷ খাবার সংগ্রহ করতাম। মানুষজনদের খাবার ও ওষুধসহ নানা জিনিস পৌঁছে দিতাম। অনেক সতর্কভাবে ও গোপনে এ কাজগুলো আমাদের করতে হতো।’
তিনি বলেন, ‘একদিন বাঙ্কার থেকে ২০ হাত দূরে আমরা পাক বাহিনীর কিছু সদস্যকে দেখতে পেলাম। তাদের কণ্ঠস্বরও শুনতে পাচ্ছিলাম৷ তবে সৌভাগ্যবশত সেদিন তারা আমাদের বাঙ্কার পর্যন্ত আসেনি৷'
কিছুদিন পর কলকাতা গিয়ে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের কার্যালয় খুঁজে বের করেন তিনি৷ সেখানে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী এবং মতিয়া চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণে নিজের আগ্রহের কথা জানান৷
শেফালী রানী বলেন, ‘আট দিন ধরে পায়ে হেটে কলকাতায় পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেই৷ কলকাতায় ডা. বিধানচন্দ্র রায় একটি বাংলাদেশ অফিস খুলেছিলেন৷ আমি সেখানে রোজ যেতাম৷ সেখান থেকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে যেতে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সাথে সাক্ষাৎ করি৷ তিনি আমাকে পরের দিন অভিভাবক সাথে নিয়ে মহেন্দ্র রায় লেনের একটি ঠিকানায় যেতে বলেন৷ তবে তিনি থাকতেন থিয়েটার রোডে৷ তার লিখে দেওয়া ঠিকানা অনুসারে পরের দিন আমি গোবরা প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে হাজির হই৷ সেখানে আমাদের প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। পরে আত্মরক্ষার জন্য বন্দুক চালনা থেকে শুরু করে নানা কৌশল শেখানো হয়৷’
শেফালী রানী আরও বলেন, ‘এই প্রশিক্ষণ শিবিরে প্রায় সাড়ে তিনশ' নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হলে মেয়েদের একেকটি ব্যাচকে একেক জায়গায় কাজে পাঠানো হতো৷ ওখানে আমাদের হোস্টেল সুপার হিসেবে ছিলেন মতিয়া চৌধুরী৷ আমাদের ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হলে পরের দিন একটি হাসপাতালে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়৷ কিন্তু সে দিনই বিজয় মিছিল শুরু হয়ে যায়৷ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়৷ আমরা তখন মহেন্দ্র রায় লেন থেকে বিজয় মিছিল করে ধর্মতলা পর্যন্ত গিয়েছি৷ এ সময় মতিয়া চৌধুরী আমাদের সাথে মিছিলে ছিলেন৷'
দেশ স্বাধীন হলে ঝালকাঠিতে ফিরে আসেন শেফালী। চাখার এ কে ফজলুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হন৷ এরপর তার বিয়ে হয়৷ তিনি যশোরে এবং ডুমুরিয়ায় দুটি উচ্চ বিদ্যালয়ে বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেন৷ তবে বাবা ও স্বামীর অনিচ্ছার কারণে এক সময় শিক্ষকতা ছেড়ে দেন৷ এরপর সংসার জীবনেই তাকে পুরোপুরি মনোযোগ দিতে হয়েছে৷
দেশ স্বাধীন হওয়ার তিন দশক পরে তিনি ১৯৭১ সালে পাওয়া কাগজপত্র নিয়ে সরকারি দপ্তরে যোগাযোগ করেন শেফালী রানী। পরে ২০০৬ সাল থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন৷ ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ নারী মুক্তিযোদ্ধাকে সন্মাননা পদক দেওয়া হয়৷ সেখানে অন্যান্যের সাথে শেফালী রানীকেও সম্মাননা পদক দেওয়া হয়৷
১৯৫৪ সালের ১০ অক্টোবর ঝালকাঠিতে জন্ম গ্রহণ করেন শেফালী রানী৷ তার বাবা রাখাল রায় এবং মা জ্ঞানদা রায়৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে।