ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১১:৪৮:১৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

ভারতের বিদায় ও মার চেয়ে মাসির দরদ বেশি

মাকসুদা লিসা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৩১ পিএম, ১১ জুলাই ২০১৯ বৃহস্পতিবার

মাকসুদা লিসা

মাকসুদা লিসা

ভারতের পরাজয়। আবার প্রমান করিল যে, ক্রিকেটে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ভারত ছিটকে গেল ফাইনালের রেস থেকে। ক্রিকেট আমেজ বলতে গেলে এখানেই নিদ্রায় শায়িত হলো। নিভে গেল ক্রিকেটের উত্তাপ। উত্তেজনা। সমাপ্তি ঘটলো উৎকণ্ঠার।

একে একে এশিয়ার দলগুলো ছিটকে গেল সেমিফাইনাল ও ফাইনাল থেকে। বাংলাদেশ নেই। পাকিস্তান নেই। শ্রীলংকা নেই। আর আফগানিস্তান। এই দলটি আত্মবিশ্বাস প্রচন্ড। কম সময়ে নিজেদের পারফর্মম্যান্স দিয়ে সমীহ আদায় করে নিয়েছে ক্রিকেট অঙ্গনে। আফগানরা সেমিফাইনালে উঠলে সেটি হতো বড় চমক।

আফগানরা বড় কথা বলেছে। কিন্তু শেষতক যারা যোগ্য দল তারাই টিকে আছে বিশ্বমঞ্চে।

ক্রিকেট খেলাটা ইংল্যান্ড আবিস্কার করলেও, ইউরোপের চেয়ে এশিয়ায় ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা বেশি। এ অঞ্চলের মানুষের ক্রিকেট প্রেম অসাধারণ। ক্রিকেট আনন্দ বলেন, উচ্ছাস বলেন, আলোচনা, সমালোচনা সবকিছুতেই এগিয়ে আছে এশিয়ার ক্রিকেট পাগল সমর্থকরা। ক্রিকেট দিয়েছে তারকা মহাতারকা। খ্যাতি। জনপ্রিয়তা।

একজন শচীন ভক্ত যেমন পারেন আত্মহুতি দিতে। বিরাট কোহেলী, এমএস ধোনীর ভক্তরা অনশনে নামেন। তেমনি শাহিদ আফ্রিদির মত গ্ল্যামার বয়ের জন্য লাখ লাখ তরুণী পাগল হয়ে প্রেমে হাবুডুবু খান। আমাদের সাকিব, মাশরাফি,তাসকিন, সাব্বিররাই বা বাদ যাবেন কেন! বাংলাদেশের জনগণের ক্রিকেট প্রেম প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বে। ক্রিকেট এখন বাঙ্গালিদের অহংকার ও অলংকার।

এই সবই সম্ভব হয়েছে এদেশের মানুষের ক্রিকেট প্রেমের কল্যাণে।

ভারত প্রসঙ্গঃ ভারত সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে। শোচনীয় পরাজয়। ভারতের মত শক্তিশালী দলের ছিটকে যাওয়াটা এক অর্থে বেদনার। ফাইনাল খেলা ও চ্যাম্পিয়ন হবার মত যোগ্য দল ভারত। বিরাট কোহেলী দলের বিদায়ে বিশ্বকাপের আমেজ, উত্তেজনা ক্রিকেট বাণিজ্য থমকে গেল।

ক্রিকেট আসর এখন এক অর্থে অ্যাশেজ সিরিজে আদল পাচ্ছে। মুখে যুদ্ধ। কথায় যুদ্ধ। আদতে ম্যাড়ম্যাড়ে। উত্তাপহীন। হইহুল্লোড়হীন এক ফাইনাল দেখবে বিশ্ব।

সেমিফাইনালে বাংলাদেশের প্রায় অধিকাংশ মানুষ সাপোর্ট করেছে নিউজিল্যান্ডকে। এর কারণ অজানা নয় কারো। কেন ভারত অনিহা! গত কয়েক বছরে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারত। বিশ্বকাপ আসরে ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে চলে স্নায়ুযুদ্ধ। মাঠে ও মাঠের বাইরে বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট
রুপ নিয়েছে শক্তি পরীক্ষার ডামাডোলে। মাঠে উভয় দলের ক্রিকেটাররা যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনুভব করেন। তেমনই করেন উভয় দেশের সমর্থকরাও। বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে এক সময় যে উত্তাপ ছিল। বারুদের গন্ধ ছড়াতো। সেই উত্তাপ এখন বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচে দেখতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশ বিশ্ব ক্রিকেটে শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে বলেই এটি সম্ভব হয়েছে।

সেমিফাইনালে ভারতের পরাজয়ে বাংলাদেশের সমর্থকরা আনন্দিত হয়েছে। খুশি হয়েছে। উল্লাস প্রকাশ করেছে। এফবিতে স্ট্যাটাস দিয়ে তাদের আনন্দ মন খুলে লিখেছেন।
খেলাধুলার আমেজ নির্ভর করে সমর্থকদের উপর। হোক ফুটবল কিংবা ক্রিকেট। দল ও সমর্থক বিভক্ত থাকবেই।
এদেশে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দলের যে পরিমান পাগল সমর্থক আছেন পৃথিবীর আর কোন দেশে ফুটবল নিয়ে এত মাতামাতি, রেশারেশী আর কোথাও দেখা যায় না।
কিন্তু অস্বাভাবিক লাগছে, ভারতকে সমর্থণ না করায় যারা এই উল্লাস, আনন্দকে ভিন্ন চোখে দেখছেন। তাদের অতিরঞ্জিত কথন দেখে। তাদের মায়া কান্নায়।

এখানে ভারত বিদ্বেষ খোঁজার চেষ্টা করছেন অনেকেই। 'ভারত মাতা ছাড়া বাংলাদেশের চলে না’- বলে উদাহরণের ভান্ডার খুলে দিয়েছেন। বাঙ্গালীদের কৃতজ্ঞতা বোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। খেলার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন ভিন্নকিছু।

ভারতকে সমর্থন করেনি বাংলাদেশীরা। নিউজিল্যান্ডকে সমর্থন কেন। সেই উত্তরও সহজ। বিগত কয়েক বিশ্বকাপ আসর, এশিয়া কাপ, নিদাহাস ট্রফি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। নানা ইস্যু নিয়ে মাঠে ও মাঠের বাইরে আলোচনা। সমালোচনা। উত্তাপ। ভারতীদের নাক উঁচু মনোভাবও আর এক প্রধান কারণ। ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের মাঠের আচরণ। বাংলাদেশকে পাত্তা না দেবার প্রকাশ্য আচরণ। ভারতীয়দের কথায় ও শারীরিক ভাষায় ফুটে উঠে। ভারতীয় সমর্থকদের আক্রোশ।

মূলতঃ এসব কারণেই ভারতের পরাজয়ে বাংলাদেশী জনগণের আনন্দের মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আর ভারতের কাছে টাইগারদের বার বার পরাজয়ের তীব্র বেদনাতো আছেই। এসব কারণেই বাংলাদেশী জনগণের সমর্থন বঞ্চিত হয়েছে ভারত।

ভারতের পরাজয় ও নিউজিল্যান্ডকে সাপোর্ট করাতে যারা মায়া কান্না কাঁদছেন। যাদের দরদ উপচে পড়ছে তাদের জন্য একটি উদাহরণ টানতে চাই।

বাংলাদেশের অভিষেক টেস্ট খেলে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর। ঐতিহাসিক টেস্ট খেলে বাংলাদেশ ও ভারত । গত ১৬ বছরে ভারতের বিপক্ষে ৫টি সিরিজে ৮টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। অথচ দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচিতে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬ বছর ২ মাস ২৯ দিন!

এতে কি প্রমাণিত হয়নি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে পাত্তা দিতে চায় না ভারত। শক্তিশালী দল। বড় দল। তাই ফিরতি সিরিজ আয়োজনে চলেছে গড়িমসি। ক্রিকেট মোড়ল বলে কথা। তারা যেমন চাইবে তেমনই হবে।

বিগত সময়ে অনেক উপকারই ভারত বাংলাদেশকে করেছে। সেটি দেশ ভাগের ক্ষেত্রেই হোক আর ক্রিকেটদের উন্নয়নেই হোক। অস্বীকার করার উপায় নেই। বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার সমর্থক ছিল ভারত। আইসিসি’র ভেতরে, বাইরে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার জন্য জোর লবিং করেছে বিসিসিআই। কিন্তু তাই বলে দাদা’দের এত তোষামোদী করারও কোনো কারণ খুঁজে পাই না।

যার যে দল ভাললাগে সেই দলকেই সে সমর্থন করবে। খেলা খেলাই। এখানে অনেক আলোচনা যেমন থাকবে তেমনি সমালোচনাও থাকবে। ট্রল হবে। বাড়াবাড়ি যে হয় না তা বলবো না।

তাই বলে, গায়ে পড়ে নিজেরা নিজেদের সম্প্রদায়কে দোষারোপ করবেন! ‘ভারত ছাড়া আমাদের এক পা’ও চলে না’ বলে উদাহরণ টানবেন। লজ্জা দেবার চেষ্টা করবেন। এটি কোন দেশপ্রেমে পড়ে! আপনাদেরই বা এত প্রিত হবার কারণ কি!

ক্রিকেটকে ক্রিকেটীয় নজরেই রাখুন। খেলা শেষ সব শেষ। কেন নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছুড়াছুঁড়ি!

৥ লেখক : সাংবাদিক।