ঢাকা, শুক্রবার ১৯, এপ্রিল ২০২৪ ৫:২৫:১৯ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই দেশ আরও উন্নত হতো টাইমের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় বাংলাদেশের মেরিনা নান্দাইলে নারী শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া কারাগার থেকে সরিয়ে গৃহবন্দী অবস্থায় সুচি কৃষকরাই অর্থনীতির মূল শক্তি: স্পিকার মধ্যপ্রাচ্যের দিকে নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ভ্রমণকাহিনি: চায়ের দেশ শ্রীমঙ্গলে একদিন

আফছানা খান নিশা | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০২ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২০ সোমবার

যতদূর দৃষ্টি যায় মসৃণ সবুজে ছাওয়া উচুঁ-নিচু টিলা, উপরে বিস্তৃত নীল আকাশ। এদিক-ওদিক তাকালেই চোখে পড়ে সবুজ বনাণী আর বর্ণিল সব পাখি। চা বাগান, লেক, হাওর, উঁচু-নিচু পাহার, গ্যাসকূপ, আনারস—সব মিলেয়ে অদ্ভুত সুন্দর এই স্থানটির নাম শ্রীমঙ্গল।

পত্রিকা ও টেলিভিশনের মাধ্যমে শ্রীঙ্গল সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকলেও সামনে দেখার সুযোগ আসায় তা হাতছাড়া করতে চাইনি। যেই চিন্তা সেই কাজ। বেরিয়ে পড়লাম প্রকৃতির টানে। 

রাজধানীর বনানী স্টার কাবাবের সামনে থেকে ভাড়া করা একটি হায়েজ গাড়ি নিয়ে সকাল সাড়ে ৯টায় রওনা হলাম সপরিবারে। দুপুর আড়াইটা নাগাদ শ্রীমঙ্গলে প্রবেশের সময় জানালা দিয়ে দেখছিলাম সবুজের সমারোহ। রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট উঁচু-নিচু ভূমিতে চা বাগান,মাঝে কিছু আনারস বাগান, সেই সঙ্গে কিছু কলা বাগানেরও দেখা মিলল।রাস্তা সমতল নয় বলে বেশ বিপজ্জনক। যেতে যেতে বিশাল জায়গা জুরে নির্মিত দুটো গ্যাস ফিল্ড দেখলাম।এখানে ঘর-বাড়ি,দোকানের সংখ্যা খুবই কম।বিস্তৃত জায়গাজুড়ে শুধুই চা বাগান।

এখানে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজের মেলা।চারদিকের চা বাগান দেখে মনে হবে প্রকৃতি যেন তার সবটুকু রূপ ঢেলে দিয়েছে। বিকেল ৩টার আগেই আমাদের জন্য সংরক্ষিত আমতলী নেচার রিসোর্টে (মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানার কাছে) গাড়ি প্রবেশ করল। সেখানে গিয়ে দেখলাম সরু রাস্তা, দুপাশে চা বাগান শ্রমিকরা ব্যস্ত পাতা তোলার কাজে। নিচ থেকে অনেকটা খাড়াভাবে গাড়ি উপরের দিকে উঠল পাহারের মাথায়। উচুঁতে বিশাল জায়গা, সেখানে তিনটি ঘর রয়েছে।অনেকটা বাংলো বাড়ির মতো বিল্ডিং। উপরে ছন আর রঙ্গীন টিনের ছাদ, টাইলস করা মেঝে।

পর্যটকদের দেখভালের জন্য চারজন লোক ছিলেন।আমাদের রিসোর্টি ছিল দুই কক্ষ বিশিষ্ট, সঙ্গে অ্যাটাস্ট বাথরুম।প্রতি রুমে দুটি বেড, ছয় চেয়ার বিশিষ্ট ডাইনিং টেবিল, এসি, গিজার, টিভি, ফ্রিজসহ সব ধরনের সুবিধাই রয়েছে।রুমের বাইরে ছন দিয়ে তৈরি করা ঘর,পাশে দোলনা। পেছনে বিশাল খাদ নিচু জঙ্গলের মতো।সামনে ছিল সরু রাস্তা আর পাশে নিচু স্থানে ছিল শুন্য মাঠের মতো জায়গা সেখানে বিশাল চাপাতা প্রস্তুতকারী ফ্যাক্টরি। মেশিনের শব্দ শোনা যায় উপর পর্যন্ত।

চা বাগানের ভেতরে পাহারের উপরে রিসোর্ট।আশেপাশে কোনো লোকজন নেই শুধু রিসোর্টের লোক ছাড়া।সন্ধ্যা হওয়ায় সেদিনের মতো আর কিছু দেখা হয়নি।রাত ৮টার দিকে হঠাৎ রুমের ছাদে বিষাক্ত সাপের দেখা মেলে। লোক ডেকে এনে সেই সাপ মারা হয়।পর্যটকদের জন্য বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যেকোনো মুহূর্তে সাপের দেখা মেলাটা এখানে স্বাভাবিক।

পরের দিন সকাল ৬টায় উঠে রুমের বাহিরে গিয়ে দেখলাম কুয়াশার চাদরে ঘেরা চারিদিক এ যেন আরেক সাজেক।ঘাসগুলো ভেজা,আবছা আলো।কিছুক্ষণ পর আলো ফুটে উঠলেই সকাল ৮টায় নাস্তা করলাম,এখানকার চায়ের স্বাদ অতুলনীয়।নাস্তা শেষে আবার বেরিয়ে পড়লাম, গন্তব্য মাধবপুর লেক (কমলাগন্জ, মৌলভীবাজার)।পুরো যাত্রাপথে চা বাগানই দেখেছি পথের দু’ধারে। দেখেছি ঝোলা কাঁধে ঘুরে বেরানো সাপুরে, শ্রমিকরা কাপরের থলিতে করে খাবার নিয়ে যাচ্ছে, মাথায় গামছা দিয়ে পিঠে কাপরের ঝোলা নিয়ে চা পাতা তোলায় ব্যস্ত নারীরা।

মাধবপুর লেকে ঢোকার জন্য টিকিটের প্রয়োজন নেই। ঢোকার পর দেখলাম লাল মাটির উঁচু-নিচু রাস্তা, দুপাশে বাগান, শেষ মাথায় ছোট্ট একটি পাহার সেখানে চা বাগান,ডান পাশে লেক যা প্রায় শুকিয়ে গেছে,বামে নিচুতেও বিস্তৃত জায়গাজুড়ে শুধু চা বাগান।এখানে গেটের পাশেই রয়েছে দোকান। পর্যটকরা চা পাতা কিনতে পারেন এখান থেকে।এখানে কিছু গাইড আছে যারা আপনি না চাইলেও সঙ্গে ঘুরে ঘুরে আপনাকে সব দেখাবে। তাদের ব্যবহার খুবই ভালো। ঘোরা শেষে অল্প কিছু টাকা দিলেই তারা খুশি।পর্যটকদের জন্য টয়লেটের ব্যবস্থাও আছে।তবে, ঢাকার মতো এখানেও ভিক্ষুকের সংখ্যা ব্যাপক।

এরপর রওনা হলাম বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান জাদুঘর দেখব বলে।২০ কিলোমিটার পথ।এখানেও টিকিটের প্রয়োজন নেই।প্রবেশ পথের দু’ধারে সারি সারি গাছ সবকিছুই চমৎকারভাবে সাজানো।এখানে রয়েছে জাদুঘর,চা বাগান,পুকুর। খুব বেশি ভেতরে যাবার অনুমতি নেই।

এখানে কিছুক্ষণ ঘুরে রওনা হলাম ২৫ মিটার দূরুত্বে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান (কমলগঞ্জ,মৌলভীবাজার) দেখার উদ্দেশে।এখানে গেটের পাশেই রয়েছে সুস্বাদু ফলের (ডাব,পেঁপে,আনারস) দোকান। দামেও বেশ সস্তা এসব ফল।টিকিট আবশ্যক এখানে।জনপ্রতি ৫০ টাকা। পথের দুপাশে রয়েছে বিভিন্ন গাছের সারি।বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণির দেখা মিলবে এখানে।অদ্ভুত ধরনের শব্দ শোনা যায় অবিরত।কিছু খাসিয়া পুঞ্জি ,পাহারী ছরা আছে এ ছাড়া এখানে পানের চাষ করা হয়।এক পাশে আনারস,চা,লেবুর বাগানও রয়েছে। পুরোটা দেখতে হলে অনেক হাঁটতে হবে।

তিনটি স্থান ঘুরে দুপুরে দেড়টার দিকে রিসোর্টে ফেরার সময় চা বাগানে ছবি তোলার ফাঁকে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়-ব্রিটিশ কোম্পানির মালিকানাধীন সময়ে যেভাবে বাগান করা হয়েছিল এখনো সেই বাগানই রয়ে গেছে,এখানে নতুন করে আর কোনো বাগান হয়নি।একটি চা গাছ তৈরি হতে চার বছর সময় লাগে নার্সারিতে। এরপর পাঁচ বছর থাকে বাগানে।সর্বমোট নয় বছর লাগে গাছ পূর্ণাঙ্গ হতে, তারপর চা পাতা তোলার উপযোগী হয়।পাতা তোলার পর গাছ মারা গেলে তখন ছেটে দেওয়া হয়।বর্ষার মৌসুমে নতুন পাতা হয়।বাগানের ভেতর ঢুকতে নিষেধ করে শ্রমিকরা। বড় বড় সাপ আছে এই বাগানগুলোতে।

(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এক শ্রমিক জানান, চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক ১২০ টাকায় ২৩ কেজি চা পাতা তোলার জন্য কাজ শুরু করেন যদিও তা সম্ভব হয় না কিন্তু কর্তৃপক্ষ থেকে চাপ থাকে এবং কম পাতা তুললে প্রাপ্য মজুরি থেকে কেটে নেওয়া হয়।

শ্রমিকরা সবাই হিন্দু ধর্মালম্বী।তাদের জীবন-যাএার মান খুবই অনুন্নত এবং সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত।তাদের শিক্ষা-চিকিৎসা ব্যবস্থার অবস্থাও করুন।প্রতি সপ্তাতে চা বাগান থেকে যে পরিমাণ রেশন পায় তা দিয়ে কোনোমতে দিন পার করেন তারা।সারা দিন কঠোর পরিশ্রমের মধ্য রয়েছে সাপের উপদ্রব। যদিও আশেপাশে সাপুরে থাকে সবসময়ই,তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ থেকে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা নেই।বংশ পরম্পরায় করে যাচ্ছেন চা পাতা তোলার কাজ।

এরপর ফেরার পালা। দুপুরে খাবার খেয়ে বিকেল ৪টায় রওনা হলাম ঢাকার উদ্দেশে। পর্যটকদের জন্য উপযুক্ত জায়গা শ্রীমঙ্গল।চারপাশে চা বাগান মাঝে সরু খাড়া রাস্তা উঁচু টিলার ওপর রিসোর্ট।পর্যটকদের জন্য সমস্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।রিসোর্টের ভেতরেই আছে চায়ের ফ্যাক্টরি।কিছু আছে মালিকানাধীন আর কিছু লিজে নেওয়া।রয়েছে অনেক চা কোম্পানি এবং গ্যাস ফিল্টার। রাস্তা ব্যবস্থাও চমৎকার।সবকিছুতেই উন্নয়নের ছোঁয়া, শুধু চা শ্রমিকরাই অবহেলিত।

যেমন খরচ হবে

•    ২ দিন গাড়ি (১০ সিটের) ভাড়া- ১৩ হাজার ৫০০ টাকা
•    ২ দিন রিসোর্ট ভাড়া-১১ হাজার টাকা (সময় ১২.০০-১২.০০)
•    প্রতি বেলার খাবার ৪৭৫ টাকা (জনপ্রতি) 
•    চা ৩০ টাকা কাপ (রিসোর্টে)
•    রিসোর্টেও চা পাতা বিক্রি করে। মূল্য ৫০০ টাকা কেজি।