ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৫, এপ্রিল ২০২৪ ১১:৫১:১৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

মহান মে দিবস ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: বনশ্রী ডলি

বনশ্রী ডলি | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৩২ পিএম, ২৬ মে ২০২০ মঙ্গলবার

মহান মে দিবস ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: বনশ্রী ডলি

মহান মে দিবস ও অন্যান্য প্রসঙ্গ: বনশ্রী ডলি

ইউরোপে রেঁনেসাঁসের সঙ্গে শিল্প বিল্পবের ধারায় মানুষ জমির বন্ধন থেকে মুক্ত হয়ে কলখানার শৃঙ্খলিত বন্ধনে আবদ্ধ হল। সেখানে তারা শ্রমিক নামে অমানবিক শোষণের শিকার হতে শুরু করে। গোড়ার দিকে আমেরিকায় শ্রমিকরা কর্মঘন্টাকে আট ঘণ্টা করার জন্য আন্দোলন শুরু করে, কারণ তখন সুর্যোদয়ের আগে শ্রমিকদের কারখানায় ঢুকতে হতো, ডেরায় ফিরতে হতো গভীর রাতে।

১৮০৬ সালে ফিলাডেলফিয়ায় জুতা কারখানার শ্রমিকরা যখন কর্মঘণ্টা কমানোর দাবিতে ধর্মঘট করে, তখন শ্রমিকদের ১৬ ঘন্টা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২০ বা ২২ ঘন্টাও কারখানায় খাটতে বাধ্য করা হতো। মূলত শ্রমিকদের কর্মঘন্টা আট ঘন্টায় নামিয়ে আনা এবং মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মে দিবসের জন্ম।

কর্মঘন্টা কমাবার জন্য ১৮২০ থেকে ১৮৪০ সাল পর্যন্ত অসংখ্য শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছে। দিনে ১০ ঘন্টা কাজের নিয়ম চালু করার দাবিতে ১৮২৭ সালে ফিলাডেরফিয়ায় মেকানিকদের উদ্যোগে গড়ে উঠে বিশ্বের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন। এরপর ১৮৫০ সাল থেকে দেশে দেশে শ্রমিকরা সংগঠিত হতে শুরু করে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অশান্ত হয়ে উঠতে থাকে শ্রমিক শ্রেণি। সেসময় বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারা শ্রমিক শ্রেণিকে সংগঠিত হওয়ার শক্তি যোগায়। দুনিয়া কাঁপানো স্লোগান উঠে ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও’। ওই উদাত্ত আহ্বানে শ্রমিক শ্রেণি আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে উঠে।

১৮৬৬ সালে আমেরিকার বাল্টিমোরে ষাটটি ট্রেড ই্উনিয়নের প্রতিনিধি মিলিত হয়ে প্রতিষ্ঠা করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম শ্রমিক ফেডারেশন ‘ন্যশনাল লেবার ইউনিয়ন’, এবং দিনে আট ঘন্টা কাজের নিয়ম চালুর প্রস্তাব গ্রহণ করে। আট ঘন্টা কাজের প্রস্তাবটি সেবছরই অনুষ্ঠিত প্রথম জেনেভো কংগ্রেসেও গৃহীত হয়।

১৮৬৬’র শ্রমিক আন্দোলন নানা বাধা পার করেছে অনেকগুলো বছর। ১৮৮৪ সালে আমেরিকায় আবারও শ্রমিকরা আট ঘন্টা কাজের দাবিতে চূড়ান্ত আন্দোলনের নামে। তাদের দাবি ছিল ৮ ঘন্টা কাজ, ৮ ঘন্টা ঘুম ও বিশ্রাম আর বাকি ৮ ঘন্টা নিজের মতো করে কাটানো।

কিন্তু কারখানার মালিক প্রভুদের তা কিছুতেই মনঃপুত হয়নি। দাবি না মেনে উল্টো শ্রকিদের ওপর চলে স্টিম রোলার।  কিন্তু শ্রমিকরা তাদের দাবিতে অনড়। ১৮৮৬ সালের পহেলা মে ( ১ মে)  দাবি আদায়ে শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে, শিকাগোতে শহরে বিশাল সমাবেশ হয়। আন্দোলন চূড়ান্ত রূপ নেয়।

৩ মে আমেরিকার শিকাগো শহরে ধর্মঘটি শ্রমিকদের সমাবেশে পুলশের গুলিতে নিহত হন চারজন। পরদিন হে মার্কেটে এই ঘটনার প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তৃতা শেষ হতে না হতেই  বোমা বিস্ফোরিত হয়। এ সময় এক পুলিশ সার্জেন্টের মৃত্যু হয়। সেদিনের হে মার্কেটে লক্তাক্ত লড়াইয়ে নিহত হয় পুলিশসহ সাতজন। গ্রেপ্তার হয় বেশ ক’জন শ্রমিক। পরে কারাগারে আত্মহত্যা করেন এক শ্রমিক নেতা।

এরপর প্রহসনের বিচারে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দেন সংগ্রামী শ্রমিক নেতারা। ফাঁসি রদ করার জন্য রাজনৈতিক নেতা ও বুদ্ধিজীবীদের আবেদন অগ্রাহ্য করে মৃত্যুদ- কার্যকর করে সরকার। এই ঘটনায় খোদ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে আমেরিকার সরকারের বিরেুদ্ধে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠে। কিন্তু মার্কিন সরকার তাতে গা করেনি। জন্ম হয় মহান বিপ্লব ও মহান মে দিবস। এই মহান বিপ্লবের শ্র্রমিক নেতাদের মধ্যে আগস্ট স্পাইজ, আরবার্ট পারসনস, জর্জ এঞ্জেলেস ও  লুইস লিংগে, এডলফ ফিশার ছিলেন অন্যতম।

এর তিন বছর পর ১৮৮৯ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের দ্বিতীয় সভায় ‘১ মে’ কে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবস হিসেবে পালনের আহবান জানানো হয়। এরপর থেকে বিশ্বের অনেক দেশে ১ মে শ্রমিক সংহতি দিবস পালিত হয়ে আসছে। বর্তমান বিশ্বের প্রায় সব দেশে দিবসটি পালিত হয় দিবসটি।

ভারতবর্ষ ও বাংলাদেশে মে দিবস: শিকাগো শহরের শহীদ শ্রমিকদের অনুপ্রেরণায় ভারতবর্ষেও শ্রমিক আন্দোলন দানা বাঁধে। ধর্মঘট ও আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চলে। ১৯২০ সালের দিকে রেল, চা বাগান ও স্টিমার শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ব্রিটিশ শাসনকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর থেকে সূতাকলসহ বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকদের গড়ে উঠা ট্রেড ইউনিয়নগুলো মে দিবস পালনের চেষ্টা করে। কিন্তু সেসময়টাতে অধিকাংশ জায়গায় সভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় গোপনে পালিত হয়েছে দিবসটি।

এই উপমহাদেশে প্রথম মে দিবস পালন করা হয় ১৯২৩ সালে মাদ্রাজে ভারতের। আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবার কলকাতা ও পূর্ববাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) মে দিবস পালন করা হয় ১৯২৭ সালে।  ১৯৩৮ সালে নারায়ণগঞ্জে মে দিবস পালন করা হয়। পরবর্তীতে কোনো কোনো বছর দাবি আদায়ে ধর্মঘট করে মে দিবস পালন করেছে শ্রমিকরা। এরই ধারাবাহিকতায় মে দিবসে ছুটি দেওয়ার দাবি উত্থাপিত হয়।

পাকিস্তান শাসনকালে ঐক্যবদ্ধ ও আলাদা করে প্রতিবছরই দিবসটি পালিত হয়েছে সাড়ম্বরে।
মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে ১ মে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মহান মে দিবসে জাতির উদ্দেশ্য ভাষণ দেন।    

এরপর থেকে ১ মে দেশের অফিস আদালত, স্কুল কলেজসহ সব প্রতিষ্ঠানসহ সংবাদপত্রের অফিসও বন্ধ থাকে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে বিশেষ ক্রোড়পত্র। অন্য গণমাধ্যমেও প্রচার হয় বিশেষ অনুষ্ঠান। দিবসটি পালনে শ্রমিক সংগঠনসহ অন্যরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।