ঢাকা, শনিবার ৩০, মার্চ ২০২৪ ৩:৪৭:৩০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম সেতু থেকে খাদে পড়ে বাসে আগুন, নিহত ৪৫ রমজানের অর্ধেকেও কমেনি মাছ ও মাংসের দাম ঈদযাত্রা: ৮ এপ্রিলের ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে আজ বিশ্বে প্রতিদিন খাবার নষ্ট হয় ১০০ কোটি জনের বাসায় পর্যবেক্ষণে থাকবেন খালেদা জিয়া

মা শিখিয়েছিলেন নিজের রোজগার থাকা দরকার : অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম

রীতা ভৌমিক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:১৯ এএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য ফারজানা ইসলাম। অত্যন্ত দক্ষতা ও যোগ্যতার সঙ্গে তিনি চার বছরের মেয়াদ সম্পন্ন করেছেন। সম্প্রতি আবার দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করছেন। উইমেনিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন পেশা ও জীবনের নানা কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন, রীতা ভৌমিক।

 

প্রশ্ন : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য, দ্বিতীয়বারও উপাচার্যের দায়িত্ব পেলেন? আপনার অনুভূতি যদি বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : প্রথমবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পাওয়া ছিল অত্যন্ত আনন্দের ও কিছুটা ভয়ের। ভয় এজন্য ছিল এই গুরুদায়িত্ব চার বছর নিষ্ঠার সঙ্গে পরিচালনা করতে পারব কী না? দ্বিতীয়বার সেই দায়িত্ব আবার পেলাম। এবার আর ভয় আমার ভেতর কাজ করছে না। এর একটাই কারণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবাই আমার পরিচিত। এরপরও পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক বাধা বিপত্তি আসবে আমি জানি। কিন্তু কোন জায়গা থেকে আসবে, কিভাবে আসবে, কারা আমাকে সহযোগিতা করবেন, কারা করবেন না এ সম্পর্কে একটা ধারণা হয়েছে। অভিনব কিছু হতেই পারে। আমি আশাবাদী। রাষ্ট্রপতি আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন তাতে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারব।

 

প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রথম নারী প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন? শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা আপনাকে কিভাবে গ্রহণ করেছিলেন? সে সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করি ১৯৮২ সালে। এই বিভাগে ১১ জন পুরুষ শিক্ষকের সঙ্গে আমি একা নারী শিক্ষক যোগ হই। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম। তারপর আবার অবিবাহিতা। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিকূল পরিবেশ ছিল। এই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. অনুপম সেন অত্যন্ত বিনয়ী, শ্রদ্ধাভাজন ও বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ছিলেন। তিনি সুন্দরভাবে আমাকে সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। অন্যান্য বিভাগে যে কজন নারী শিক্ষক ছিলেন তারা কারও স্ত্রী ছিলেন। এই বিভাগে নারী শিক্ষকদের জন্য কোনো বাথরুম ছিল না। ছেলেদের বাথরুমে যেতে হতো। বাথরুমের সমস্যার কথা সভাপতি স্যারকে জানালাম। স্যার ছেলেদের একটি বাথরুম ঠিক করে আমাকে ওই বাথরুমের চাবি দেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা।  নারী শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে কৌতূহল নিয়ে আমাকে দেখতে আসত। আমার মতো ওরাও হিজাব পরত না।

 

প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন সময়ে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কী? যদি হয়ে থাকেন তা হলে বলুন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : আমি যে সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করি, সে সময়ে শিবিরের ছেলেদের দৌরাত্ব ছিল সাংঘাতিক রকমের। আমার জন্য সেটাও ছিল বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। আমি কপালে বড় টিপ পরতাম। এটা শিবিরের ছেলেরা মানতে পারে না। ওরা শিক্ষক কক্ষের দরজার নিচ দিয়ে আমাকে চিরকুট দেয়। চিরকুটে লেখা ছিল, ম্যাডাম আপনার সব ভালো লাগে। আপনি অসাধারণ। শুধু ওই টিপ ছাড়া। আপনার কপালের টিপটা বাদ দিতে হবে। আমি ওদের লিখেছিলাম, তোমাদের আমার খুব ভালো লাগে। আমাকে নির্দেশ দিবে না। উল্টো ওরা জবাব দেয়, আমাদের শ্রদ্ধা নষ্ট করবেন না। এমন সাহস ছিল শিবিরের ছেলেদের। এভাবে অসহযোগিতা অবকাঠামোর মধ্যে শিক্ষক, ছাত্রছাত্রীরাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। যারা আমাকে গ্রহণ করতে পারেনি তারা সংখ্যায় কম ছিল। শিবিরের কারণে মেয়ে শিক্ষার্থীরা দল বেঁধে চলাফেরা করত।

 

প্রশ্ন : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে নারী শিক্ষকদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল কী? যদি বলেন? 

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে নারী শিক্ষকদের খেলার ব্যবস্থা ছিল না। পুরুষ শিক্ষকরা ব্যাডমিন্টন খেলতেন আমি দেখতাম। ওদের খেলা দেখতে দেখতে একদিন আমি ব্যাডমিন্টন খেলতে কোটে নেমে যাই। দলে দলে শিক্ষকরা বলা শুরু করলেন, সমাজতত্ত্ব বিভাগের একজন নারী শিক্ষক ব্যাডমিন্টন খেলেন।

 

প্রশ্ন : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে জেন্ডার ভিত্তিতে নারী-পুরুষ শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য রয়েছে বলে আপনি মনে করেন কী?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের সহজ বিচরণের জায়গা এই বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের বিভেদ নেই। ১৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা তাদের পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ছাত্রদের ওরিয়েন্টেশন করা হয় ছাত্রীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সহজভাবে চলার জন্য। ছাত্রীদের আত্নসচেতন হতে হবে। আত্ননিয়ন্ত্রণ হতে হবে। নালিশ না করে নিজেদের প্রতিরোধ করার উন্নয়ন করতে হবে।

  

প্রশ্ন : বাংলাদেশের নারীদের হিজাবের প্রয়োজন আছে কি? এ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : বাংলাদেশের নারীদের হিজাব পরার প্রয়োজন নেই। নৃবিজ্ঞানের দিক থেকে দেখলে, শুধু পর্দা করার জন্য হিজাব মেয়েরা পরছে না। অনেক দেশের নারীরা কাপড়-চোপড় কম পরার কারণে হিজাব ব্যবহার করেন। একজন সুন্দর মেয়ের একা চলাফেরার সমস্যার কারণেও হিজাব পরে থাকেন।

 

প্রশ্ন : সে সময়ে অবিবাহিত নারী শিক্ষক নিয়েও আলোচনা হতো? বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট নিয়ে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : অবিবাহিত নারী শিক্ষক শিক্ষকতা করছেন এ জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। এই বিষয়টি নিয়ে এখন আর সমালোচনার ঝড় ওঠে না। কারণ নারীরা সামলে নিচ্ছেন। রীতিনীতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে খাওয়াতে অনেক সময়ও নষ্ট করেছেন নারীরা।

 

প্রশ্ন : সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করেছে? সেখানকার নারী শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় যুক্তরাজ্যের ষাট দশকের উন্মুক্ত একটি  বিশ্ববিদ্যালয়। ইংল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, ভারত, পাকিস্তান, কানাডিয়ান বিভিন্ন দেশের তেরজন ছাত্রীর একটি গ্রুপে ছিলাম। এই গ্রুপে বিচিত্র ধরনের মেয়েরা ছিলেন। তাদের মধ্যে আমি একমাত্র বিবাহিতা সন্তানসহ থাকতাম। সেক্সুয়ালিটি নিয়ে তারা স্বাধীনতা পেয়েছে। এ নিয়ে তারা খোলামেলা কথা বলত। তারা দুই-ই অনুভব করত একা থাকার আনন্দ। একা থাকার জটিলতা। নাইজেরিয়ার এক মেধাবী ছাত্রী ছিল আমাদের গ্রুপে। ও ঘানার এক ভদ্রলোককে বিয়ে করে। সেই ভদ্রলোকের আগের ঘরে ১৬-১৭ বছরের সন্তান ছিল। মেয়েটি সেই সন্তানদের দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে নেয়। ওর মধ্য দিয়ে আমার দেখার সুযোগ হয়েছে একজন নারী কিভাবে সাধ এবং দায়িত্ববোধ দুটো দিয়েই তার ব্যক্তিত্বের উৎকর্ষতা অর্জন করেন।

 

প্রশ্ন : আপনার জন্ম, বেড়ে ওঠা এক সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলিম পরিবারে। সেখানে মেয়েদের স্বাধীনতা কতটুকু ছিল বলে আপনি মনে করেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : ঢাকায় ১৯৫৮ সালে সম্ভ্রান্ত বাঙালি মুসলিম পরিবারে আমার জন্ম। বাবা আবদুল কাদের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সেক্রেটারি ছিলেন। মা ফাতেমা খাতুন ছিলেন গৃহিণী। নানা শরফুদ্দিন আহমেদ ছিলেন একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং দাদা আলহাজ সাদর আলী আমীন ছিলেন চাকরিজীবী। চাকরিজীবী পরিবার হওয়ায় একটা নিয়মের মধ্যে বেড়ে উঠেছি আমরা চার ভাই তিন বোন।

বড় ভাই অধ্যাপক ড. হেদায়েতউল ইসলাম, মেজ ভাই অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম, সেজ ভাই অধ্যাপক মঞ্জুর ইসলাম, ছোট ভাই আতিকুল ইসলাম। বোনদের মধ্যে বড় বোন হাসিনা ১৮ বছর বয়সে প্রাকটিক্যাল করার সময় রাসায়নিক তেজস্ক্রিয়ায় মারা যান। মেজ বোন রোকসানা। আর আমি ভাই-বোনদের সবার ছোট।

চতুর্থ শ্রেণী পড়ুয়া মা আমাদের ভাইবোনদের একই দৃষ্টিতে দেখতেন। ছেলেমেয়ে বলে বিভেদ করেননি। বরং আমাদের সবাইকে সমান সুযোগ দিয়েছেন। তিনি আমাদের বোনদের শিখিয়েছেন, নিজের একটা রোজগার থাকা দরকার। নিজের জন্যই জীবন নয়। নিজের দায়িত্ব নেয়ার পাশাপাশি অন্যের দায়িত্ব নিতে হয়। বিপদে অন্যকে সহযোগিতা করতে হয়। মেজ বোন বিএ পাস করে আর পড়াশোনা করেননি। কিন্তু মায়ের কাছ থেকে সংসারে সাশ্রয় করার শিক্ষাটা পেয়েছিলেন। তিনি চাকরি না করলেও জামাকাপড় সেলাই করে আত্নীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহার দিতেন। 

রোববার ছুটির দিনে বাবা আমাদের আলমারি গুছিয়ে দিতেন, নখ কেটে দিতেন।  ভাইবোনদের পড়াতেন। আমি স্কুলে পড়ার সময়ে বড়-মেজ ভাই বিলেতে পড়তে চলে যান। ছেলেবেলায় ছেলেবন্ধুদের সঙ্গে খেলতাম। গ্রিনরোড থেকে মিরপুর পর্যন্ত দেয়াল ছিল। ওই দেয়ালে ওঠে ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে দৌড়াতাম। অভিভাবকরা কখনই বলেনি ও ছেলে তুমি মেয়ে ওর সঙ্গে খেলতে পারবি না।

 

প্রশ্ন :  সে সময়ে শিক্ষা, শিক্ষকদের সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : কলাবাগান ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে ১৯৬৩ সালে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হই। ধানমণ্ডি গালর্স স্কুলে চতুর্থ শ্রেণীতে ভর্তি হই। এই স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করি। ধানমণ্ডি গালর্স স্কুলে আমি সহপাঠী হিসেবে পাই শেখ রেহানাকে।

শিক্ষকরা যেমন আমাদের প্রতি স্নেহশীল ছিলেন। তেমনি বকাও দিতেন। অঙ্ক খুব ভয় পেতাম। পরীক্ষায় ৪০ নম্বরের উত্তর দেয়ার পরই হল থেকে বেরিয়ে যেতাম। ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে একবার একজন শিক্ষক বললেন, না তুমি বের হতে পারবে না। এভাবেই তিনি আমার অঙ্ক ভীতি দূর করেছিলেন। এসএসসিতে আমি অঙ্কে লেটার পেয়েছিলাম।

একবার ড্রইং শিক্ষক ফুলে নীল রং করায় আমাকে শূন্য দিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তুই ফুল নীল রং করেছিস কেন? লাল রং দিসনি কেন? এজন্য তোকে শূন্য দিয়েছি। কিন্তু আমি স্যারকে বলেছিলাম, কেন অপরাজিতা, ধুতরা ফুলের রং তো নীল! কচুরিপানা ফুলের রং বেগুনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় পড়েছি, ‘বাতাসে দুলছে রডড্রেমের গুচ্ছ’। এই ফুলের রং নীলাভ। আমি সবসময় আলাদা কিছু করতে চাইতাম।

আমাদের ড্রইং স্যার খুবই স্নেহশীল শিক্ষক ছিলেন। আমি উপাচার্য হওয়ার পর ড্রইং স্যার আমাকে বলেছেন, আমার ওপর এখনও রাগ করে আছিস মা? শিক্ষকদের সঙ্গে এমনি স্নেহশীল সম্পর্ক ছিল আমাদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ছাত্র-ছাত্রী উভয়ের মধ্যে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হই। প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হলে রাষ্ট্রপতি সেই শিক্ষার্থীদের পাঁচটি বই উপহার দিতেন। কিন্তু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ৪৫% নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের হিজবুল বাহার প্রমোদ তরীতে মধ্য বঙ্গোপসাগরে বেড়াতে নিয়ে যায়। ছেলেবেলা থেকে ভাইদের বই উপহার পাওয়া দেখে আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম রাষ্ট্রপতির হাত থেকে সেই মূল্যবান বই পাব। প্রতিবাদস্বরূপ সেই প্রমোদতরীতে আমি যাইনি।

 

প্রশ্ন :  সে সময়কার সংস্কৃতি চর্চা সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : গ্রিন রোডের স্টাফ কোয়ার্টারের ছেলেমেয়েরা মিলে সবুজ সংঘ করতাম। একুশে ফেব্রুয়ারি সেজ ভাই আমাদের প্রভাত ফেরিতে নিয়ে যেতেন। ১৯৬৪ সাল থেকে নিয়মিত প্রভাত ফেরিতে যাই। সবুজ সংঘের সদস্য হিসেবে ছয় বছর বয়সে মুকুল ফৌজের অনুষ্ঠানে যোগ দিই। সেখানে শ্যামা নৃত্যনাট্যে বজ্রসেনের চরিত্রে পুরুষ কণ্ঠ দিই। শ্যামা যে মেয়েটি হয়েছিল কিছুক্ষণ গাওয়ার পর ও নার্ভাস হয়ে যায়। ফলে চিকন গলায় আমি একবার শ্যামার,  মোটা গলায় একবার বজ্রসেনের কণ্ঠ দিই। 

 

প্রশ্ন : আপনার গবেষণা, সম্পাদিত গ্রন্থ সম্পর্কে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সম্পাদিত বইও রয়েছে। সম্পাদিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে ‘জেন্ডার কিনশেফ অ্যান্ড ওমেন এমপ্লয়মেন্ট’, দলিত সমাজের ওপর সম্পাদিত বই ‘বাংলাদেশের দলিত সমাজ’ ইত্যাদি।

 

প্রশ্ন : স্বামী, সংসার নিয়ে যদি কিছু বলেন?

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : স্বামী মো. আখতার হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী হলেও তিনি একজন প্রাবন্ধিক। ছেলে প্রতীক তাজদিক হোসেন আউটসোর্সিং পেশায় যুক্ত রয়েছে।

 

প্রশ্ন : আপা, আপনাতে অনেক ধন্যবাদ।

 

অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম : ধন্যবাদ আপনাকে, ধন্যবাদ উইমেননিউজকে।